সতর্কতার সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও মানুষকে সচেতন করার নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের
অনলাইন ডেস্ক : হঠাৎই হার্ডলাইনে পুলিশ। তবে অতিমাত্রায় সতর্ক। হাসিনা সরকার-পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন নিজেদের গুটিয়ে রাখলেও সেই খোলস থেকে ক্রমেই বেরিয়ে আসছে তারা। মবের ঘটনায় অনেকে নির্দেশিত হয়ে নীরব থাকলেও বর্তমানে চড়াও হচ্ছে মব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর পাশাপাশি তাদের নিশানা থেকে বাদ যাচ্ছেন না মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরাও। পুলিশ বলছে, আন্দোলনকারীদের কাঁধের ওপর ভর করে দেশ অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে একটি মহল। নানান ষড়যন্ত্রের তথ্যও তাদের কাছে আসছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করব।
নির্বাচনমুখী পরিবেশ তৈরির দিকে আমরা দৃষ্টি রাখছি।
জানা গেছে, সোমবার ডিএমপির অপরাধ পর্যালোচনা সভায় কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি থানাভিত্তিক সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে উঠান বৈঠক আয়োজনের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি নগরবাসীর নিরাপত্তা বাড়াতে টহল কার্যক্রম জোরদারের ওপর জোর দেন।
আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপকমিশনার ও ওসিদের তৎপর থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানান, সম্প্রতি রাজধানীর ফার্মগেট, বাসাবো, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, পান্থপথ সিগন্যালসহ বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ককটেল বিস্ফোরণের পর মিছিলের প্রস্তুতির সময় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীও আটক করেছে পুলিশ। দুই সপ্তাহ আগে ডিএমপি থেকে জানানো হয়েছিল, হাসিনা-পরবর্তী সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল থেকে ৫ শতাধিক নেতা-কর্মী আটক করা হয়েছে। এর বাইরে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৭জন করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
এর বাইরে সম্প্রতি কাকরাইলে জাতীয় পার্টির অফিসের সামনে দুই দফার ঘটনায় নীরবতা ভেঙে আগ্রাসি ভূমিকায় পুলিশকে দেখে নানান আলোচনা হয়েছে।
এদিকে সোমবার রাতে গুলশান, বারিধারা, বনানী এ তিন কূটনৈতিক এলাকায় সোয়াট, সিটিটিসি এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিদেশি দূতাবাস, উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের বাসভবন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, একটি মহল পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে আন্তর্জাতিক মহলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চাচ্ছে। এজন্য সমাজমাধ্যমেও গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গুজবের মাধ্যমে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত তাদের অন্তত ২০টি গ্রুপ কাজ করছে।
গুজব মোকাবিলায় সরকারের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আছে কি না খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন অনেক সাইবার বিশেষজ্ঞ। যদিও র্যা-পুলিশের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় দাবি করেছেন, সমাজমাধ্যমে গুজব শনাক্তে তাদের সাইবার ইউনিট সার্বক্ষণিক কাজ করছে। কেউ গুজব ছড়ালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, অন্তর্র্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪ মাসে গুম ও ক্রসফায়ারের মতো ঘটনা না ঘটলেও রাজনৈতিক সহিংসতা, মব সহিংসতা, গণপিটুনিতে নির্যাতন ও হত্যা, নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণ, মাজারে হামলা ও ভাঙচুর এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। কমপক্ষে ১ হাজার ৪৭টি ‘রাজনৈতিক সহিংসতার’ ঘটনায় নিহত হয়েছে অন্তত ১৬০ জন। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৮ হাজার ৫০ জন। এর বাইরে বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও নির্যাতনে মৃত্যু, শ্রমিকদের ওপর হামলা, শিশু নির্যাতন, সংখ্যালঘু নির্যাতন, কারাগারে মৃত্যু, সভাসমাবেশে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যাসহ বেশ কিছু সামাজিক অপরাধ ঘটেছে; যা জনমনে ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকগুলোয় বাহিনীগুলোর বিভিন্ন ইউনিটকে ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। হঠাৎ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনে রিজার্ভ ফোর্স মোতায়েনের প্রস্তুতি রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক না ছড়াতে পুলিশ সদস্যদের পেশাদার আচরণ বজায় রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে পুলিশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো স্থিতিশীলতা। নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের সংঘাত, মিছিল বা সংঘর্ষ যেন বড় আকার না নেয়, সেটিই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে থানা ও ফাঁড়িগুলোকে প্রতিদিন স্থানীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে আপডেট দিতে। একই সঙ্গে সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর তালিকা প্রস্তুত করতে এবং শহরের প্রবেশপথ ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসানোর কথা বলা হয়েছে।বা:প্র।