নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মা ও মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণ : আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার

খবর ডেস্ক :
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নে ঘরের সিঁধ কেটে ঢুকে মা-মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার প্রধান আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়েরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে জেলা শহর মাইজদী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার আবুল খায়ের সুবর্ণচরের চর ওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য।

জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর অভিযুক্ত আবুল খায়েরসহ অন্য দুই আসামি আত্মগোপনে চলে যান। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বিকেল ৪টার দিকে জেলা শহর মাইজদী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া মামলার এজাহারভুক্ত অপর এক আসামিসহ বাকি দু’জনকে গ্রেফতারে জেলা পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।

এদিকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দিবাগত রাতে সুবর্ণচরের চর ওয়াপদা ইউনিয়নে মা ও মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চরজব্বর থানায় একটি মামলা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার নারী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ওই মামলা করেন। মামলায় আবুল খায়েরসহ দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি একজনকে অজ্ঞাত হিসেবে দেখানো হয়।

চরজব্বর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার শিকার মা ও মেয়েকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য গতকাল দুপুরে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বিকেলে তাদের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া নির্যাতনের শিকার মা ও মেয়েকে ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য আজ বুধবার আদালতে হাজির করা হবে।

নির্যাতনের শিকার নারীর মায়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার দিবাগত রাতে এক ব্যক্তি সিঁধ কেটে তার মেয়ের ঘরে ঢোকেন। এরপর তিনি দরজা খুলে দিলে আরো দু’জন প্রবেশ করেন। এরপর তারা মেয়ে ও নাতনির হাত-মুখ বেঁধে ফেলেন। তাদের মধ্যে দু’জন তার মেয়েকে ধর্ষণ করেন, একজন নাতনিকে ধর্ষণ করেন। ঘটনার সময় তার জামাতা বাড়িতে ছিলেন না। তিন-চার দিন ধরে তিনি কাজে বাড়ির বাইরে ছিলেন। তিনি জানান, যে তিনজন তার মেয়ে ও নাতনিকে ধর্ষণ করেছেন, তাদের মধ্যে আবুল খায়েরসহ দুজনকে তার মেয়ে ও নাতনি চিনতে পেরেছেন।

জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দিবাগত রাতে মা ও মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর দু’জনকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আবুল খায়ের মেম্বারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ চৌধুরী। তিনি জানান, সভাপতি ব্যক্তিগত কাজের দেশের বাইরে রয়েছেন। সংগঠনের অন্য নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। যেহেতু আবুল খায়ের মেম্বার নৈতিকতাবিরোধী কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেহেতু তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। দ্রুত এটা কার্যকর করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের রাতে সুবর্ণচরে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আলোচিত ওই ঘটনার মামলার রায়ে গত সোমবার ১০ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক। এ মামলার প্রধান আসামি ছিলেন সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বার। আলোচিত মামলার রায়ের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই একই উপজেলায় আরেকটি দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেল।

মন্তব্য করুন