নিজস্ব ডেস্ক : ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সড়কে অর্ধশত মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আহতের সংখ্যাও শতাধিক। আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধি ও বিভিন্ন সূত্রে:
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলারর চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে ৭জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১জন এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২জন মারা যান।
গতকাল সকালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত আছে আরও ৬জন। নিহতদের মধ্যে নারী ৩জন, শিশু ২জন ও পুরুষ ৫জন। মাইক্রোবাসটি কিশোরগঞ্জ থেকে কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছিল।
দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে লোহাগাড়া ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশের টিম গিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। এর আগে, ঈদের দিন সোমবার সকালে চুনতি এলাকায় বাসের সঙ্গে মিনিবাসের সংঘর্ষে ৫জন নিহত এবং ৬জন আহত হন। তাছাড়া, গত মঙ্গলবার একই স্থানে দুটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ৮জন আহত হন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাইক্রোবাসটি কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছিল। অন্যদিকে রিলাক্স পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস চট্টগ্রামের দিকে আসছিল। দুটি গাড়ি লোহাগাড়া চুনতি বনরেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মাইক্রোবাসের ৭ যাত্রী। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৩জন মারা যান।
আহত আরেক শিশু, ১ যুবক ও ১ তরুণীকে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাসযাত্রী মতিন মিয়া বলেন, চট্টগ্রামমুখী যাত্রীবাহী রিলাক্স পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বেশ কয়েকবার চালক বাসটি থামানোর চেষ্টা করে। এর মধ্যেই বিপরীত দিক থেকে আসা কক্সবাজারমুখী মাইক্রোবাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসের ৮ যাত্রী ঘটনাস্থলে নিহত হন।
লোহাগাড়া থানার অপারেশন অফিসার মোহাম্মদ জাহিদ বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের মধ্য থেকে গুরুতর ৪জনকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ২জন মারা যান।
এদিকে, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় বড়হাতিয়া ইউনিয়নের সেনের হাট এলাকায় ব্রিজে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে মো. অনিক (১৮) নামে ১ মোটরসাইকেল আরোহী মারা গেছেন। গত মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত অনিক ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল কবিরের ছেলে।
ঢাকা : রাজধানীর মতিঝিলে বিআরটিসি বাস কাউন্টারের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় ৬ নম্বর বাসের ধাক্কায় মো. রুহুল আমিন শেখ (৫৫) নামে এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি পূর্ব বাসাবো স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত মঙ্গলবার বিকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, রুহুল আমিন গাজীপুরের শ্রীপুর থানার নান্দাসাগর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পরিবারের সঙ্গে সবুজবাগের পূর্ব বাসাবো এলাকায় থাকতেন।
রুহুল আমিনের ছেলে মো. শাকিল জানান, তার বাবা পূর্ব বাসাবো স্কুল অ্যান্ড কলেজে নিরাপত্তার দায়িত্ব শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন। মতিঝিলে রাস্তা পার হওয়ার সময় ৬ নম্বর বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মতিঝিল থানার এসআই আবু সালেহ শাহিন বলেন, চালক পালিয়ে গেলেও বাসটি জব্দ করা হয়েছে।
রাজবাড়ী : রাজবাড়ীল কালুখালীতে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় সুজন শেখ (২৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলার কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের গঙ্গানন্দপুর গ্রামে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সুজন গঙ্গানন্দপুর গ্রামের লিয়াকত শেখের ছেলে। তিনি রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন।
স্থানীয় রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. লফিত মোল্লা বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুজন রতনদিয়া বাজার থেকে হিরু মোল্লার ঘাটের রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সে গঙ্গানন্দপুর মোল্লাপাড়া ঈদগাহ মাঠে পৌঁছানে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেট কারের সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। কালুখালী থেকে কিছুদূর যাওয়ার পর সে মারা যায়।
কালুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, গঙ্গানন্দপুর গ্রামে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনায় এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির নাম সুজন।
কুষ্টিয়া : ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে কুষ্টিয়ায় পৃথক ৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে ২ এপ্রিল বুধবার সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সদর, খোকসা ও মিরপুর উপজেলায় এসব ঘটনা ঘটে। গতকাল সকালে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া এলাকায় প্রাইভেট কারের ধাক্কায় সিএনজিচালক নিহত হয়েছেন। নিহত সিএনজিচালকের নাম রফজেল শেখ (৬৫)। তিনি ভেড়ামারা উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামের সাহাদ আলী শেখের ছেলে।
হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্প সূত্র জানায়, সিএনজিটি যাত্রী নিয়ে কুষ্টিয়া যাচ্ছিল। এ সময় দৌলতপুর থেকে কুষ্টিয়া হয়ে ঢাকাগামী একটি প্রাইভেট কার পেছন থেকে সিএনজিকে ধাক্কা দেয়। এতে সিএনজিটি সড়কে ছিটকে পড়লে চালকসহ কয়েকজন আহত হন। স্থানীয়রা চালক রফজেল শেখকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এদিকে,গত ১ এপ্রিল, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটের দিকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের জিলা স্কুলের সামনে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় মোটরসাইকেলে থাকা রাহাত ইসলাম পলাশ (৩০) ও ফাহিম অনিক (২৩) নিহত হন। নিহতরা সম্পর্কে মামা-ভাগনে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তানভীর গণি (২৩) নামে ১ যুবক। তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশাররফ হোসেন জানান, তারা ৩জন রাতে মজমপুর এলাকা থেকে চা পান করে মোটরসাইকেলে শহরতলির মোল্লাতেঘরিয়ায় চাচাতো ভাইয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রতগতির একটি প্রাইভেট কার তাদের ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পলাশকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আড়াইটার দিকে অনিকের মৃত্যু হয়। নিহত পলাশ কুষ্টিয়া শহরতলির মোল্লাতেঘরিয়া এলাকার আসাদুল ইসলাম মোল্লার ছেলে। তিনি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির সাভার কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। অনিক শহরের লক্ষ্মীপুর এলাকার আবদুল মান্নানের ছেলে। পড়াশোনা শেষ করে তিনি ফ্রিল্যান্সিং করতেন।
এর আগে, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খোকসা উপজেলার বিলজানি বাজার এলাকায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়ে মঈনুদ্দিন শেখ (৭০) নামে ১ নির্মাণশ্রমিক গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের মৃত চতুর আলীর ছেলে।
মাদারীপুর : মাদারীপুর জেলার শিবচরের কুতুবপুরে তিন মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন শিবচরের কুতুবপুর ইউনিয়নের মুন্সীকান্দি এলাকার শাহজাহান তালুকদারের ছেলে মিঠুন (২৫) এবং শরীয়তপুরের পদ্মা সেতুর দক্ষিণ থানার ঢালিকান্দি এলাকার বাবুল ঢালীর ছেলে হৃদয় ঢালী (১৯)। তারা ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় জাজিরার জয়নগর এলাকার মঞ্জু সরদারের ছেলে রমজান (২১) এবং ইসকান খানের ছেলে অলি খান (২২) নামে দুজন গুরুতর আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই দুজন মারা যান। মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে শিবচরের কুতুবপুর এলাকার বাবুখাঁর ব্রিজ এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
জানা গেছে, দুপুরে বেপরোয়া গতিতে ৩টি পরস্পর বিপরীতমুখী মোটরসাইকেল বাবুখাঁর ব্রিজের কাছে সংঘর্ষ হয়। ঈদ-পরবর্তী সময়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতু এলাকায় ঘুরতে বের হন ওই যুবকরা। প্রথমত দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তাৎক্ষণিক আরেকটি মোটরসাইকেল চলে এলে সেটিও সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে। এ সময় ঘটনাস্থলেই মিঠুন ও হৃদয় ঢালীর মৃত্যু হয়। পরে অলি খান ও রমজান নামে আরও দুই যুবকের মৃত্যু হয়। বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
পদ্মা সেতুর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন বলেন, দুর্ঘটনাটি শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঘটেছে। ঘটনাস্থলে ২জনসহ ৪জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকার ৩জন ও শিবচরের ১জন বলে জানতে পেরেছি।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ বলেন, ‘মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মোট ৪জনের মৃত্যু হয়েছে। বেপরোয়া গতির কারনেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কের গৌরীপুর উপজেলার সাহেব কাচারি চন্দ্রপাড়া মোড়ে একই পরিবারের ২ বোনসহ সড়ক দুর্ঘটনায় ৪জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকসার সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- গৌরীপুর উপজেলার দুর্বাচর নামাবাড়ির ওবায়দুর রহমান আকন্দের স্ত্রী কুলসুম বেগম (৯৫), গৌরীপুর উপজেলার ভাঙনামারি চরের মোহাম্মদ মানিক মিয়ার স্ত্রী মোসাম্মৎ দিলরুবা (৪০), নগরীর নাটকঘর লেনের সাইফুল ইসলামের মেয়ে রীতি (১৪) ও প্রীতি (৭)।
গৌরীপুর থানার ওসি মির্জা মাজাহারুল আনোয়ার জানান, বালুবাহী একটি ট্রাক ময়মনসিংহ থেকে আসার পথে ময়মনসিংহগামী অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশার ছয় যাত্রী আহত হন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর তিনজনকে ভর্তির পর একজন মারা যান।
অপরদিকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায়, ঈদের দিন ৩ বন্ধু মিলে একটা বাইকে চড়ে সখিপুর উপজেলার কুতুবপুর স্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২জন নিহত হয়েছেন। বিকাল ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন এসএসসি পরীক্ষার্থী আশিক ও মিনহাজ। তাদের বাড়ি উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের কাহালগাঁও গ্রামে।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় শিক্ষক সাইদুর রহমান ওরফে সাইদ মৌলভী জানান, কাহালগাঁও দোলমা উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী জিহাদ, আশিক ও মিনহাজ। আশিক কাহালগাঁও গ্রামের আজাহার উদ্দিনের ছেলে এবং একই গ্রামের মক্তবপাড়ার আকরামের ছেলে মিনহাজ।
রংপুর : রংপুরে ব্যাটারিচালিত ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী দুই কিশোর নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে বদরগঞ্জ উপজেলার ট্যাক্সেরহাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- স্থানীয় পাকারমাথা এলাকার ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে আশিক (১৬) ও অজ্ঞাত কিশোর (১৭)। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বদরগঞ্জ থানার ওসি এসএম আতিকুর রহমান। তিনি স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, দুপুরে মোটরসাইকেলে করে দ্রুত বেগে আশিক ও অজ্ঞাত কিশোর বদরগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। এই একপর্যায়ে ট্যাক্সেরহাট এলাকায় তারা আসলে বিপরীত দিক থেকে ব্যাটারিচালিত ভ্যানের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে আশিক নিহত হন। এ ঘটনায় গুরুতর অজ্ঞাত আরেক কিশোরকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বদরগঞ্জ থানার ওসি এস এম আতিকুর রহমান বলেন, অজ্ঞাত কিশোরের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২জন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। সোমবার বিকালে উপজেলার আগরপুর-পোড়াদিয়া সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত শামীম মিয়া (২৫) কুলিয়ারচর উপজেলার গোবরিয়া নামাকান্দা গ্রামের কৃষক নোহাজ উদ্দিনের ছেলে এবং আল আমিন (২৭) লক্ষ্মীপুর কাছারীপাড়া গ্রামের কৃষক তারা মিয়ার ছেলে। তারা ২জনই পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঈদের দিন বিকালে মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে বের হন শামীম ও আল আমিন। বিকাল ৩টার দিকে আগরপুর-পোড়াদিয়া সড়কের লক্ষ্মীপুর মধ্যপাড়া নামক স্থানে তাদের মোটরসাইকেলের সঙ্গে অপর একটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান শামীম মিয়া। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আল আমিন। অজ্ঞাত অপর মোটরসাইকেলের আরোহী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
গাজীপুর : গাজীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১ পুলিশ কনস্টেবলসহ ৭জন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় উত্তেজিত লোকজন একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসব দুর্ঘটনায় আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নাওজোর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রইছ উদ্দিন জানান, ঈদের পরদিন (১ এপ্রিল) মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় একটি অটোরিকশা উল্টোপথে যাওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেল আরোহী কনস্টেবল রনি শিকদার (২৬) সড়কে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিহত রনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার শাজাহানগঞ্জ ছোনাটি এলাকার জামাল শিকদারের ছেলে। তিনি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং জিএমপির সদর জুনের সহকারী উপকমিশনার দিনে দ্বীনে এ আলমের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ছিলেন। জিএমপির সদর জুনের সহকারী উপকমিশনার দিনে দ্বীনে এ আলম জানান, তিনি আমার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর ডেলিভারি হওয়ার খবর পেয়ে ছুটি নিয়ে বাড়িতে রওনা হয়েছিলেন। যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সদর থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঢাকা-গাজীপুর সড়কের শিববাড়ি মোড়ে ঢাকাগামী একটি বাস ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী একটি সিএনজি অটোরিকশাকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে সিএনজি আরোহী নরসিংদীর রায়পুরা থানার কালিকাপুর এলাকার আবুল হোসেনের মেয়ে শিউলি আক্তার (৪৫) ও তার ভাগনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার সোহাপুর এলাকার আবুবকর সিদ্দিক জুয়েলের মেয়ে তাবাস্সুম (৫) নিহত ও নিহত তাবাসসুমের বাবা-মা ও অটোচালকসহ তিনজন আহত হন। এ সময় এ ঘটনায় উত্তেজিত লোকজন ওই বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভায়। তবে ততক্ষণে বেশির ভাগ অংশই পুড়ে যায়। তিনি আরও জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাসন থানার আউটপাড়া রিয়াজনগর এলাকায় সপরিবারে বসবাস করেন আবুবকর সিদ্দিক জুয়েল। ঈদের দিন (সোমবার) সকালে শ্বশুরের মৃত্যুর খবর পেয়ে জুয়েল তার দুই শিশু সন্তান, স্ত্রী ও স্ত্রীর খালাতো বোনকে নিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার শিকার হন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কোনাবাড়ী থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, রবিবার (৩০ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ি এলাকায় তাকওয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি উপজেলার ঘোড়িয়া এলাকার আনসার আলীর ছেলে নাজমুল হোসেন (৩৩) ও তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন এবং সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ থানার চি পুর এলাকার হিরো সরকারের ছেলে অটোরিকশা চালক জুয়েল সরকার ওরফে হালিম (২৫) মারা যান এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন।
এ ছাড়া কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আবদুল বারিক জানান, গত রবিবার সকাল ১০টার দিকে (৩০ মার্চ) ঢাকা-কিশোরগঞ্জ এই আঞ্চলিক সড়কে কাপাসিয়ার চকবড়হর এলাকায় একটি বাস একটি অটোরিকশাকে চাপা দিলে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের দলিয়াচর গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলম (৪৫) নিহত ও অপর তিনজন আহত হন।
কুমিল্লা : ঈদের ছুটিতে কুমিল্লার মহাসড়কে প্রাণ গেছে চারজনের। তার মধ্যে তিনজন চান্দিনায় এবং একজন চৌদ্দগ্রামে মারা যান। মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কুমিল্লার চান্দিনায় যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হন অন্তত আরও ২৫ জন যাত্রী। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চান্দিনা উপজেলার পালকি সিনেমা হলসংলগ্ন ইন্দ্রারচর এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
চান্দিনা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার লিডার বাহারুল ইসলাম জানান, তিশা প্লাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৮৬৮২) পরিবহনের বাসটি ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে কুমিল্লা যাচ্ছিল। চান্দিনার ইন্দ্রারচর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে একজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুজন মারা যান।
এদিকে চৌদ্দগ্রামে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সিয়াম সাহান নামের (২০) এক যুবক নিহত হয়েছেন। ঈদের দিন সোমবার রাত ৭টা ৩০ মিনিটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের লালবাগ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সিয়াম সাহান মুরাদনগর উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিয়াম সাহান চৌদ্দ্রগামে তার এক বন্ধুর বাড়ি থেকে মুরাদনগর ফেরার পথে উপজেলার লালবাগ এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে সিয়াম সাহান ঘটনাস্থলে নিহত হন। সঙ্গে থাকা অপর বন্ধু কোতোয়ালি থানার কালীর বাজার এলাকার ওমর ফারুকের ছেলে ওমর ইবনে প্রভাদ গুরুতর আহত হন।
ভাঙ্গা (ফরিদপুর) : ভাঙ্গায় মহাসড়ক পারাপারের সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে মাওলানা মো. ইয়াকুব আলী (৩৫) নামক ১ ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সকাল ৬টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তিনি ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের সুকনী গ্রামের বাসিন্দা ও পার্শ্ববর্তী নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের ঝাটুরদিয়া বাজারের জুতা ব্যবসায়ী।
ঈদের দিন রাত ৮টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঝাটুরদিয়া নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে রাত ১০ টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত মাওলানা ইয়াকুব আলীর ৮ ও ৫ বছর বয়সী দুটি ছেলে রয়েছে।বা:প্র।