এমপি-মন্ত্রীদের টাকার পাহাড়

নির্বাচনের হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ

খবর ডেস্ক :
এ যেন রুপকথার গল্পের আলাদিনের চেরাগের কাহিনী। ৫ বছর থেকে ১৫ বছরের মধ্যে মন্ত্রী-এমপিরা অর্থসম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। যারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের বেশির ভাগেরই অর্থ সম্পদ দ্বিগুণ থেকে শতগুণ বেড়ে গেছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, টাকার পাহাড়ে ঘুমান মন্ত্রী এমপিরা। অথচ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সরকার কয়েকবার মন্ত্রী এমপিদের সম্পদের হিসাব জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। সময়সীমা বেঁধে দিয়ে গণভবনে মন্ত্রী এমপিদের সম্পদের হিসাব জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু দু’একজন ছাড়া কেউ সম্পদের হিসাব জমা দেননি। ফলে গত কয়েক বছরে দেশের সাধারণ মানুষের অর্থ-সম্পদ কমলেও মন্ত্রী এমপিদের সম্পদ বেড়েছে কয়েকগুণ।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের হলফনামায় সরকারের এমপি-মন্ত্রী -প্রতিমন্ত্রী এবং পাশাপাশি স্বতন্ত্রপ্রার্থীরাও অনেক তথ্য গোপন করছেন। বর্তমান সরকারে এমপি-মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সম্পদ, আয় এবং অর্থ গত ১৫ বছরে অনেক বেড়ে গেছে। প্রার্থীরা শুধু তাই নয়, নিজেদের সম্পদ ও অর্থ বাড়ার পাশাপাশি সম্পদ বেড়েছে তাদের স্ত্রীদের। এ ছাড়া তাদের মধ্যে অনেকের রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি ও বাড়ি। নির্বাচনের শুরু হয়েছে সরকার দলীয় প্রার্থীদের এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পাল্টা পাল্টি অভিযোগ। ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক। এমন অভিযোগ করে নির্বাচন কমিশনে প্রার্থিতা বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ. কে. আজাদ। গত শুক্রবার তার পক্ষে আইনজীবী মো. গোলাম কিবরিয়া আপিল আবেদন জমা দেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক। মনোনয়ন বাছাইয়ের সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী এ. কে. আজাদ এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্তসহ লিখিত অভিযোগ করা সত্ত্বেও রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম হকের মনোনয়নপত্র বাতিল না করে বৈধ ঘোষণা করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার এই আদেশের বিরুদ্ধে আজ আপিল দায়ের করা হয়েছে। গত ১৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৩ গুণের বেশি ও তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২ গুণের বেশি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরর, ঢাকা-১৩ আসনের প্রার্থী প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নগদ টাকা বেড়েছে, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের ৩৭ গুণ আয় বেড়েছে, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদের আয় গত পাঁচ বছরে কমেছে, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর বার্ষিক আয় বেড়েছে ৭ গুণ, পরিবারে গাড়ি বেড়েছে। আবার অনেক প্রার্থীরা কোটিপতি থাকলেও দেখাচ্ছেন ব্যাংক ঋণী। বর্তমান সংসদ সদস্যদের সম্পদ, আয় এবং অর্থ গত ৫ বছরে অনেক বেড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, নিজেদের সম্পদ ও অর্থ বাড়ার পাশাপাশি সম্পদ বেড়েছে তাদের স্ত্রীদেরও। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের গত ১৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৩ গুণের বেশি ও তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২ গুণের বেশি বেশি। এই সময়ে ও তার স্ত্রীর সম্পদ একত্রে বেড়েছে ৬ গুণের বেশি। এ সময়ে তাদের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা এবং সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী বিনিয়োগ বেড়েছে। নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ওবায়দুল কাদেরের অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫ টাকা। তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ৪৮ লাখ ৮১ হাজার ৫২২ টাকা। ১৫ বছর পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালে ওবায়দুল কাদেরের অস্থাবর সম্পত্তি ৩ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯৮ টাকা এবং তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ১ কোটি ২৮ লাখ ৪২ হাজার ৪৬৪ টাকা। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে কাদেরের অস্থাবর সম্পদের প্রায় সবকিছুই জব্দ ছিল। ব্যাংকে তার জমা ছিল প্রায় ৪ লাখ ৮৮ হাজার এবং স্ত্রীর নামে ছিল সাড়ে ৬৯ হাজার টাকা। দুটি হিসাবই জব্দ করা ছিল। বর্তমানে কাদেরের ব্যাংকে জমার পরিমাণ প্রায় ৭৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা আছে প্রায় ৫১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। নিজের কাছে নগদ ৮০ হাজার ও স্ত্রীর কাছে ৭০ হাজার টাকা রয়েছে। গত ১৫ বছর আগে ওবায়দুল কাদেরের বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ছিল সাড়ে ১৫ লাখ টাকা। স্ত্রীর বিনিয়োগ ছিল ৪২ লাখ টাকা। এসব বিনিয়োগও জব্দ ছিল। বর্তমানে কাদেরের সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ আছে প্রায় ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে বিনিয়োগ আছে ৭৩ লাখ টাকা। ১৫ বছর আগে ওবায়দুল কাদেরের নিজের কোনো গাড়ি ছিল না। বর্তমানে ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গাড়ি রয়েছে তার।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। নৌকার এ প্রার্থী তার হলফনামায় ব্যাংক, স্ত্রী-কন্যা ও ব্যবসায়িক দায়ের তথ্য জানিয়েছেন। এতে নানক উল্লেখ করেন, স্ত্রীর কাছে ৮৮ লাখ টাকা এবং কন্যার কাছে এক কোটি ৫৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দেনা রয়েছে তার। ঢাকা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করা হলফনামায় নানক উল্লেখ করেন, অগ্রণী ব্যাংক ও ইউসিবিএলে তার ঋণের পরিমাণ ২ কোটি ৮৬ লাখ ১৯ টাকা। এরমধ্যে অগ্রণী ব্যাংকে তার হোম লোনের পরিমাণ ২ কোটি ৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দাখিল করা হফলনামায় রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ বেড়েছে তিন গুণের বেশি। এবার তার দাখিলকৃত হলফনামায় দেখা গেছে, তার নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ ২১ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ১৭৩ টাকা। অথচ ৫ বছর আগে এই টাকার পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৭০৬ টাকা। স্ত্রী ও দুই ছেলের নগদ ও ব্যাংক হিসাবে রয়েছে ২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার, ৯৮৫ টাকা। এমপি শাহরিয়ার আলমের বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ারের মাধ্যমে বিনিয়োগ রয়েছে ৬৬ কোটি ৪১ লাখ ৩২ হাজার ৭০০ টাকা। এ ছাড়া তার সঞ্চয়পত্রে আমানতে বিনিয়োগ রয়েছে ৩০ লাখ টাকা। নিজের রয়েছে ১ কোটি ১লাখ ৩ হাজার ১০০ টাকা মূল্যের লাক্সারি একটি কার। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ১ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার ৫৭৫ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি। নিজের নামে ৭৫ হাজার টাকা সমমূল্যের স্বর্ণ এবং স্ত্রীর নামে ১৭৫ ভরি স্বর্ণ (যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা) রয়েছে। শাহরিয়ার আলমের স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে- ১.৭৯৬৫ একর কৃষি জমি এবং অকৃষি জমির পরিমাণ ১৫.৩৯৪ একর। এমপি শাহরিয়ারের ঢাকার গুলশানে রয়েছে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট এবং নিজ এলাকা বাঘার আড়ানিতে রয়েছে চারতলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি। গত পাঁচ বছরে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কর্নেল অব. জাহিদ ফারুক শামীমের আয় বেড়েছে ৩৭ গুণ। একই সময়ে তার স্ত্রী দুই কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৪ টাকার মালিক হয়েছেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো জমা উল্লেখ করেননি জাহিদ ফারুক শামীম। একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে হলফনামায় দেওয়া তথ্য থেকে এ হিসাব পাওয়া গেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় জাহিদ ফারুক তার স্ত্রীর নামে কোনো সম্পদ উল্লেখ করেননি। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্ত্রীর নামে দুই কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৫ টাকা থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমানের আয় ১০ বছরে বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি। কিন্তু এই সময়ে তাঁর সম্পদের পরিমাণ কমে গেছে। অন্যদিকে আগে এনামুরের স্ত্রীর নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ থাকলেও এখন কিছুর উল্লেখ নেই। নির্বাচন কমিশনে এনামুর রহমানের জমা দেওয়া দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা জমা দেওয়া অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের বার্ষিক আয়ের উৎস কমে হয়েছে দুটি শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত (এফডিআর ও ব্যাংক থেকে সুদ) এবং চাকরি (প্রতিমন্ত্রীর সম্মানী ভাতা)। খাত কমলেও এখন তাঁর আয় আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে বছরে ৩৭ লাখ ৮৯ হাজার টাকা; অর্থাৎ এক দশকের ব্যবধানে তাঁর আয় বছরে পাঁচ গুণের বেশি বেড়েছে। এক দশকে আয় বাড়লেও এনামুর রহমানের মোট সম্পদ কমেছে। গত ১৫ বছর ধরে ঢাকা–১৫ আসনের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার। এ সময়ে তাঁর নামে থাকা ২১টি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। গত ১৫ বছরে তাঁর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে সাত গুণের বেশি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারে শিল্প প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা কামাল আহমেদের বার্ষিক আয় এই দেড় দশকে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে কামাল আহমেদ মজুমদারের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ১০ কোটি ১৫ লাখ টাকা সমমূল্যের। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তাঁর অস্থাবর সম্পদ ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা সমমূল্যের। এ সময়ে নগদ অর্থ খুব বেশি বাড়েনি। বন্ড, ঋণপত্র ও স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগ বেড়েছে। বর্তমানে এই খাতে ২ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ রয়েছে কামাল আহমেদের। এবারের হলফনামায় বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেলের আর্থিক মূল্য ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকার বেশি দেখানো হয়েছে। ১৫ বছর আগে এ খাতের সম্পদ ছিল ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে কামরুল ইসলামের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৪৭ হাজার ৪১১ টাকায়। অর্থাৎ ১৫ বছরে তাঁর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৫৫ গুণ। একই সময়ের ব্যবধানে আয় বেড়েছে ২৮ গুণ। কামরুল ইসলাম বর্তমানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তিনি প্রথম সংসদ সদস্য হন ২০০৮ সালে ঢাকা-২ আসনে। তখন তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকার বেশি। ২০০৮ সালে কামরুলের কোনো গাড়ি ছিল না। এখন তাঁর দুটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি রয়েছে। হলফনামায় গাড়ি দুটির দাম উল্লেখ করা হয়েছে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার ৪৬২ টাকা। এর মধ্যে একটি গাড়ির মালিক হন ২০১৮ সালের আগে, যা একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন। ১৫ বছর আগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কামরুলের ছিল ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা আর তাঁর স্ত্রীর নামে ছিল ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই কোটি টাকার বেশি।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদের আয় গত পাঁচ বছরে কমেছে। তবে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ। তাঁর স্ত্রীর ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। তবে ১০ বছর আগে ফিরোজ রশীদের স্বর্ণালংকার ও আসবাবের যে মূল্য ছিল, তা একই রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এবার জাতীয় পার্টি থেকে ঢাকা–৬ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। আগের নির্বাচনগুলোর হলফনামার সঙ্গে এবারের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে ফিরোজ রশীদের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২ গুণের বেশি। স্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। তাঁর স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় সাত গুণ এবং স্থাবর সম্পদ বেড়েছে দুই গুণের বেশি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, সে সময় ফিরোজ রশীদের ২০ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার ও ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার আসবাব ছিল।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নগদ টাকা বেড়েছে। গত এক দশকে তাঁর নিজের নগদ টাকা বেড়েছে ১৭ গুণ। আর একই সময়ে স্ত্রীর নগদ টাকা বেড়েছে ১৬ গুণ। নাছিমের নগদ টাকা ৪৪ লাখ ৪৫ হাজার থেকে বেড়ে এখন ৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা হয়েছে। আর স্ত্রীর নগদ টাকা ১৮ লাখ ৯৬ হাজার থেকে বেড়ে তিন কোটি চার লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। দশম ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য বাহাউদ্দিন নাছিমের দাখিল করা হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন নাছিম। সম্পদের বিবরণীতে নাছিম জানিয়েছেন, স্থায়ী আমানত হিসেবে ব্যাংকে তাঁর জমা আছে ৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আগে এটি ছিল ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ১০ বছর আগে তাঁর স্ত্রীর নামে আমানত হিসেবে জমা ছিল ৩১ হাজার ২১৫ টাকা। এখন জমা আছে দেড় কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে নাছিমের বিনিয়োগ আছে ১১ কোটি টাকার বেশি। ১০ বছর আগে এ খাতে তাঁর বিনিয়োগ ছিল ৭ কোটি ৩২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। তবে বছরে আয় বেশি বাড়েনি পেশাগতভাবে ব্যবসায়ী এ নেতার। রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি বাদশা। এই আসনে পরপর তৃতীয় মেয়াদ আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য হন বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। গত তৃতীয় মেয়াদে এমপি বাদশাও স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ ও নগদ অর্থে টাকার কুমির বনে গেছেন। শুধু গত ২০১৮ সালের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নগদ ও ব্যাংক মিলে অর্থ ছিল ৪১ লাখ ১৬ হাজার ৪৮৬ টাকা। এ ছাড়াও স্ত্রীর নগদ টাকা ও সেভিংস মিলে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। দুটি গাড়ির দাম দেখানো হয় ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। খন্দকার মার্কেট ও উত্তরায় ৫ কাঠা জমিও নিয়েছেন তিনি। পাঁচ বছরে বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথের বার্ষিক আয় বেড়েছে মাত্র সাড়ে সাত লাখ টাকা। একই সময়ে তাঁর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তাঁর আট লাখ টাকা ঋণ থাকলেও বর্তমানে তাঁর কোনো দায়দেনা নেই।

গোলাপের আগের হলফনামা অনুযায়ী, এখন তার একটি টয়োটা হ্যারিয়ার জিপ রয়েছে; যার বাজারমূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৯০ লাখ ৬৪ হাজার ২৪৭ টাকা। এমপি হওয়ার আগে তার কোনো গাড়ি ছিলো না। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আব্দুস সোবহান গোলাপের নগদ অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে পাঁচ বছরের ব্যবধানে। কিনেছেন কোটি টাকার বিলাসবহুল গাড়ি; সঙ্গে বেড়েছে স্ত্রীর অর্থ। পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালের হলফনামায় গোলাপ নগদ টাকার ঘরে নিজের নামে ৭৯ লাখ ৬৫ হাজার ২৬৬ টাকা এবং স্ত্রীর গুলশান আরার নামে ১ কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ১৩১ টাকা রয়েছে উল্লেখ করেছিলেন। সে অনুযায়ী গোলাপের নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৪ দশমিক ৩১ গুণ।

মন্তব্য করুন