খবর ডেস্ক :
‘উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ’– প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও গতকাল ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উদযাপন করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন, চট্টগ্রামের উদ্যোগে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি নুরে আলম মিনা, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ এবং মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী। সভাপতিত্ব করেন দুর্নীতি দমন কমিশন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. মাহমুদ হাসান।
প্রধান অতিথি সকলকে দুর্নীতি না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী ২০৪১ সালে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজের পাশাপাশি দুর্নীতি মুক্ত নাগরিক, দুর্নীতি মুক্ত অর্থনীতি, দুর্নীতি মুক্ত সরকার ও দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি হলো ডায়াবেটিসের মতো, একে কখনোই পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়, তবে যতটুকু সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সভাপতির বক্তব্যে দুর্নীতি দমন কমিশন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক বলেন, প্রত্যেক অফিস প্রধান যেন নিজ নিজ দপ্তরের দুর্নীতি নিয়ে সচেষ্ট থাকেন এবং দুর্নীতির তথ্য কমিশনকে জানাতে অনুরোধ করেন। দুর্নীতি দমনের জন্য কমিশন একা যথেষ্ট নয়, এর জন্য সম্মিলিত সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন, তবেই দুর্নীতিমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন সম্ভব হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন জনগণের সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে হয়রানি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও দীর্ঘসূত্রিতা দূর করার নিমিত্ত গণশূনানি পরিচালনার মাধ্যমে সেবাগ্রহীতা ও সরকারি সেবা প্রদানকারী কর্মচারীগণের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির চেষ্টা করে যাচ্ছে। সভাপতির বক্তব্য শেষে দুর্নীতি বিরোধী তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ ২০০৩ সালে ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস ঘোষণা করে। সে হিসেবে এবার ২১তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস। জাতিসংঘ সারা বিশ্বকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যেই ইউনাইটেড ন্যাশনস কনভেনশন অ্যাগেইনেস্ট করাপশনের (আনকাক) মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ আনকাকের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে ২০০৭ সাল থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন শুরু করে। সরকারিভাবে ২০১৭ সাল থেকে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের শুরু থেকেই তার সাধ্য অনুযায়ী কমিশনের তফসিলভুক্ত অপরাধসমূহের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাচ্ছে। ২০২২ সালে বিচারিক আদালতে দুদকের মামলার সাজার হার শতকরা প্রায় ৬৪ ভাগ। আর দুদকের মানি লন্ডারিং মামলায় সাজার হার প্রায় শতভাগ। বর্তমানে দুদকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান আছে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে বিভিন্ন উৎস হতে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে ৯০১টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য কমিশন অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া তিন হাজারের বেশি অভিযোগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম ছাড়াও দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে ২০২২ সালে ৪৫৬ টি অভিযান পরিচালনা করেছে।
দুর্নীতি দমনের পাশাপাশি কমিশন সারা দেশে দুর্নীতির বিষয়ে সচেতনেতার জন্য উপজেলা, জেলা ও মহানগর পর্যায়ে ৫০২টি দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে স্কুল–কলেজ–মাদ্রাসা পর্যায়ে ২৭ হাজার ৬২৯টি সততা সংঘ ও ৫ হাজার ৭৫৬টি সততা স্টোর স্থাপন করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন দৃঢ় প্রত্যয়ে দুর্নীতিমুক্ত জাতি নিশ্চিত করার সনদ বাস্তবায়নে নির্ধারিত উদ্দেশ্য ও কল্পকে সমুন্নত রেখে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে শিল্পায়নের মাধ্যেম উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দুর্বার গতিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সক্রিয় অংশীদার হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।