পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের অংশ হওয়ার আগ্রহ নেই : প্রধান উপদেষ্টা

যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার এবং কমনওয়েলথ মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ

অনলাইন ডেস্ক : পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের অংশ হওয়ার কোনও আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, তাদের কাজ হলো একটি সুচারুভাবে পরিচালিত রূপান্তর নিশ্চিত করা, যেখানে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। গতকাল বুধবার লন্ডনের চ্যাথাম হাউজের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সে তার আলোচনার পর অনুষ্ঠিত প্রশ্নোত্তর পর্বে পরবর্তী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের অংশ হওয়ার কোনও ইচ্ছা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কোনোভাবেই না, কোনোভাবেই না। আমার মনে হয়, আমাদের মন্ত্রিসভার (উপদেষ্টা পরিষদ) কোনও সদস্যই তা করতে চাইবেন না।
তিনি বলেন, তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) কাজ হলো এই রূপান্তরটি ভালোভাবে পরিচালিত হয়েছে এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় জনগণ খুশি-এ বিষয়টি নিশ্চিত করা। তিনি আরও বলেন, আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে নির্বাচনটি সঠিক হয়েছে। এটি আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সম্পর্কে আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তরুণদের হত্যা, নাগরিকদের গুম করা এবং জনগণের অর্থ চুরির অভিযোগ থাকায় এটিকে সত্যিই একটি রাজনৈতিক দল বলা যায় কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, আপনি কি তখনও এটিকে একটি রাজনৈতিক দল বলবেন? সুতরাং, এটি একটি বিতর্ক, কোনও বিচার নয়।
তিনি বলেন, তারা ভেবেছিলেন যে ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর সেই অধ্যায়টি বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে (আওয়ামী লীগের কর্মীরা) তাদের কেউই দুঃখ প্রকাশ করেননি, বরং জনগণকে উত্তেজিত করছেন। তিনি বলেন, দেশের এবং রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তার জন্য, জাতি আপাতত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবে দলটিকে নয়।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত থাকবে… যতক্ষণ না বিচার সম্পন্ন হয়। আমরা শুধু এটুকুই করেছি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অতীতে গণমাধ্যম এমন স্বাধীনতা কখনোই উপভোগ করেনি, যা এখন উপভোগ করছে।
এদিকে, কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি আয়র্কর বোচওয়ে বলেছেন, আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সংস্কারে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে আগ্রহী সংস্থাটি। গত মঙ্গলবার লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বোচওয়ে বলেন, বাংলাদেশ যদি চায়, বিশেষ করে সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য, তাহলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। বোচওয়ে বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করা আগামী পাঁচ বছরের জন্য কমনওয়েলথের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার।

তিনি আরও জানান, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সংগ্রামে সহায়তা করাও সংগঠনের অগ্রাধিকারভিত্তিক লক্ষ্য। কমনওয়েলথ ২.৭ বিলিয়ন জনগণের প্ল্যাটফর্ম উল্লেখ করে ঘানার এই নাগরিক বলেন, বর্তমানে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৮৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আগামী কয়েক বছরে তা কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, কমনওয়েলথের অনেক সদস্য রাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং এর মধ্যে অনেক দেশ আকারে অত্যন্ত ছোট। আমরা তাদের জলবায়ু অর্থায়নে প্রবেশাধিকার পেতে সহায়তা করার চেষ্টা করব।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কমনওয়েলথ মহাসচিবকে ক্রীড়া খাতে সম্ভাবনা অনুসন্ধান এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ক্রীড়া শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি একটি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও। আমরা ক্রীড়াবিদদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছি। কমনওয়েলথের স্মরণীয় হয়ে ওঠার জন্য ক্রীড়া হতে পারে একটি ভালো মাধ্যম। কমনওয়েলথ মহাসচিব জানান, চলতি মাসে তারা ঢাকায় একটি যুব প্রোগ্রাম আয়োজন করতে যাচ্ছেন। তিনি আরো জানান, কমনওয়েলথের ১.৫ বিলিয়ন জনগণ তরুণ এবং তাদের বিভিন্ন কর্মকা-ে যুক্ত করার জন্য তারা কাজ করছেন। তিনি জানান, তারা কমনওয়েলথ বৃত্তিগুলো পুনর্গঠনের পরিকল্পনাও করছেন, একটি ক্ষেত্র যা প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকালে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জনাথন পাওয়েল গতকাল বুধবার লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার হোটেলে সাক্ষাৎ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে এ তথ্য জানান।ই

মন্তব্য করুন