দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ

♦ বেড়েছে খুন ♦ গণপিটুনি ♦ সাংবাদিক ও সংখ্যালঘু নির্যাতন ♦ হেফাজতে মৃত্যু ♦ রাজনৈতিক সহিংসতা ♦ সীমান্তে অস্থিরতা

অনলাইন ডেস্ক : দেশের আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ভয়াবহ নাজুক অবস্থা। আইন হাতে তুলে নিচ্ছে মানুষ। গত ৫ মাসে (জানুয়ারি-মে) দেশে গণপিটুনিতেই অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকালও রাজধানীর দারুসসালামে ২ যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।

৫ মাসে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ২৫০জন। সাংবাদিকদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে শতাধিক। রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত। কারা হেফাজতেও প্রতি মাসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
সহিংসতা বেড়েছে নারীদের ওপরেও। গত ৫ মাসে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৩৮৩টি, দলবেঁধে ধর্ষণ ৯৮টি ও ধর্ষণের পরে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৬টি। এ সময়ে আত্মহত্যা করেছেন ২১২ জন নারী ও হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৪৭ জন। অপহরণের পর নিখোঁজ হন অন্তত ৭৬ জন নারী।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) গত ৫ মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এমন চিত্র উঠে এসেছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতি মাসে এমন প্রতিবেদন তৈরি করে আসছে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সংস্থাটি। গতকাল প্রকাশিত ৩১ মে মাসের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে গণপিটুনি, হত্যা, আত্মহত্যা, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার, সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা, সীমান্তে পুশইন, সংখ্যালঘু নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতা, সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা, পুলিশের ভয়ে পালাতে গিয়ে মৃত্যু ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা বেড়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গত মে মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩৬৮টি। এর মধ্যে হত্যা ৮৬টি, ধর্ষণ ৫৯টি, দলবেঁধে ধর্ষণ ১৬টি ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে পাঁচটি।

ধর্ষণের শিকার ছয়জন ছিলেন প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরী। মাসটিতে আত্মহত্যা করেছেন ৪২ জন নারী। অপহরণ ও নিখোঁজ হয়েছেন ১১ জন। আগের মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ৩৬২টি। মে মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার ৩৫৯ জন। এতে আটজন নিহত ও ৩৫১ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হন ৯ জন। এ ছাড়া রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর দুষ্কৃতকারীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে ২০টি। এতে ১৬ জন আহত ও পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে চারজন বিএনপি এবং একজন আওয়ামী লীগের সমর্থক। এপ্রিলে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১২ জন নিহত হন। দুষ্কৃতকারীদের হামলায় নিহত হন চারজন নেতা-কর্মী। এ ছাড়া গত মাসে কক্সবাজারে একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও লাশ গুমের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এমএসএফের তথ্যানুযায়ী, গত মাসে কারা হেফাজতে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন ছিলেন কয়েদি ও চারজন হাজতি। গত মাসে একজন নারীসহ ছয়জন কারা হেফাজতে মারা যান। গণমাধ্যমকর্মীদের ওপরও গত মাসে হামলা, মামলা, হুমকির ঘটনা বৃদ্ধি পায়। এ সময় ৪১টি ঘটনায় ১০১ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নানাভাবে হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আগের মাসে ১৮টি ঘটনায় হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হন ৩৫ জন।

মে মাসে ১৫টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এপ্রিলে এমন ঘটনা ছিল আটটি। এর মধ্যে দুই মাসে তিনটি ধর্ষণের ঘটনাও রয়েছে। গত দুই মাসে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে ১০১ জনের। এর মধ্যে গত মাসে পাওয়া যায় ৫৫টি লাশ। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গত মাসে গণপিটুনির ঘটনা ৩৪টি। এতে সাতজন নিহত ও গুরুতর আহত হন ৩৮ জন। এমএসএফের প্রতিবেদন প্রকাশের পর গতকালও রাজধানীর দারুসসালামের হাড্ডিপট্টি এলাকায় দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া সীমান্তে অস্থিরতা চলছেই। গত মাসে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুজন নিহত, দুজন আহত ও বিএসএফের নির্যাতনে ৪জন আহত হন। বিএসএফ দুজন এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ আটজনকে ধরে নিয়ে যায়। অন্যদিকে আরাকান আর্মি দুই বাংলাদেশিকে গুলি ও তিনজনকে ধরে নিয়ে যায়।বা:প্র।

মন্তব্য করুন