
অনলাইন ডেস্ক : দেশের সব কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কারা অধিদপ্তরের ১৪তম ব্যাচের ডেপুটি জেলার এবং ৬২তম ব্যাচের কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষীদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি সংস্কারমুখী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে আমরা কারাগারকে একটি সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
তিনি আরও বলেন, বন্দিকে অপরাধী নয়, সংশোধনযোগ্য মানুষ হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার ‘সংশোধনমূলক শিল্প পার্ক’ তৈরিসহ বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এসব পার্কে বন্দিরা প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। জেলে বসেই তারা আয়-রোজগারের সুযোগ পাবে এবং পরিবারের আর্থিক সহায়তা করতে পারবে।
কারারক্ষীদের মাঠ পর্যায়ের চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, কারারক্ষীরাই সরাসরি বন্দিদের সঙ্গে কাজ করেন, শৃঙ্খলা বজায় রাখেন এবং মানবিক আচরণ প্রদর্শন করেন। এ দায়িত্ব পালনে ধৈর্য, সাহস ও পেশাগত নিষ্ঠা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কেবল পেশাগত দক্ষতা অর্জনের মাধ্যম নয়, এটি সততা, দেশপ্রেম ও নৈতিক গুণাবলি অর্জনের প্রক্রিয়া, যা একজন মানুষকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।উপদেষ্টা নবীন ডেপুটি জেলার ও কারারক্ষীদের ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ডেপুটি জেলারেরা গণকারাগারের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কারা প্রশাসন গঠনে তারাই প্রধান ভূমিকা পালন করবেন।তিনি নবীনদের ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দুর্নীতিমুক্তভাবে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কারা বিভাগের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করার নির্দেশ দেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিকমানের কারাব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। বন্দিদের নিরাপদ আটক নিশ্চিত করতে মোবাইল জ্যামার, পৃথক ইন্টারনেট ব্যবস্থা, বডি স্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানার, সার্কিট ডিটেক্টরসহ নানা ধরনের আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জাম স্থাপন করা হচ্ছে।
তিনি জানান, কারারক্ষীদের সাহসিকতা ও কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বাংলাদেশ জেল মেডেল’ প্রবর্তনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন অন্যান্য সংস্থার ন্যায় অবসরপ্রাপ্ত কারা সদস্যদের আজীবন রেশন প্রদান নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে তিনি কৃতী নবীন প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।অনুষ্ঠানে নবীন ডেপুটি জেলার, কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষীদের শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন, বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান, আরএমপি পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম, রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কমান্ড্যান্ট মো. কামাল হোসেনসহ বিভাগের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ১৪তম ব্যাচের ডেপুটি জেলারের মধ্যে সর্ব বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন মোছা. খাদিজা খাতুন লিমা এবং বেস্ট ফায়ারার নির্বাচিত হন ডিএম নুসরাত আল ইসলাম।৬২তম ব্যাচের কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষীদের মধ্যে সর্ব বিষয়ে প্রথম হন সুব্রত চন্দ্র সরকার এবং বেস্ট ফায়ারার নির্বাচিত হন রায়হান মিয়া।পরে উপদেষ্টা রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেন।ই