চমেক হাসপাতালে আছে ৭০টি ভেন্টিলেটর, আজ আসছে আরো ২০টি, জেনারেল হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছে ৩টি, আছে পর্যাপ্ত অক্সিজেনও চিকিৎসা উপকরণ সব নরমাল রেটে বিক্রি করতে হবে : মেয়র
করোনা সংক্রমিতদের চিকিৎসা নিশ্চিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভেন্টিলেটর স্থাপনসহ নানা প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চমেক হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে ১০টিসহ ৭০টি ভেন্টিলেটর প্রস্তুত আছে। হাসপাতালটিতে আজ ঢাকা থেকে আসা আরো ২০টি ভেন্টিলেটর যুক্ত হবে। এছাড়া জেনারেল হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছে ৩টি ভেন্টিলেটর। উভয় হাসপাতালে পর্যাপ্ত মজুদ আছে অক্সিজেনও।
গতকাল সোমবার হাসপাতাল দুটি পরিদর্শন করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এসময় করোনা মোকাবিলায় হাসপাতাল দুটির প্রস্তুতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। চমেক হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে অসাধু ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মেয়র। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মাস্কের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। মাস্ক কমপ্লিটলি বাজার থেকে গায়েব করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। গ্লাভস থেকে শুরু করে প্রতিকারের বিভিন্ন উপকরণ যেমন স্যানিটাইজার, লোশন সবকিছু মার্কেট শর্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের ব্যাপারে বলতে চাই, রোজার সময় যেভাবে আমি, ডিসি ও ম্যাজিস্ট্রেটসহ গিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলাম, এবারও একই পদক্ষেপ নিব। কোনো অসাধু ব্যবসায়ীকে একবিন্দু ছাড় দিতে রাজি নই। সব নরমাল রেটে বিক্রি করতে হবে। অন্যথায় আমরা জানি কে কোথায় কী রেখেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সবচেয়ে বেশি ভেন্টিলেটর চমেক হাসপাতালে : মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ভেন্টিলেটর আছে। এখানে এসে সন্তুষ্ট হয়েছি। কারণ সবচেয়ে যেটা বেশি যেটা দরকার অক্সিজেন চ্যানেল প্রতিটি রুমে, প্রতিটি কেবিনে এবং প্রতিটি বেডের সাথে অক্সিজেন সংযুক্ত আছে। তিনি বলেন, এখানে (কোভিড ওয়ার্ড) ভেন্টিলেটর আছে ১০টা এবং সেগুলো কাজ করছে। উপরে আরো ৬০টি ভেন্টিলেটর আছে। প্রয়োজন হলে সেখান থেকে আরো ভেন্টিলেটর তারা আনতে পারবে।
তিনি বলেন, এখানে ৫০ বেডের ডেডিকেটেড কোভিড সেন্টার আছে। এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। হাইফ্লো অক্সিজেনও তাদের প্রচুর আছে। এটা অত্যন্ত জরুরি কোভিড রোগীর জন্য। সব মিলিয়ে এই সেন্টারটি প্রস্তুত। এখানে আইসিইউ স্পেশালিস্টসহ ডাক্তাররা আছেন। রোগীরা সবচেয়ে ভালো সেবা এখানে পাবে। ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা এখানে আছে। হঠাৎ করে কোনো রোগীর ডায়ালাইসিস যদি লাগে, মেশিন এখানে আছে। তারা প্রস্তুত। যদিও কোনো রোগী এখনো ভর্তি হয়নি।
ডা. শাহাদাত বলেন, কোভিড অমিক্রন এক্সবিবি ধরন ডেল্টার চেয়েও ‘শক্তিশালী ও মারাত্মক’। কাজেই আমাদের সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। কিন্তু আমার মনে হয়, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো। এজন্য সবসময় মাস্ক পরিধান করতে হবে। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পরবর্তীতে এলাকাভিত্তিক রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোন ঘোষণার বিষয়টিও আমাদের চিন্থা–ভাবনা করতে হবে।
এক প্রশ্নর জবাবে মেয়র বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক আমরা যাব। ভিড় এড়ানো এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে প্রয়োজনে প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব। প্রতিকারের জন্য যা দরকর সব করব। তিনি বলেন, রোগী সংখ্যা বাড়লে আইসোলেশনের জন্য নগরীর মেমন–২ হাসপাতালে ২০ বেডের একটা আইসোলেশন সেন্টার ডেডিকেটেড করেছি। অলরেডি সেখানে প্রস্তুতি নিয়েছি। সেখানেও আমাদের চিকিৎসকরা কাজ করছেন। তিনি বলেন, আগেও প্রাইভেট উদ্যোগে অনেক আইসোলেশন সেন্টার হয়েছে। সেভাবেও অনেককে অনুরোধ করছি।
এসময় চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, আমাদের ৫০টি শয্যা প্রস্তুত আছে। যদি ডিমান্ড বাড়ে পাশে যে ক্যাজুয়েলিটি ওয়ার্ড আছে খোনে শিফট করতে হবে। কোভিড রোগীর জন্য যা যা দরকার সব পর্যাপ্ত আছে। ঢাকা থেকে আগামীকাল (আজ) আরো ২০টি ভেন্টিলেটর আসবে।
এদিকে চমেক হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে মেয়র আকস্মিক একটি ফার্মেসিতে উপস্থিত হয়ে অতিরিক্ত দাম নেয়া হচ্ছে কীনা তা যাচাই করেন।
৩টি ভেন্টিলেটর বসছে জেনারেল হাসপাতালে :
চমেক হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে মেয়র আন্দরকিল্লা চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এসময় সময় মেয়র বলেন, এখানেও প্রস্তুতি বেশ ভালোই। ৩টি ভোন্টিলেটর আছে। হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকরাম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ইতোমধ্যে ৩টি ভেন্টিলেটর সেট করা হয়েছে। ২০টি আইসোলেশন বেড এবং ৫টি আইসিইউ বেড নিয়ে আমাদের কোভিড ইউনিট প্রস্তুত। তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আছে। এখন পর্যন্ত তিনজন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কোনো রোগীর আইসিইউ সেবা প্রয়োজন হলে, সেটা দেওয়া যাবে।ই