
দুই কর্মীকে হত্যা, সেলিমের পঙ্গু জীবন
নিজস্ব প্রতিনিধি : বিএনপির আতঙ্ক নিষ্ঠুর এক পুলিশ অফিসারের নাম নেয়ামত উল্লাহ। নির্যাতন হয়রানিতে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষও তার হাত থেকে রেহাই পায়নি। বিএনপি’র কর্মীদের পিটিয়ে হাত, পা অবশ করে দিত। পটিয়া থানায় ওসি’র দায়িত্বে থাকাকালে বিএনপি’র দুইকর্মী তার হাতে প্রাণ হারায়। সেলিম নামের এক বিএনপি নেতা গুলিতে ডান হাত হারিয়ে এখন পঙ্গু। তার চলছে দুর্বিষহ জীবন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনামকে গুলি করে হত্যা করতে চাইলেও সে কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যায়। চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানা ও কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) দায়িত্ব থাকাকালে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের দমিয়ে সে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার থেকে পিপিএম পুরস্কার পায়। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি অধিবাসী তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনার আপন লোক ছিলেন ওসি নেয়ামতউল্লাহ। নুরে আলম মিনার নির্দেশেই বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের উপর অমানসিক নির্যাতন চালাত পুলিশ কর্মকর্তা নেয়ামত উল্লাহ।
পঙ্গুত্ব বরণ করা পটিয়া উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম জানান, ২০১৮ সালে ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলার ভাটিখাইন মির্জা আলী লেদু শাহ্্ কেন্দ্রে তিনি ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্ট ছিলেন। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম। নৌকার প্রার্থী ছিলেন সামশুল হক চৌধুরী। সেলিম বলেন, নির্বাচন চলাকালীন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কেন্দ্র থেকে বিএনপির সকল এজেন্টকে বের করে দেয়। এসময় আওয়ামীলীগের ঘনিষ্ট সহচর তৎকালীন পটিয়া থানার ওসি নেয়ামত উল্লাহ’র নির্দেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালাতে থাকে। এসময় পুলিশ আমাকে গুলি করলে গুলিতে আমার ডান হাতের বাহু ঝাঁঝরা হয়ে যায়। আমাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। উন্নত চিকিৎসা করতে না পারায় বিগত ৭ বৎসর ধরে ডান হাতের কয়েকটা ছররা গুলি এখনও বের না হওয়ায় হাতটি অবশ হয়ে গেছে। কোনো কাজকর্ম করতে না পারায় এখন আমার দুর্বিষহ জীবন যাচ্ছে।
বিএনপি নেতা এনামুল হক এনাম জানান, ‘২০১৮ সালে নির্বাচন চলাকালীন ওসি নেয়ামত উল্লাহ নৌকার পক্ষে ভোট কেন্দ্র দখল করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। তার নির্দেশনা মতে জিরি ইউনিয়নের মালিয়ারা একটি ভোট কেন্দ্রের ভেতর থেকে বিএনপি’র এজেন্ট বের করে দিলে বিএনপি’র সমর্থকেরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এসময় ওসি নেয়ামতের নির্দেশে পুলিশ এলোপাতাড়ী গুলি বর্ষণ করে। এতে জিরি ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারী আবুল কাশেমের পুত্র সাদেক গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। নির্বাচনের দিন দুপুরে কুসুমপুরার গোরণখাইন ভোটকেন্দ্র দখলের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে যুবলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দিল মোহাম্মদ নামের এক যুবলীগ কর্মী নিহত হয়। হত্যাকা-ের দুইটি মামলায় ওসি নেয়ামত ধানের শীষের প্রার্থী এনামুল হক এনামকে ১ নং আসামি করে অর্ধশত বিএনপি নেতাকর্মীকে হত্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়।
২০১৩ সালে পটিয়া থানার ওসি (তদন্ত) হিসেবে নেয়ামত উল্লাহ যোগদান করেন। ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি’র অবরোধ চলাকালে বিএনপি নেতা এনামুল হক এনাম নেতাকর্মীদের নিয়ে শান্তির হাটে জমায়েত হলে ওসি নেয়ামত বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। এসময় গুলি ছুঁড়লে এনামের ডান হাতের পাশে গুলির ছররা লাগে। তিনি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। এছাড়াও উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের হুলাইন গ্রামে কানা কামাল নামের এক বিএনপি কর্মীকে মাদকের অজুহাত দিয়ে ক্রস ফায়ারে হত্যা করে। দুই দফায় নেয়ামত উল্লাহ ওসি (তদন্ত) থাকার পর ২০১৭ সালে ওসি হিসেবে পটিয়া থানায় যোগদান করে। তখন থেকেই বিএনপিসহ জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের দমন অভিযানে নামে সে। একের পর এক গায়েবী মামলাসহ কারণে-অকারণে ১২/১৩টি রাজনৈতিক মামলা রেকর্ড করে ওসি নেয়ামত উল্লাহ। মামলা বাণিজ্য ও গ্রেফতার বাণিজ্য চালিয়ে সে কোটি কোটি টাকা লোকজন থেকে হাতিয়ে নেয়। তার সাথে সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করেন আ’লীগ অনুসারী এস.আই মোস্তাফা আল মামুুন। সে বর্তমানে রাউজান থানায় রয়েছে।
পটিয়া পৌর জামায়াতের আমির মাস্টার সেলিম উদ্দীন জানান, সাবেক আমির মুকিবুল ইসলাম ফারুক তার পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড নিজ বাড়িতে সামাজিক পঞ্চায়েত সভা ডাকলে ওসি নেয়ামত খবর পেয়ে ফারুকসহ এলাকার ৮/১০ জন লোককে ধরে নিয়ে আসে। তখন ফারুক বলে, আমাকে জেলে দিয়ে অন্যদের ছেড়ে দেন। তার কথামতো ফারুককে নাশকতা মামলায় জড়িয়ে জেলে প্রেরণ করে। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ফারুক মানসিক যন্ত্রনায় অসুস্থ হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি অধিবাসী তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনার আপন লোক ছিলেন ওসি নেয়ামতউল্লাহ। পটিয়া থানায় আড়াই বছর দায়িত্ব পালনের পর বোয়ালখালী থানায় ৭ মাস দায়িত্ব থেকে ডিবিতে চলে যায়। পরে নুরে আলম মিনা চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডি আই জি হয়ে আসার পর নেয়ামতউল্লাহ মিনার আশীর্বাদে সিএমপির খুলশি থানার ওসির পোস্টিং নেয়। ২০২৪ সালের আমি-ডামি নির্বাচনে পটিয়ার নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর পক্ষে ভূমিকা রাখায় নির্বাচনের পর মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী খুলশী থানায় গিয়ে ওসি নেয়ামতকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। থানায় গিয়ে ওসিকে এমপির ফুল বিষয়টি নিয়ে তখন মিডিয়ায় প্রচার হলে ব্যাপক সমলোচনা হয়।
পটিয়া পৌরসভা বিএনপি সাবেক আহবায়ক নূরুল ইসলাম জানান, আ.লীগ দুঃশাসন চলাকালে কেউ মাঠে ছিল না তখন আমাদের সাথে নিয়ে বিএনপির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম মাঠে নামেন। এতে তাকে দমনে ওসি নেয়ামত নিষ্টুর আচরণ করেন। নেতাকর্মীদের মামলা হামলা সামাল দিতে গিয়ে এনামের আর্থিক মানসিক অনেক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে নেয়ামতউল্লাহ কুমিল্লা পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে রয়েছে। সেখান থেকে কতিপয় বি এনপি নেতার সাথে লবিং করে পুনরায় ভালো অবস্থানে ফেরার চেষ্টা করছে বলে সূত্র জানিয়েছে।ই








