নিজস্ব প্রতিনিধি : বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীকে চাঁদপুর জেলার গ্রামেরবাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় গুবিন্দিয়া গ্রামে তৃতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে বাদ জোহর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
জানাজায় আরো অংশ নেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া সাংবাদিকদের সংগঠন প্রেসক্লাব, ডিআরইউ, ডিইউজে, বিএফইউজে নেতা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রধান ব্যক্তিরা অংশ নেন। রুহুল আমিন গাজীর মৃত্যুতে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে।
জানাজা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, রুহুল আমিন গাজী বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক ছিলেন। তিনি সবসময় দেশের পক্ষে কথা বলেছিলেন। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি গণমাধ্যমের জন্য সবসময় লড়াই করেছেন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। তিনি কারা নির্যাতিত ছিলেন। আমরা গণমাধ্যমকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করবো।
জানাজার আগে রহুল আমিন গাজীর ছেলে আদনান আবরার বলেন, আমার বাবা সবসময় সত্য কথা বলার চেষ্টা করতেন। তিনি দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছেন সবসময়। আমাকেও তিনি এ শিক্ণা দিয়েছেন। আর কোনোদিন আমার বাবা আমাকে ডাকবেন না। আপনারা আমার বাবকে ক্ষমা করবেন। তার জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ভালো লোকের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। রুহুল আমিন গাজী ছিলেন ভাল মানুষ। তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন। মহান রাব্বুল আলামিন রুহুল আমিন গাজী ভাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক। আমিন।
জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে সকালে সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর কফিন নিয়ে আসলে সেখানে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন তার সহকর্মীরাসহ নানা পেশার ব্যাক্তিরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে তার কফিন আসার পর বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। প্রতিকুল আবহাওয়ার মধ্যেও তার জানাজায় অংশ নেন সহস্রাধিক মানুষ।
উল্লেখ্য গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পান্থপথে বিআরবি হাসপাতালে মারা যান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতা, উচ্চ ডায়াবেটিক, ব্যাক পেইন, লবণ ঘাটতিসসহ বিভিন্ন রোগে ভোগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক ছেলে দুই মেয়ে রেখে গেছেন।
জানাজায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরাফত আলী সপু, শামীমুর রহমান শামীম, জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক মজিবুর রহমান, শামসুল ইসাম, আবদুল হালিম, নুরুল ইসলাম বুলবুল, সেলিম উদ্দিন, মোবারক হোসেইন, আবদুর রব, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমানসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ।
সাংবাদিকদের মধ্যে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, আবুল কালাম আজাদ, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, সাইফুল আলম, এমএ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, আবদুল জলিল ভুঁইয়া, আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, কামাল উদ্দিন সবুজ, আবদুল হাই সিদ্দিকী, এম আবদুল্লাহ, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, বাকের হোসাইন, সরদার ফরিদ আহমদ, ইলিয়াস খান, সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, রফিক মুহাম্মদ, রফিকুল ইসলাম আজাদ, ইলিয়াস হোসেন, শাহীন হাসনাত, কাজী রওনুকুল হোসেন, শাহেদ চৌধুরী, মুরসালিন নোমানী, রাশেদুল হক, ওমর ফারুক, ওবায়দুর রহমান শাহিন, বাছির জামাল, মহিউদ্দিন আহমেদ প্র্রমূখ।
১৯৫৩ সালে ২২ এপ্রিল রুহুল আমিন গাজীর জন্ম চাঁদপুরের গুবিন্দিয়া গ্রামে। শিক্ষাজীবনে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর ১৯৭৪ সালে রিপোর্টার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়। ইত্তেফাক ছেড়ে যোগ দেন দৈনিক সংগ্রামেৃ বিশেষ প্রতিনিধি, চিফ রিপোর্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন ধরে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাংবাদিক-সংবাদ কর্মীদের রুটি-রুজির আন্দোলনে রুহুল আমিন গাজী ছিলেন সবসময় সোচ্চার। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়ে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবী সংগঠন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন রুহুল আমিন গাজী। শেখ হাসিনার সরকারের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এই সাংবাদিক নেতাকে কারাবন্দি করে রাখে টানা ১৮ মাসের অধিক সময়। কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে জামিন দেয়নি সরকার।ই