ঢাকায় বৃষ্টিতে দুর্ভোগে কর্মজীবীরা

ডেস্ক : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে থেমে থেকে ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিসিএস পরীক্ষার্থী, পথচারী ও কর্মজীবী মানুষরা। ৪৯তম বিশেষ বিসিএসের (শিক্ষা) প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর পরীক্ষার্থী ও তাদের স্বজনদের ভিজে ভিজে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। বৃষ্টিতে রাজধানীর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সৃষ্টি হয় পানিবদ্ধতা। এতে সকাল থেকেই দুর্ভোগে পড়েন অফিসগামী যাত্রী, সাধারণ পথচারী ও রিকশাচালকেরা। রাজধানীর পুরান ঢাকা, আজিমপুর, নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি, পল্টন, রামপুরা, কাকরাইল, মিরপুর রোড, মিরপুর ১ থেকে ২ নম্বর পর্যন্ত, মিরপুর, কাজীপাড়া, কালশী এবং মতিঝিল এলাকার বহু সড়কে পানি জমে গেছে। কোথাও কোথাও রাস্তার ওপর জমে থাকা পানি ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেমে যেতে পারেনি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে। এ অবস্থায় সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। ধীরগতির যান চলাচল ও বিকল রিকশার কারণে অনেক স্থানে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। কিছু এলাকায় মোটরসাইকেল ও ছোট যানবাহন পানিতে আটকে পড়ায় ভোগান্তি বেড়েছে পথচারীদেরও।

বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ ও সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে জমে যায় পানি। রাস্তায় পানি থাকায় যান চলাচলে তৈরি হয় জটলা। পানিবদ্ধতার কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন রাজধানীর টিকাটুলী, মালিবাগ, মৌচাক, রাজারবাগ, মুগদা, বাসাবো, খিলগাঁও এলাকার মানুষ। ঢাকার অনেক এলাকায় সড়কের মেরামত কাজের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। দুর্ভোগ পোহাতে হয় বাসিন্দাদের। বৃষ্টির কারণে নিত্যপ্রয়োজনের কাজে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ পড়েন বিপাকে। বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় দ্রুত পানি নিষ্কাশনে কাজ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

ইডেন কলেজে পরীক্ষা দেওয়া এক পরীক্ষার্থী জানান, সকাল থেকে আকাশ মেঘলা ছিল। ভাবিনি বৃষ্টি হবে। পরীক্ষা দিয়ে বের হয়েই বৃষ্টিতে ভিজে গেছি। পল্টন এলাকার একজন রিকশাওয়ালা বলেন, বর্ষা শেষ তবুও বৃষ্টি থামে না। হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি আসে। ছুটির দিন এমনিতে মানুষ কম। তার মাঝে বৃষ্টি, কষ্ট দিচ্ছে। আয়-রোজগার কম।
সাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপ এবং মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকায় সকাল থেকে আকাশ ছিল মেঘলা। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয় বৃষ্টি। কোথাও মাঝারি আবার কোথাও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী কয়েকদিন এভাবে নানা অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানায়।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিহার, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানীর সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। একটু বৃষ্টি হলেই নগরীর সড়কগুলোতে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমড় পানি পর্যন্ত হয়ে যায়। তখন এই পানি ভেঙ্গে মানুষকে কর্মস্থলে যেতে হয়। নদী ভরাট রোধ, দখল হওয়া খাল উদ্ধার, পলিথিনের অবাধ ব্যবহার বন্ধ, অপরিকল্পিত বক্স কালভার্ট ও কার্যকর ড্রেনেজ সিস্টেম চালু করতে না পারলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতাও জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ঢাকায় ময়লা ফেলার জন্য বেছে নেওয়া হয় রাস্তাঘাট। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়নকাজে ব্যবহারের পর ফেলে রাখা জিনিসপত্র বৃষ্টি বা বিভিন্নভাবে গিয়ে ঠাঁই নেয় ড্রেনে। এতে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় পানিপ্রবাহ। ঢাকাসহ সারাদেশেই পলিথিনের অবাধ ব্যবহার। অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ ও খাল দখল, সমন্বয়হীনতা এবং নগরীর কংক্রিটাইজেশনের কারণে পানিবদ্ধতা বাড়ছে, যা নিরসনে একটি সমন্বিত ও জনসম্পৃক্ত প্রকল্প প্রয়োজন। ড্রেনেজ ও খালগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে এবং বিদ্যমান অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ৭টি সরকারি সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়, কিন্তু এদের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের অভাব সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।ই

মন্তব্য করুন