
অনলাইন ডেস্ক : নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ইসলামী শরীয়তের বিধানসমুহের পরিপন্থি। মানুষের ধর্মীয় অনুভুতির পরিপন্থি। সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। তাই নারী সংস্কার কমিশন রিপোর্টের কয়েকটি অধ্যায় চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছিলো। কিন্তু রিটটি ‘অপরিপক্ক’ বিবেচনায় খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। শুনানি শেষে গতকাল সোমবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব এবং বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর ডিভিশন বেঞ্চ রিটটি খারিজ করে দেন। খারিজ আদেশে আদালত বলেন, এই সুপারিশ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এটা প্রি-ম্যাচিউড। সুপারিশ সরকার বাস্তবায়ন করলে রিটকারী চাইলে আদালতে পুনরায় আসতে পারবেন।
এই আইনজীবী বলেন, ‘উইমেন রিফর্ম কমিশন রিপোর্ট, ২০২৫’-এর অধ্যায় ৩, ৪, ৬, ১০, ১১ এবং ১২-এ অন্তর্ভুক্ত সুপারিশসমূহ ইসলামী শরীয়তের বিধানসমূহের পরিপন্থি, জনগণের ধর্মীয় অনুভূতির পরিপন্থি এবং বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায়, এই বিষয়ে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। আদেশের এ তথ্য জানিয়েছেন রিটকারীর কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট রওশন আলী। ‘নারী সংস্কার কমিশন’র পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।
এর আগে গত ১৯ মে নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশের কয়েকটি বিতর্কিত ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদেশের তারিখ ধার্য ছিলো গতকাল (সোমবার)।
প্রসঙ্গত: নারী সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত ও সাংঘর্ষিক বিষয় পর্যালোচনর জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়। রিটে নারী সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত ধারাগুলোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। রিটকারী অ্যাডভোকেট রওশন আলী বলেন, ‘উইমেন রিফর্ম কমিশন রিপোর্ট, ২০২৫’-এর অধ্যায় ৩, ৪, ৬, ১০, ১১ এবং ১২-এ অন্তর্ভুক্ত সুপারিশসমূহ ইসলামী শরীয়তের বিধানসমূহের পরিপন্থি, জনগণের ধর্মীয় অনুভূতির পরিপন্থি এবং বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ।
রিপোর্টটির ৩১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত সুপারিশ এবং সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত ও আলোচিত হয়েছে। রিপোর্টের বিভিন্ন সুপারিশ ইসলামী শরীয়ত, আমাদের সংবিধান এবং দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মূল্যবোধের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
প্রথমত: রিপোর্টের অধ্যায় ১১ তে পুরুষ ও নারীর জন্য সমান উত্তরাধিকার (ইকোয়াল ইনহেরিট্যান্স) দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা সরাসরি পবিত্র কুরআনের সুরা নিসা (৪:১১)-এর পরিপন্থি।
দ্বিতীয়ত: রিপোর্টে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব এসেছে, যা ইসলামী শরীয়তে অনুমোদিত একটি বিধান এবং সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ধর্মচর্চার অধিকার ক্ষুন্ন করে।
তৃতীয়ত: ‘মাই বডি মাই চয়েস’ স্লোগানকে অন্ধভাবে সমর্থন দিয়ে শরীয়তের ওপর ভিত্তি না রেখে নৈতিকতার সীমা অতিক্রম করার চেষ্টা করা হয়েছে।
চতুর্থত: যৌনকর্মকে (সেক্স ওয়ার্ক) বৈধ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যা ইসলামী মূল্যবোধ এবং সংবিধানের ২(ক) ও ২৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি।
পঞ্চমত: রিপোর্টে লিঙ্গ পরিচয় ( জেন্ডার আইডেনটিটি) এবং ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তা শরীয়তবিরোধী এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। রিটে তিনটি মন্ত্রণালয় এবং ‘উইমেন রিফর্ম কমিশন’ চেয়ারম্যান বিবাদী করা হয়।
প্রসঙ্গত: গত ১৯ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে ‘নারী সংস্কার কমিশন’। ৩১৮ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে ৪২৩টি সুপারিশ করা হয়। প্রতিবেদন দাখিলের পরপর এ নিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বিশেষত: নিষিদ্ধ পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সুপারিশে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন দেশের নারী সমাজ।
এর আগে ২০২৪ সালের নভেম্বরে ‘নারীপক্ষ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন পারভীন হককে প্রধান করে ১০ সদস্যের ‘নারী সংস্কার কমিশন’ গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন, ‘ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’র সিনিয়র ফেলো মাহীন সুলতান, ‘নারীপক্ষ’র পরিচালক অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার, ‘ফাউন্ডেশন ফর ল› অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফ্ল্যাড’র সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ, ‘বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন’র সভাপতি কল্পনা আক্তার, নারী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: হালিদা হানুম আক্তার, ‘বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র’র নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন’র সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, জেন্ডার ও সামাজিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ফেরদৌসী সুলতানা বেগম এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিশিতা জামান নিহা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে ‘নারী সংস্কার কমিশনৎ একটি।ই