
অনলাইন ডেস্ক: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের নতুন সভাপতি হিসেবে জার্মানীর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক-এর দায়িত্বগ্রহণের মধ্যদিয়ে গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হলো সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন। সকালে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানস্থ জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এই অধিবেশনের উদ্বোধন হয়। অধিবেশনের মেয়াদ থাকবে আগামী বছরের অর্থাৎ ২০২৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। অধিবেশনে উচ্চপর্যায়ের সাধারণ বিতর্ক চলবে একটানা সাত দিন, ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বিশ্ব নেতাদের সবচেয়ে বড় আসর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘একসঙ্গে ভালো : শান্তি, উন্নয়ন ও মানবাধিকারের পথে ৮০ বছর ও আরো বেশি।’ এবার উচ্চ পর্যায়ের সভার মধ্য দিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর শুরু হবে জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠান। পরদিন ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ সাধারণ বিতর্কে অংশ নেবেন।
জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ মিশন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মতো এবারও জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত অধিবেশনের মতো এবারো তাঁর সফর সঙ্গীর সংখ্যাও হবে ছোট আকারের।
অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে শপথ গ্রহনের মধ্যদিয়ে নতুন সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন জার্মানীর সাবেক মন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক। এরপর তিনি সভাপতি হিসেবে ভাষণ দেন। এছাড়াও উদ্বোধনী দিনে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস তার ভাষণে শান্তি, নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন।
বিগত বছরগুলোর মতো সদস্য রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা সাধারণ বিতর্কে অংশ নেবেন। প্রথাগত নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ বিতর্কের প্রথম দিন ২৩ সেপ্টেম্বর বক্তব্য রাখবেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইন ইনাফিউ লানা দ্যা সিলভা। এরপর বক্তব্য রাখবে স্বাগতিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। একইদিন ভাষণ দেবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে এবারের অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সবমিলিয়ে এবারের অধিবেশনে শতাধিক দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ যোগ দিচ্ছেন।
জাতিসংঘের প্রাথমিক সূচি অনুযায়ী আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ অধিবেশন ও ২৬ সেপ্টেম্বর পারমাণবিক অস্ত্র পুরোপুরি বিলুপ্তির আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে উচ্চপর্যায়ের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অধিবেশনে চলমান বৈশ্বিক সংঘাত বিশেষ করে ইউক্রেন সংকট, ফিলিস্তিনের যুদ্ধ পরিস্থিতি ও মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনার পাশাপাশি দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাস, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি বিষয় প্রাধান্য পাবে। বিশেষ করে এবারের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া, গাজায় ইসরাইলী বাহিনীর আগ্রাসন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ প্রসঙ্গ সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব পাবে। চলমান আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এবারের অধিবেশন বিশ্ব কূটনীতিতে নতুন দিকনির্দেশনা দেবে- এমনটাই সবার প্রত্যাশা। উল্লেখ্য, আট দশক আগে ১৯৪৫ সালে সংস্থাটি গঠনে প্রতিষ্ঠাতারা যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিকোতে মিলিত হয়েছিলেন।ই