♦ চট্টগ্রামে প্রতি মাসে তালাকের ঘটনা ঘটছে ৫২০টি ♦ বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ আবেদন করা হয় স্ত্রীর পক্ষ থেকে সমঝোতার মাধ্যমে সংসার টিকে যাওয়ার ঘটনা মাত্র এক শতাংশ
নিজস্ব প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম মহানগরের ৪১টি ওয়ার্ডে গত বছর তালাকের আবেদন জমা পড়ে ৬ হাজার ৩৮৫টি। এর মধ্যে আবেদন প্রত্যাহার করা হয় ১৪৭টি। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তালাক কার্যকর হয় ৬ হাজার ২৩৮টি। প্রতি মাসে গড়ে তালাক কার্যকর হয়েছে ৫২০টি।
সমাজ ও আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামাজিক-ধর্মীয় অবক্ষয় ও নৈতিক বিপর্যয়ের কারণে দিন দিন তালাকের ঘটনা বাড়ছে। তালাকের চিত্রটি সামাজিক অবক্ষয় তলানিতে পৌঁছার বার্তা দিচ্ছে বলে অভিমত তাদের।
জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) পারিবারিক আদালতে আবেদনের মাধ্যমে তালাক কার্যকর করতে হয়। বর্তমানে চসিকে দুটি আদালত আছে।
গত বছর প্রথম আদালতে তালাকের আবেদন জমা পড়ে ২ হাজার ৬৪৮টি, এর মধ্যে প্রত্যাহার করা হয় ৬৪টি। দ্বিতীয় আদালতে আবেদন জমা পড়ে ৩ হাজার ৭৩৭টি, এর মধ্যে প্রত্যাহার হয় ৮৩টি। ২০২৩ সালে প্রথম আদালতে আবেদন জমা পড়ে ২ হাজার ২৫৯টি, প্রত্যাহার করা হয় ৬৫টি। দ্বিতীয় আদালতে আবেদন জমা পড়ে ২ হাজার ৩৩৭টি, প্রত্যাহার করা হয় ৬৫টি।
২০২২ সালে প্রথম আদালতে তালাকের আবেদন জমা পড়ে ২ হাজার ৫৩৪টি, প্রত্যাহার করা হয় ৮১টি এবং দ্বিতীয় আদালতে আবেদন জমা পড়ে ৩ হাজার ৪৪২টি, প্রত্যাহার করা হয় ৭৮টি।
বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিচ্ছেদের অধিকাংশ আবেদন স্ত্রীর পক্ষ থেকে করা হয়। আবেদনের পর সমঝোতার মাধ্যমে সংসার টিকে যাওয়ার ঘটনা মাত্র এক শতাংশ। নারীদের পক্ষে বিচ্ছেদের আবেদনের প্রধান কারণ হলো পরকীয়া, স্বামী মাদকাসক্ত, যৌতুক নিয়ে দ্বন্দ্ব, মতের অমিল, স্বামী-স্ত্রীর আয়ের টাকা নিয়ে বিরোধ, পারিবারিক অশান্তিসহ নানা কারণ। পক্ষান্তরে পুরুষদের আবেদনের প্রধান কারণ পরকীয়া, মেয়ে সন্তান জন্মদানে অসন্তুষ্টি, ঠিকমতো সংসার না করা, স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির কথা না শোনা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটানো।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ বলেন, বর্তমান সমাজে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রায় অনুপস্থিত। বর্তমান প্রজন্মের কাছে মেনে নেওয়ার কিংবা সহ্য করার প্রবণতা নেই বললেই চলে। কেউ কারও কথা শুনতে চায় না, সব সময় ‘আমিই সেরা’ মানসিকতা লালন করে। নিজের মধ্যে আমিত্বই বেশি। সংসারে এসব নেতিবাচক কার্যক্রমের শেষ পরিণতি এবং সমাপ্তি ঘটে তালাকের মাধ্যমে। আর চবির আইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন বলেন, তালাকের ঘটনা বাড়ছে, তা সত্য। আমরা মনে করি, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, পারিবারিক অস্থিরতা, সামাজিক বন্ধন কমে যাওয়া, যৌথ পরিবারে না থাকা, নারী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ থাকা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা কারণে তালাক বাড়ছে। ধর্মীয়-সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই এমনটি হচ্ছে।
এদিকে, সমাজ বিশেষজ্ঞদের অভিমত, মাদকাসিক্ত, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, পরকীয়া, শারীরিক অক্ষমতা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিভিন্ন অ্যাপস, স্মার্টফোনের অপব্যবহার, ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহপ্রবণতা, স্বামী প্রবাসী হলে স্ত্রীর শ্বশুরপক্ষের লোকজনের অসহযোগিতা, সন্তান না হওয়া বা ছেলে সন্তান না হওয়া, একাধিক বিয়ের প্রবণতা, দম্পতিদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহনশীলতার অভাব, ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি কারণে সংসার ভাঙছে।বা:প্র।