
খবর ডেস্ক:
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় সরগরম চট্টগ্রাম। হেভিওয়েট থেকে শুরু করে তূলনামূলক কম পরিচিত প্রার্থী-সবাই নিজ নিজ প্রতীক নিয়ে সাধ্যমতো প্রচারণার মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ভোটারের মন জয়ে তুলে ধরছেন সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি। স্বতন্ত্র ও অন্য দলের প্রার্থীরা এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরে নির্বাচিত হলে সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন।
প্রচারণার কৌশলে ভিন্নতা থাকলেও সব প্রার্থী একটি জায়গায় এসে একাট্টা। তা হলো-কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। তাই কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দিতে উৎসাহিত করছেন ভোটারদের।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে নগরীর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান ৮টির। বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় ভোটের ইমেজে এসব আসনে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে অনেক আসনে নৌকার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সেটি পুষিয়ে দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীও আছেন মাঠে।
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) ন্যাশনালিষ্ট বিএনএফ এর মনোণীত যোগ্য প্রার্থী লায়ন মাওলানা মো: ইউসূফ।
তিনি টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে মিরসরাইর প্রত্যকটি উপজেলা, থানা,পাড়া-মহল্লাসহ আনাচে-কানাচে, বাড়ি বাড়ি গণসংযোগ ও ভোটারদের সাক্ষাৎ ও কৌশল বিনিময় করছেন। এসময় তিনি পূর্বের অবস্থা উল্লেখ করে আগামীতে বিভিন্ন অনিয়ম, কিশোরগ্যাংসহ নানা অপকর্ম বন্ধে এবং অবহেলিত প্রত্যেক এলাকায় উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। ভোটাররাও তাদের মূল্যবান রায় দিয়ে বিজয় করবেন বলে আশ্বস্থ করে।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড ও নগরীর একাংশ) আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসএম আল মামুন। এখানে দলীয় স্বতন্ত্র না থাকায় তিনি অনেকটাই নির্ভার। নৌকার এ প্রার্থী নির্বাচিত হলে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ফায়ার স্টেশন স্থাপনের চেষ্টা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া সীতাকুন্ড হতে নগরীতে কমিউটার ট্রেন ও বাস সার্ভিস চালু, দুটি ইউনিয়নে শিল্পজোন, শিপব্রেকিং শিল্পকে গ্রিনজোন, ছলিমপুরে প্রকৃত ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও নগরীর একাংশ) আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় এখানে নৌকা প্রতীক নেই। জাতীয় পার্টির প্রার্থী (লাঙল) বর্তমান এমপি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রচারণায় সরব। তিনি বলেন, আমি হাটহাজারীকে একটি উন্নত উপজেলায় রূপান্তরের চেষ্টা করেছি সবসময়। ভবিষ্যতেও করব। লাঙলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরীও (কেটলি) জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলছেন, আসনটিতে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সংসদ-সদস্য ছিল না। তাই এখানে প্রত্যাশিত উন্নয়ন হয়নি। তিনি নির্বাচিত হলে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে হাটহাজারীতে বেশি উন্নয়ন হবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন ভোটারদের।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনটিও সমঝোতার ভিত্তিতে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ (লাঙল)। তার সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুচ ছালাম (কেটলি) ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরী (ফুলকপি)।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরীর (নৌকা) বিপক্ষে নেই নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সানজিদ রশিদ চৌধুরী লাঙ্গল নিয়ে এ আসনে লড়ছেন। তার তেমন প্রচার-প্রচারণা নেই। তাই নওফেলকে তেমন কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু। এ আসনে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলমকে (ফুলকপি)। নৌকার প্রার্থী বলছেন, তিনি এলাকার সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবগত আছেন। নির্বাচিত হলে সেসব সমস্যার সমাধান করবেন। মনজুর আলম এলাকায় স্কুল, কলেজ, দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা ও রাস্তাঘাট সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদও (কেটলি) প্রচারণায় আছেন।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে নৌকার প্রার্থী এম আবদুল লতিফের সঙ্গে আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনের (কেটলি) হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী)র সংসদীয় আসন হইতে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মনোণীত সৎ ও যোগ্য প্রার্থী মাওলানা ,মুফতি মো: রশিদুল হক (বি,এসসি)র ঘোষনা :
আসনের খেলাফত আন্দোলনের মনোণীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও মাওলানা ,মুফতি মো: রশিদুল হক (বি,এসসি) বলেন, এলাকায় মাদকাশক্তি ও বিক্রি সমাজ, এলাকায় ভয়ানক ব্যাধি ও অপরাধ সৃষ্টির মূল । যা তরুণ–যুবকরা গ্রহণ করে নিজেদের ক্ষতির পাশাপাশি সমাজে উঠতি বয়সীদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ।
আমার সংসদীয় ইউনিয়ন, এলাকায়ও মাদকাসক্তর প্রভাব দিন দিন বেড়ে গেছে এবং বেড়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নই, পাশা-পাশি বিভিন্ন অপরাধও বেড়ে যাচ্ছে। কিছু অসাধু প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় থেকে এসব মাদক বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধ সৃষ্টি হচ্ছে ।
আমি মহান আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখে ঘোষণা করছি যে, আমার নীতি ও আদর্শ হল ইসলাম। তাই আমি নির্বাচিত হলে, মহান সংসদে আল্লাহ ও রাসূল (সা:)-এর পক্ষে, ইসলামের পক্ষে, কোরআনের পক্ষে কথা বলব, বাতিল ও শয়তানি শক্তির উত্তান ঘটলে তার বিরুদ্ধে জিহাদ করবো, সমাজ থেকে সন্ত্রাস ও দুর্ণীতি দুর করবো, এলাকার সার্ভিক উন্নয়ন সাধন করবো, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট হবো এবং অভাবীদের অভাব দুরীকরণে সর্ব শক্তি নিয়োগ করবো, হযরত ওমর ফারক (রা:)-এর মত ঘুরে ঘুরে জনগনের দু:খ-দুর্দশা দেখবো ও সমাধান করার চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ।
এখন আপনার বিবেককে জিজ্ঞেস করুন? কোন পক্ষে যাবেন এবং কোন আদর্শে ভোট দিবেন?
মাওলানা শামসুল হক পরিদপুরী (সদর ছাহেব হুজুর (রহ:) বলেছেন দেশী, খেশী ও দল প্রীতিতে ইসলামের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বনাশ ডেকে আনবেন না। অসৎ অযোগ্য, খুনি, দাগি সন্ত্রাসী, দুর্ণীতিবাঁজ, ক্ষমতার অপ-ব্যবহারকারিদের ভোট দেয়া হারাম।
কেননা মানুষ সৃষ্টির মুখ্য উদ্দেশ্য হলো ২টি- খেলাফত আর এবাদত, খেলাফত পদ্ধতির সরকার আজ দেশে চালু না থাকায় সমস্ত অসান্তির মূল কারন।
হাফেজ্জী হুজুর (রহ:) বলেছেন, ভোট গ্রহিতারা বিজয়ী হয়ে পাপ করলে, ভোট দাতারাও সে পাপের সমান অংশীদার হবে।
ভোট একটি আমানত,সঠিক পথে প্রয়োগ করা এবাদত। তাই দ্বীনদার, বিশ্বস্ত আল্লাহওয়ালা লোকদেরকে নির্বাচিত করা ভোটারদের পরম দ্বায়িত্ব।
অতএব আমি আশা করবো, আপনার, মূল্যবান ভোটটি শান্তির প্রতীক বটগাছ মার্কায় প্রদান করবেন,এতে আপনার ভোট পচাবেনা, মাটির নিছে কবরে গিয়েও অক্ষয় দেখতে পাবেন।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে নৌকার
প্রার্থী বর্তমান এমপি ড. মো: আবু রেজা নদভী। এ আসনে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে একই দলীয় থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপি (ঈগল)। ২জনেই সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় চষে বেড়াচ্ছেন প্রচারণায়।
এদিকে নৌকার প্রার্থী বলছেন, বিগত দিনে তিনি এলাকার অনেক অনেক অগনিয়ত উন্নয়ন করেছেন বলে ভোটারদের দোয়ারে দোয়ারে ও এলাকায় গিয়ে পিরিস্থি তুলে ধরছে এবং যা অসম্পন্ন সেগুলো সম্পর্কে অবগত আছেন। নির্বাচিত হলে সেসব সমস্যার সমাধান করবেন বলেও আশ্বাস প্রদান করছেন ভোটারদের।
অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেব সিআইপিও বিগত দিনে এলাকায় স্কুল, কলেজ, প্রতিষ্ঠানসহ নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরতেছে । অথচ যে জনপ্রতিনিধির দরবারে গিয়ে ভূক্তভোগিরা সাক্ষাৎ পাই না, পেলেও সর্বশ্ব হারিয়ে, দু:খের বিষয় সেও এলাকার নিম্ন থেকে ধরে এবং ভাল-মন্দ সবার দোয়ারে দোয়ারে উজাট খেয়ে নানা লোভনীয় আশায় রাস্তাঘাট সংস্কারসহ নানা আশারবাণী ও অপুরন্ত প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে । ভোটাররাও পরে কানাগোসা করলেও দেখে না দেখার ভান করে আশা ভেঙ্গে না দিয়ে বিদায় দিচ্ছে বলে অনেকে জানান।