
খবর ডেস্ক : প্রতিবছর সারাদেশে লক্ষাধিক পশু জবাই করা হয় কোরবানি ঈদে। যার ফলে উৎপন্ন হয় বিপুল পরিমাণ চামড়া, যা দেশের চামড়াশিল্প ও অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তবে অব্যবস্থাপনা ও অজ্ঞতার কারণে অনেক চামড়াই নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণের নির্ভুল পদ্ধতি না জানার কারণেই সাধারণত এই ক্ষতি হয়ে থাকে ।
চামড়া ছাড়ানোর সময় সচেতনতা জরুরি:
কোরবানির পর চামড়া ছাড়ানোর সময় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয় সতর্কতা ও পরিচ্ছন্নতায়। অনেক ক্ষেত্রে অপরিণত হাতে বা অদক্ষ কসাই দ্বারা চামড়া ফাটিয়ে ফেলা হয়, ফলে সেটি বাজারে কম মূল্যে বিক্রি হয় বা কখনো একেবারে বিক্রি অযোগ্য হয়ে পড়ে। চামড়া ছাড়াতে হলে ধারালো ছুরি ব্যবহার করতে হবে এবং তা ধীরে ধীরে মাংস থেকে আলাদা করতে হবে।
চামড়া সংরক্ষণের সঠিক উপায়:
চামড়া ছাড়ানোর পরই দ্রুত সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করলে তা পঁচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো লবণ দিয়ে সংরক্ষণ। প্রতি বর্গফুট চামড়ায় কমপক্ষে ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম মোটা দানার লবণ ব্যবহার করতে হবে। লবণ পুরো চামড়ায় সমভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে, বিশেষ করে কান, পা ও ঘাড়ের অংশে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
চামড়া কখনোই ভাঁজ করে রাখা যাবে না। সমতল জায়গায় পেতে রেখে তার ওপর লবণ দিতে হবে, যেন সঠিকভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে। যদি দ্রুত ট্যানারিতে পাঠানো সম্ভব না হয়, তাহলে ছায়াযুক্ত ঠাণ্ডা স্থানে রেখে তা ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
ভ্রাম্যমাণ সংগ্রহকারীদের প্রতারণা:
প্রতিবছর অনেকেই অল্প দামে চামড়া কিনে নেয় বা বিনামূল্যে নিয়ে যায়, বলছে সংরক্ষণ সম্ভব নয়। অথচ সাধারণ মানুষের একটু সচেতনতা ও সঠিক সংরক্ষণ চর্চা এই চামড়াকে রক্ষা করতে পারে। চামড়া কেবল পশুর একটি অংশ নয়, এটি একটি অর্থনৈতিক সম্পদ। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে ব্যক্তি, সমাজ এবং দেশের অর্থনীতিতে তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তাই কোরবানির চামড়া যেন অবহেলায় নষ্ট না হয়—এটি নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
কোরবানির পশুর রক্ত, নাড়িভুঁড়ি ও অন্যান্য বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করলে তা পরিবেশ দূষণের বদলে কৃষির জন্য উপকারী সম্পদে রূপ নিতে পারে। পশুর রক্ত ও বর্জ্য থেকে উৎকৃষ্ট মানের জৈব সার তৈরি করা যায়, যা জমির উর্বরতা বাড়াতে সহায়ক। এই সারে প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত নাইট্রোজেন থাকতে পারে, যা ইউরিয়া সারের মতো কাজ করে। এছাড়া এতে ফসফরাস ও পটাশিয়ামও থাকে, যা ফসলের গুণগত মান উন্নয়নে সাহায্য করে।
সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য কোরবানি নির্ধারিত স্থানে করা উচিত, যেমন সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত কোরবানির জায়গা অথবা যে জমিতে পরবর্তী সময়ে চাষাবাদ করবেন, সেই জমি। পশু জবাইয়ের পর রক্তের উপর মাটি দিয়ে ঢেকে দিলে তা কিছুদিনের মধ্যেই জৈব সারে রূপান্তরিত হয়। এতে পরিবেশ দূষণ হয় না এবং কৃষিকাজেও উপকারে আসে।
তবে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, কোরবানির বর্জ্য কখনোই খোলা জায়গা বা ড্রেনে ফেলা যাবে না। এতে পানি ও বাতাস দূষিত হয় এবং নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে এবং পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করলে তা আমাদের জন্য অর্থনৈতিক ও পরিবেশগতভাবে লাভজনক হতে পারে।ই।