
অনলাইন ডেস্ক : জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের শেষ বৈঠকে এক অসাধারণ বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। সেখানে তিনি মূলত জুলাই সনদ প্রণয়ন, এর আইনি মর্যাদা এবং এর বাস্তবায়নে গণভোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথমে আইনজীবী শিশির মনিরকে অভিনন্দন জানান সাংবিধানিক বা অ-সাংবিধানিক আদেশ থেকে সরে আসার এবং “জেন জি”-এর আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করার মানসিকতার জন্য।
তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ’ তৈরির ভিত্তি হবে জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২, ২৫, ২৭ এবং ২৮ দফা। ২২ দফার মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সংবিধান এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে। ২৫ দফার লক্ষ্য হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা জাতীয় জীবনের কোনো ঘোষণাপত্রকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সাথে তুলনা করাকে সঠিক মনে করেন না, কারণ এটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে অবমূল্যায়ন করে। জুলাই সনদের ‘আদেশ’ এর আইনি অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি পরামর্শ দেন: অর্ডিন্যান্স বা সাংবিধানিক আদেশ নয়: এটি সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতির জারিকৃত অধ্যাদেশ হবে না, আবার যারা প্রস্তাব করেছিলেন তারা সরে আসায় এটি কনস্টিটিউশনাল অর্ডারও হবে না। তার মতে, জুলাই সনদটি সকল রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকারনামা এবং তাদের নোট অফ ডিসেন্ট সহ পরিষ্কারভাবে বর্ণিত ও স্বাক্ষরিত হওয়ার পর প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা যেতে পারে। এই প্রজ্ঞাপনই আদেশ হিসেবে গণ্য হবে।যে দলগুলো নোট অফ ডিসেন্ট দেবে, তারা তাদের নিজস্ব নির্বাচনী ইশতেহারে সেটি প্রকাশ করে জনগণের ম্যান্ডেট পেলে তার বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতে পারবে।
গণভোটের প্রয়োজনীয়তা ও মর্যাদা
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে জনগণের সার্বভৌম মতামত জানতে গণভোট আয়োজনের কথা বলেছেন সালাউদ্দিন।তিনি বলেন, যেহেতু বিদ্যমান ১৯৯১ সালের গণভোট আইনটি সংবিধান সংশোধনের সাথে সম্পর্কিত, তাই জুলাই সনদের বাস্তবায়নের জন্য আলাদা একটি নতুন আইন বা অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। সংবিধানে যেহেতু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোট আয়োজনের কোনো বাধা নেই, তাই নতুন আইনের মাধ্যমে জুলাই সনদের ওপর গণভোট আয়োজন করা সাংবিধানিকভাবে বৈধ হবে।
বিএনপির নেতা বলেন, গণভোটের মাধ্যমে প্রকাশিত মতামত হলো ‘জনগণের অভিপ্রায়’, যা সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে সকল ক্ষমতার উৎস। এটি পরবর্তী সংসদকে সনদের দফাগুলো গ্রহণে বাধ্য করবে, কারণ এটি কোনো সংসদের ক্ষমতা দ্বারা নয়, বরং জনগণের ইচ্ছা দ্বারা নির্ধারিত হচ্ছে।
“এই গণভোটের মাধ্যমে জনগণের গাঠনিক ক্ষমতা প্রকাশিত হবে, যা পরবর্তী সংসদকে জুলাই সনদের ঘোষিত দফাগুলো অবশ্যই গ্রহণ করতে বাধ্য করবে। তবে এর বাইরে সংসদ অন্য সংস্কারও আনতে পারবে।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, প্রথম আমি একটু স্বাগত জানাবো আমার ভাই জনাব শিশির মনিরকে। তিনি প্রথমে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন যে কনস্টিটিউশনাল অর্ডার অথবা এক্সট্রা কনস্টিটিউশনাল অর্ডার থেকে, তারা সরে এসছেন, সেজন্য আমি ধন্যবাদ জানাই। দ্বিতীয় নম্বর আমি ওয়েলকাম করি, ওনারা যে লাস্ট জেনারেশন জেন-জিকে ধারণ করার এবং নিজে পার্ট অফ দি জেন-জি হিসেবে ডিক্লেয়ার করার যে মানসিকতা, সেটাকেও আমি স্বাগত জানাই।তবে আমার ৬৫ বছর বয়সে আমি যদি বলি পার্ট অফ জেন-জি হয়তো সেটা আপনারা গ্রহণ করবেন না। কিন্তু মনের দিক থেকে আমি মনে করি আমাদের তারুণ্যের ভাবনাকে আমরা ধারণ করি এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা-আকাঙ্ক্ষা-প্রত্যাশাকে ধারণ করি এবং সেটা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের অবিরাম প্রচেষ্টা থাকবে।
তিনি বলেন, কমিশনের সকল সদস্যবৃন্দ দীর্ঘ অনেক মাস ধরে আমাদের সাথে সকলের সাথে যে আলোচনার ধৈর্য পোষণ করেছেন এবং এই একটা সমাপনী পর্যায়ে এসছেন সেজন্য আপনাদের প্রশংসা করি। আর জুলাই সনদ আদেশটা কি? এখান থেকেই শুরু করতে চাই। আমার ভাই জনাব হামিদুর রহমান আজাদ বলেছেন যে, জুলাই সনদ আদেশ প্রণয়ন জারি এবং তার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান এখান থেকেই শুরু করতে হচ্ছে। কারণ এখানে জনাব শিশির মনির বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের দফা ২২, ২৫, ২৭ এবং ২৮ কে অনুসরণ করি। আমরা জুলাই সনদটা তৈরি করতে পারবো। তো জুলাই সনদের ঘোষণাপত্রের ২২ এ যেটা বলা আছে যে, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধান ও সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে। তা আমরা সেই নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই সেই সংস্কার সাধনের চেষ্টা করছি। যাতে জাতি সবসময় একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে থাকে। আইন আনুক এবং সাংবিধানিক
প্রক্রিয়ার মধ্যেই থাকে। ভবিষ্যতে যাতে এটার কোন রকমের প্রশ্ন না উত্থাপন হয়। এবং সেই নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি বিবৃত হয়েছে দফা ২৫ এ জুলাই ঘোষণাপত্রের।
সেটায় আছে যে, সেহেতু বাংলাদেশের জনগণ যুক্তিসংত সময়ে আয়োজিত অবাধ-সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবে। ২৭ এ আমরা দেখেছি, জুলাই ঘোষণাপত্রের এই ঘোষণাকে আমরা সংবিধানের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে ধারণ করব এবং দফা ২৮ এ আছে যে, জনকগণের গণঅভ্যুত্থানের প্রকাশিত অভিপ্রায়কে অভিপ্রায় অনুযায়ী আমরা এই জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করছি। এখানে কোনটার সাথে কোনটাই সাংঘর্ষিক না। সবকিছুই নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অভিপ্রায় বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
“এগুলো হচ্ছে সব ঘোষণা। এই ঘোষণার সাথে কেউ কেউ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের তুলনা করতে চেয়েছেন। আমি নাম নেবো না। এবং তার মধ্য দিয়ে আমি মনে করি আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে অনেকটা খাটো করা হয়। একটা জাতির স্বাধীনতা। একটা জাতির মুক্তিযুদ্ধ। একটা জাতিকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যাওয়ার যে, ঘোষণাপত্র সেটার সাথে জাতীয় জীবনে পরবর্তীতে কোন ঘোষণাপত্রকে তুলনা করা সঠিক হবে না বলে আমি মনে করি এবং সেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিয়ে যে ক্ষমতা উৎসরিত হয়েছে তারা সবাই ছিল নির্বাচিত প্রতিনিধি এই ভূখণডের জন্য। যেহেতু জবরদস্তি একটা যুদ্ধের নিপতিত করেছিল আমাদেরকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেজন্য তারা নিজেদেরকে গণপরিষদ হিসেবে ঘোষণা করে এবং বৈধভাবে তারা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে এবং সেখান থেকে জাতি পরিচালনার জন্য আইনি ভিত্তি রচনা করেছিলেন। পরবর্তীতে সেটা সংবিধান রচনার মধ্য দিয়ে সেই ঘোষণাপত্রের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং সেইজন্যেই অত্যন্ত সচেতনভাবেই ১৯৭২ এ গৃহীত সেই সংবিধানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে কোন তফসিলে অথবা
সংবিধানের অংশে রাখা হয়নি। যদি রাখতে হতো তখনকার সংবিধান প্রণেতারা সেটা অবশ্যই বিবেচনা করতেন।
“এটা আমাদের স্মরণে রাখা উচিত। যেটা ২০১১ সনে যেটা পঞ্চদশ সংশোধনের মাধ্যমে তিনটি তফসিলকে ধারণ করা হয়েছে সেগুলোকে বেআইনী অথবা অসংবিধানিক ঘোষণার জন্য পঞ্চদশ সংশোধনীর চ্যালেঞ্জ করে যে রিট
হয়েছে সেখানে সামগ্রিকভাবে সেটা বাতিলের জন্য অবৈধ ঘোষণা করার জন্য এমবডি করা হয়েছে এবং সেটা মাননীয় হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, সেখানে বলেছে, ছয়টা দফা ছাড়া বাকি সমস্ত জিনিস পরবর্তী সংসদে নিষ্পত্তি হতে হবে। কারণ এগুলি রাজনৈতিক বিষয়। এখানেও জাতীয় সংসদকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এগুলো নিষ্পত্তি করার জন্য” বলেন তিনি।
সালাউদ্দিন বলেন, তারপরে আসলো এই জুলাই সনদটার আদেশটার স্ট্যাটাস কি হবে, এটার ঘোষণা কিভাবে হবে, প্রণয়ন কিভাবে হবে। আমার ভাই সঠিকভাবেই বলেছেন, যেহেতু আর্টিকেল ৯৩ অনুসারে অর্ডিনেন্স করার ক্ষমতা আছে রাষ্ট্রপতির সেটা আইনের বিষয়ে আইনের বিকল্প হিসেবে অধ্যাদেশ জারি করা হয় সংসদের অনুপস্থিতিতে, সেটা এই জুলাই সনদ হবে না। যেহেতু কনস্টিটিউশনাল অর্ডার প্রণয়ন থেকে আমরা সবাই সরে এসছি। যারা প্রস্তাব করেছিলেন তারাও সরে এসছেন। সুতরাং আমি কনস্টিটিউশন অর্ডারটার বিষয়ে আর কথা বলে সময়ক্ষেপণ করতে চাই না।
“তৃতীয় প্রশ্ন হলো তাহলে এই আদেশটার স্ট্যাটাসটা কি হবে? লিগাল স্ট্যাটাস হিসেবে আমরা এই জুলাই সনদকে কি স্ট্যাটাস দিতে পারি সেটার। আমার পরামর্শ মতে বা আমার সাজেশন মতে জুলাই সনদ প্রণীত হওয়ার পর
অঙ্গীকারনামা সহ উইথ নোট অফ ডিসেন্ট এক্সপ্রেসলি ডেস্ক্রাইব করে কোন পার্টি কিভাবে কবে নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছে একদম পরিষ্কারভাবে বর্ণিত থাকার পরে সেটা স্বাক্ষরিত হবে এবং অঙ্গীকারনামায় একটা অনুচ্ছেদ যুক্ত করতে হবে যে, দলগুলো যে নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছে, সেটা তারা নিজস্ব নির্বাচনী ইশতেহারে প্রকাশ করে, যদি জনগণের ম্যান্ডেট প্রাপ্ত হয় তাহলে সেই দলগুলো সেভাবে সেই ঘোষণাপত্র নোট অব ডিসেন্ট অংশ বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
সেই টোটাল দফা যতটাই হোক ৮৪ হোক ৮৬ হোক ৭০ টা হোক, যাই হোক অঙ্গীকারনামা সহ সেটা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা যায় সেটাই আদেশ হতে পারে। সেটা গ্যাজেট নোটিফিকেশনে জারি করা যাবে সেটা আদেশ হতে পারে এবং সেই আদেশটা যদি গণভোটের জন্য যেহেতু আমরা বিবেচনা করছি জনগণ সেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে আছে কিনা- হ্যাঁ বা না- এই ভোটের জন্য যখন আমরা জনগণের সার্বভৌম এখতিয়ার মতামতটার জন্য যাব তখন সেটা কিভাবে যাওয়া যায় এই প্রজ্ঞাপনের শিরোনাম দিয়ে প্রশ্নসহ
যদি আমরা গণভোট অধ্যাদেশ নতুনভাবে জার জারি করি বা সরকার করে তখন সেখানে কি থাকবে?
এখন এই আইনে পরিবর্তন আসলে একটু জটিলতা সৃষ্টি হবে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা আরো বলেন, কারণ এই আইনটাই করা হয়েছিল দ্বাদশ সংশোধনে গৃহীত হওয়ার পরে। দ্বাদশ সংশোধনের পক্ষে জনগণ সেই আর্টিকেলগুলোতে যেহেতু চেঞ্জ আসছিল সেজন্য তার অনুমোদন করে কি করে না? এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা সংবিধান সংশোধনের জন্য মৌলিক প্রশ্নগুলি প্রস্তাব করছি জনগণের কাছে, সংশোধিত হয়নি। সেজন্য এই আইনটা এখানে সংশোধন করে আবার গণভোটের জন্য আইন সংশোধিত করাটা সঠিক হবে না। এজন্য আলাদা একটা আইন করতে হবে অর্ডিন্যান্সের মধ্য দিয়ে। সেই আইনের শিরোনাম হবে এরকম যে, জুলাই সনদ ২০২৫ প্রণীত হয়েছে রাজনৈতিক দলসমূহ অঙ্গীকারনামা সহ নোট অফ ডিসেন্ট সহ
স্বাক্ষর করেছে।
এই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে জনগণ আছে কি নাই সে উদ্দেশ্যে একটি গণভোট আয়োজন করা প্রয়োজন। এই আইনের নাম অভিহিত হবে জুলাই জাতীয় সনদ আদেশ প্রজ্ঞাপন মতে যা হয়েছে সেটা বাস্তবায়নের জন্য গণভোট আয়োজনের নিমিত্তে প্রণীত এই আইন। সেই আইনের অধীনে যে সমস্ত ধারা উপধারা প্রক্রিয়া বিভিন্ন কিছু আছে সেটা বিদ্যমান যে সমস্ত আইন আছে ভোট পরিচালনার জন্য আরপিও থেকেও নেয়া যায়, বিধি প্রণয়ন করা যায় অথবা এই উল্লেখিত ১৯৯১ সালের গণভোট আইন থেকেও সেই অংশগুলো ওখানে সন্নিবেশিত করা যায়। তবে এটা একটি নতুন আইন হতে হবে তার মধ্য দিয়ে গণভোট আয়োজন করা যায়। এখানে কনস্টিটিউশনালিটি আসবে না এজন্য যে, আমরা যেহেতু জানি সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুসারে যে সমস্ত আর্টিকেলে চেঞ্জ আসলে গণভোটের একটা ম্যান্ডেটরি প্রভিশন আছে যে, জনগণের কাছে যেতে হবে, গণভোটের জন্য সেই বিধানটা এখন এখানে কার্যকর হচ্ছে না।
“আমরা সেজন্যই বলেছি অনেকে এটা মিসইন্টারপ্রিট করেছে। পত্রিকাতেও দেখেছি যে, কোন জাতীয় ইস্যুতে সরকার গণভোট আয়োজনের প্রয়োজন মনে করলে সেই বিষয়ে গণভোট আয়োজন করা যাবে না এরকম কোন বিধান সংবিধানে নাই। সুতরাং এখানে কনস্টিটিউশনালিটি আসবে না। এখন কথা থাকলো যে এই প্রজ্ঞাপন বা গ্যাজেট এটার স্ট্যাটাস কি হবে? স্ট্যাটাস যা হবে ইট ইস বিলো অর্ডিনান্স। ইট ইস নট এনেক্মেন্ট অথবা এটা কোন রকমের কনস্টেশন অর্ডার নয়। তা এখন যদি আমরা মনে করি যদি এটা আইনও না হয়, অর্ডিনেন্সও না হয়, কনস্টেশন অর্ডারও না হয় তাইলে এ প্রজ্ঞাপনের জন্য আমরা গণভোটে যাব কিনা? যাওয়া যায়। কারণ জাতীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেকোন সনদ গ্যাজেট নোটিফিকেশন হবে প্রজ্ঞাপনের মর্যাদা দেয়া হবে তার ভিত্তিতে যদি আমি গণভোট আইন করি সেটা নাজায়েজ কিছু না। সেই আইন গণভোটের জন্য আইন হবে।
“এখন প্রশ্ন থাকে সেই গণভোটটা যখন হবে তখন সেই গণভোটের মতামত কি হবে? গণভোটের মতামত যেটা আসবে সেটার মর্যাদা কি হবে? আমি দুই একটা পত্রিকা তো প্রফেসর আলী রিয়াজেরও একটা সাক্ষাৎকারের মধ্যে দেখেছি। তিনি বলেছেন যে, গণভোটে যে মতামতটা আসবে সেটা হচ্ছে জনগণের অভিমত। এটা পরবর্তী পার্লামেন্টকে বাইন্ড করবে কিনা সেটার একটা প্রশ্ন আছে। আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যেটুকু বুঝি জনগণের অভিমত প্রকাশিত হয় দুই একটা পদ্ধতিতে। একটা হচ্ছে বিপ্লব আরেকটা হচ্ছে গণঅভ্যুত্থান। জনগণের অভিপ্রায় আরেকটা হচ্ছে ভোট। তো গণভোটও একটা ভোট। এবং ভোটের মধ্য দিয়ে জনগণ যেটা অভিমত প্রকাশ করে সেটাই জনগণের অভিপ্রায় এবং বিদ্যমান সংবিধানের আর্টিকেল সেভেন অনুসারে রিপাবলিকের হচ্ছে যে, জনগণ মানে প্রজাতন্ত্রের সর্বক্ষমতার
মালিক অথবা উৎস প্রজাতন্ত্রের রিপাবলিকের হচ্ছে জনগণ এবং তাদের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিকে চূড়ান্ত আইন হিসেবে কনস্টিটিউশনকে বর্ণনা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যদি তাদের অভিপ্রায় এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা যেটা সেটাকে যদি অভিমত হিসেবে আমরা ধরে নেই ভোটের মাধ্যমে তার উপরে কোন আইনি মর্যাদা নাই তখন সেটা আমাদের উপরে বাইন্ডিং হবে। প্রশ্ন থাকলো এক কনস্টিটিউশন, এক পার্লামেন্ট কি পরবর্তী সংসদের ক্ষমতা নির্ধারণ করে দিতে পারে কিনা বা রাইট কাটেল করতে পারে না? অবশ্যই না। কিন্তু আমাদের এখানে বুঝতে হবে এখানে কোন পার্লামেন্ট পরবর্তী পার্লামেন্টেকোন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে বাধ্য করছে না। এটা হচ্ছে পিপলস উইল কনস্টিটিউশনে ধারণ করার জন্য তাদের মতামত দিচ্ছে পরবর্তী পার্লামেন্টকে। সুতরাং এখানে জনগণের অভিপ্রায় চূড়ান্ত।
“তাইলে আমরা এখন আসি সেই গণভোটটা কখন হবে কিভাবে হবে এবং তার গাঠনিক ক্ষমতা কি হবে এই কঠিন বাংলাটা আমি অবশ্য কম বুঝি যে, গাঠনিক ক্ষমতা এইখানে প্রশ্নটা থেকে যায় যে, গাঠনিক ক্ষমতা বলতে হয় এটা আসলে অনেক বিদ্বানজনরা ব্যবহার করেন গাঠনিক ক্ষমতাটা হচ্ছে কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার। এই কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ারটা সবসময়
কনস্টিটিউয়েন্ট অসেম্বলির থাকতে হবে এমন তো কথা নাই। যেখানে যে রিপাবলিকের সকল ক্ষমতার উৎস যদি জনগণ হয় সেটাই কনস্টিটিউমেন্ট পাওয়ার ডিরাইভ করবে ফ্রম দেম। সেই ডিরাইভটা করছে গণভোটের মাধ্যমে। তাইলে এই কনস্টিটিউট পাওয়ারটা কে দিচ্ছে? এই যে এখানে গৃহীত জুলাই জাতীয় সনদের মধ্যে যে গাঠনিক কাঠামোটা দেয়া হচ্ছে জনগণ এপ্রুভ করলে সেটা ইমপোজ করা বাস্তবায়ন করা এটাই গাঠনিক ক্ষমতা। সেজন্য পরবর্তী পার্লামেন্টকে আমার ভাই আক্তাররা বলছে যে, দ্বৈত ক্ষমতা দিতে হবে বা আমার ভাই শিশির বলছে যে, দ্বৈত ক্ষমতা দিতে হব। দ্বৈত ক্ষমতা তো এখানে দেয়া হয়ে গেছে যদি গণভোটটা হয় তার মানে এর যে ঘোষিত দফাগুলো জুলাই জাতীয় সনদের সেটা জনগণ ম্যান্ডেটরি করছে সেই নেক্সট পার্লামেন্টকে যে এগুলো অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে এর বাইরে
যে নেক্সট পার্লামেন্ট আর কোন সংস্কার করতে পারবো না তা নয়। কিন্তু এগুলো নিতেই হবে যে, এগুলো ধারণ করতে হবে। এটাই হচ্ছে কনস্টিটিউট পাওয়ার। তাইলে গাঠনিক ক্ষমতাটা হলো সে গণভোটের মাধ্যমে হল। এরপরে রেগুলার পার্লামেন্ট হিসেবে সেই পার্লামেন্ট রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আইন প্রণয়ন করবে। প্রয়োজনে সংবিধানে আরো সংশোধনী আনবে। অবশ্যই পার্লামেন্টে আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে জনমতের নিয়ে এবং সমাজের চাহিদা অনুসারে বা রাজনৈতিক অঙ্গীকার অনুসারে।কেউ কেউ বলেছেন যে, প্রথম অধিবেশনে এটা গ্রহণ করতে হবে।ই