কালুরঘাট ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার বরাবর চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের স্মারকলিপি প্রদান

দায়ী ট্রেনচালকের শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও অবিলম্বে নতুন সেতু নির্মাণের জোর দাবি

চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের মহাসচিব মো. কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক কালুরঘাট রেল সেতুতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হৃদয়বিদারক ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতদের ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার দাবিতে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের নেতৃবৃন্দ আজ ১৭ জুন মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় এক আনুষ্ঠানিক স্মারকলিপি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের বরাবর জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের মাধ্যমে পেশ করেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, “১৯৩৪ সালে নির্মিত জরাজীর্ণ কালুরঘাট রেলসেতুটি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামবাসীর চলাচলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদের ঠিক দুদিন আগে গত ৫ই জুন এই রেল সেতুতে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেন একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই শিশু আয়েশা, তরুণ তুষার ও অপর একজন প্রাণ হারান এবং আরও কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এই দুর্ঘটনা গোটা শহরবাসীকে স্তব্ধ করে দেয়।

চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের নেতৃবৃন্দ দাবি করেন, রেললাইনে স্পষ্ট লাল সিগন্যাল ও লাল পতাকা থাকার পরেও ট্রেন থামানো হয়নি। একজন পেশাদার চালকের কাছ থেকে এটি কখনোই প্রত্যাশিত নয়। এই অবহেলা শুধু দায়িত্বহীনতা নয়। এটি দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায় একটি শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধও।

চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে উত্থাপিত দাবিগুলো হলো: ১. দায়ী ট্রেন চালকের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে ফৌজদারি মামলা রুজু করতে হবে। ২. রেলওয়ের গাফিলতির তদন্তে বিচার বিভাগীয় উচ্চপর্যায়ের কমিশন গঠন করতে হবে। ৩. নিহতদের পরিবারকে তিন কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসনসহ যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। ৪. পুরাতন সেতুর যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও সিগন্যাল ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। ৫. কালুরঘাটে নতুন সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত দৃশ্যমান করে ২০২৮ সালের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন- মানবাধিকার নেতা এড. আবুল হাশেম, স. ম. জিয়াউর রহমান, হাজী মো. জসিম উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ এমরান, মীম চৌধুরী, ইয়াহইয়া খান, আসিফ ইকবাল, সমীরন পাল, শফিকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ রাকিব, মো : শাহাজাহান, সেলিম উদ্দিন, শওকত হোসেনসহ প্রায় ৩০ জন সক্রিয় নাগরিক প্রতিনিধি।

স্মারকলিপি গ্রহণ করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, “চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের এই উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। আমি এ স্মারকলিপি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের কার্যালয়ে যথাযথ গুরুত্বসহকারে পাঠাবো। সরকার এই দুর্ঘটনার তদন্তে আন্তরিক এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি আরও বলেন, “মানুষের জীবন নিয়ে এমন অবহেলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া জরুরি।

স্মারকলিপি প্রদান শেষে এক সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তারা বলেন, “চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দাবি কালুরঘাটে নতুন সেতু। আজ যারা প্রাণ হারাল, তারা ছিল আমাদের সন্তান। এই মৃত্যু যেন আর কোনো পরিবারে না ঘটে, সে লক্ষ্যে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সভা শেষে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি নিরাপদ, পরিকল্পিত ও দায়িত্বশীল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

মন্তব্য করুন