সারা দেশে গঠন করা হচ্ছে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক ‘ইউনিট কমিটি’
অনলাইন ডেস্ক :
দলীয় প্রার্থীদের প্রত্যেকটি নির্বাচনি কেন্দ্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির পক্ষ থেকে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) জুম মিটিং করে তাগিদ পৌঁছে দিচ্ছে। সোমবার আওয়ামী লীগ মনোনীত রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে জুম মিটিং করে সিআরআই। সরকার সমর্থক এ সংস্থাটি পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিভাগের নৌকা মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে জুম মিটিং করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, সিআরআই কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বলেন, টার্গেট রাখতে হবে প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ৫৬ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির। যদি সম্ভব না হয়, কমপক্ষে ৫০ শতাংশ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে বলেছে সংস্থাটি। বিএনপি, জামায়াত ও বাম ঘরানার কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বর্জনের মুখে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও অর্থবহ করতে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার এই কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
ভোটের দিন পর্যন্ত দলের সব ধরনের কর্মকাণ্ডকে ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসাবে ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এর আওতায় ভোটারদের কাছে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিতে চায় আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে স্থাপন করা হচ্ছে স্মার্ট কর্নার। এই কর্নারগুলোতে যারা কাজ করবেন, তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন এমন প্রশিক্ষক ইতোমধ্যে নির্বাচিত করেছে আওয়ামী লীগ। দলটি ঢাকায় ডেকে ওইসব প্রশিক্ষদেরও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট করণীয়। এ উদ্যোগের আওতায় একটি সুসংগঠিত প্রচার টিমের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে সরকারের উন্নয়ন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে। এই টিমের সদস্যদের প্রধান কাজ হবে কেন্দ্রে আসার জন্য ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করা।
জানা যায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ভোটকেন্দ্রভিত্তিক ‘ইউনিট কমিটি’ গঠন করা হচ্ছে। প্রতিটি কমিটিতে সদস্য থাকবেন ন্যূনতম ১৫০ জন। এভাবে সারা দেশে ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রের জন্য কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এসব কমিটিতে কাজ করবেন আওয়ামী লীগের প্রায় ৬৩ লাখ নেতাকর্মী। অক্টোবরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে এসব কমিটি গঠনের নির্দেশ যায়। ইউনিট কমিটির প্রধান লক্ষ্য হলো-সরকারের সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী। বিধবা, অসচ্ছল, পঙ্গু, মুক্তিযোদ্ধা যারা সরকারের কাছ থেকে নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন-তাদের ভোটকেন্দ্রে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন ইউনিট কমিটির সদস্যরা।
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রভিত্তিক ২০ সদস্যের কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনে বাধা দেওয়ার সব প্রচেষ্টাও প্রতিহত করার দায়িত্ব পালন করবে ছাত্রলীগের এ কমিটি। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ এবং যুব মহিলা লীগকে প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য অনুরূপ পৃথক কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে তারা (সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন) আওয়ামী লীগের ইউনিট কমিটিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করতে পারবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তাই ভোটের দিন কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি যে ভালো হবে সে ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই। দলীয় প্রার্থীরা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সংবাদ ভোটারদের দেবেন। এ নিয়ে গঠিত কমিটিগুলোও কাজ করছে। ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দলীয় নেতাকর্মীদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার দিন ২৬ নভেম্বর গণভবনে এক মতবিনিময় সভায় ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়ে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। শনি ও রোববার সাবেক কয়েকজন ছাত্র নেতা গণভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাদেরকেও একই নির্দেশনা দেন বলে জানা গেছে। তিনি নেতাদের বলেন, প্রতিযোগিতামূলক ভোটেই সবাইকে জিতে আসতে হবে। তাদের মধ্যে কয়েকজন দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত নেতা ছিলেন, যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় এবার প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্রে শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে। এসব কমিটি ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের সব ধরনের নাশকতার প্রচেষ্টা প্রতিহত করবে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে। তিনি জানান, শুধু নৌকা প্রতীকের পক্ষেই ভোটারদের আনা হবে তা নয়। সেখানে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী যদি থাকেন, যদি বোঝা যায় কোনো ভোটার ওই প্রার্থীর সমর্থক তাহলেও তাকেও ভোটকেন্দ্রে আনার জন্য উৎসাহিত করা হবে।
জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল যুগান্তরকে বলেন, সোমবার রাতে সিআরআই রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে জুম মিটিং করে। মিটিংয়ে প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারের তাগিদও এসেছে সেখান থেকে।