ইসরাইলি বর্বরতার ২ বছর : গাজায় নিহত ছাড়িয়েছে ৭৬ হাজার

অনলাইন ডেস্ক : যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ইসরাইলি বর্বরতার ২ বছর আজ। ২০২৩ সালের এই দিনেই অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে শুরু হয় ইসরাইলি আগ্রাসন। ওই দিন থেকেই ঘুম হারাম গাজাবাসীর। শুরু হয় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ।

সোমবার গাজার মিডিয়া অফিসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে শুরু ইসরাইলি নৃশংসতায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭৬ হাজার। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী হাজার হাজার নারী-শিশুসহ নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ১৬০। আহত এক লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯। মধ্যপ্রাচ্যের ভয়াবহ এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ইউরোপসহ পুরো বিশ্ব। একই সঙ্গে চলছে হামলা ও যুদ্ধ বন্ধ প্রক্রিয়াও। ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা ‘শান্তি প্রস্তাব’ নিয়ে রোববার থেকেই আলোচনা চলছে মিসরে। সবকিছু ঠিক থাকলে সোমবার মধ্যরাতেই পাওয়ার কথা আলোচনার প্রথম পর্যায়ের ফলাফল। আলজাজিরা, এএফপি।

কাতার, মিসর, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় চলমান এ আলোচনার মধ্যেও গাজায় হামলা বন্ধ করেনি ইসরাইল। সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় মিসরের রিসোর্ট শহর শার্ম-এল শেখে শুরু হয়েছে জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধ বন্ধে হামাস-ইসরাইল প্রতিনিধিদের পরোক্ষ আলোচনা। এই সময়ও গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। শান্তির সুযোগ সৃষ্টিতে ‘বোমা হামলা বন্ধ করো’- ৩ অক্টোবর ট্রাম্পের এই কড়া নিষেধাজ্ঞার পরও হামলা থামেনি। উলটো ট্যাংক-বিমান হামলায় আরও তীব্র আগ্রাসন শুরু করেছে। ৩৬৫ বর্গকিলোমিটারের ছোট্ট ভূখণ্ডের প্রায় ৯০ শতাংশ অঞ্চল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে গত দুই বছরে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া ও নিখোঁজদের সংখ্যা আরও প্রায় সাড়ে ৯ হাজার। সোমবার আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, শুধু গত দুদিনেই বেসামরিক এলাকাগুলোতে ১৩১টিরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। হত্যাযজ্ঞ ছাড়াও পুরো নগরব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। মৌলিক চাহিদাসহ সব ধরনের সেবা থেকে ফিলিস্তিনিদের বঞ্চিত রাখা হয়েছে। অবরুদ্ধ অঞ্চলটির প্রায় ৯০% পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধিসংক্রান্ত সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। ৬০%-এরও বেশি পরিবার সাবান ব্যবহার করতে পারছে না। ৪০%-এরও বেশি পরিবার আবর্জনার স্তূপের কাছে বসবাস করে। পাঁচ লাখেরও বেশি নারী ও মেয়ের মাসিক স্বাস্থ্যবিধি উপকরণের অভাব রয়েছে। জানা গেছে, গাজায় দুই লাখ টনেরও বেশি বিস্ফোরক ফেলেছে ইসরাইল। আগ্রাসন, অগ্নিসংযোগ এবং স্থানচ্যুতির মাধ্যমে গাজার ৮০ শতাংশেরও বেশি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনারা। ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান ইউএনআরডব্লিউএ’র গাজার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে। জানা গেছে, গাজাজুড়ে প্রায় ৮০ শতাংশ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ইউএনআরডব্লিউএ’র আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ৮৪৫ জন নিহত হয়েছেন। ৩৭০ জনেরও বেশি জাতিসংঘ কর্মী নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসা অবকাঠামোতে ৭৯০টিরও বেশি হামলা হয়েছে। ইউএনআরডব্লিউএ’র ২২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে মাত্র চারটি সচল আছে। ৯৮ শতাংশেরও বেশি ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত বা ব্যবহারের অযোগ্য। ৬,৬০,০০০ শিশু টানা তৃতীয় বছর স্কুলে যায় না। এমনকি ৯২ শতাংশ স্কুল ভবনের সম্পূর্ণ পুনর্গঠন বা বড় ধরনের মেরামতের প্রয়োজন। ইউএনআরডব্লিএ’র প্রায় ৯০ শতাংশ স্কুল ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০ হাজার শিশুসহ হাত-পা হারিয়েছ ৪২ হাজারেরও বেশি মানুষ (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)। ট্রমায় ভুগছে পাঁচ লাখের বেশি শিশু। পক্ষান্তরে ইসরাইলের নিহত হয়েছে এক হাজার ১৫২ জন সেনা।

এদিকে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটককৃত আরও ১৬১ জন (১৬ দেশের) অধিকারকর্মীকে গ্রিস ও স্লোভাকিয়ায় ফেরত পাঠিয়েছে ইসরাইল। যাদের মধ্যে সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও আছেন। এছাড়া তাদের মধ্যে গ্রিস, ইতালি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরাও রয়েছেন। সোমবার বিষটি নিশ্চিত করেছে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফ্লোটিলার ১৩৮ জন কর্মী এখনো ইসরাইলের হেফাজতে আছেন বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। বুধবার থেকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ফ্লোটিলার জাহাজগুলো আটক করতে শুরু করে ইসরাইল। ৪০০-এর বেশি অদিকারকর্মীকে আটক করা হয়। যাদের বেশির ভাগকেই দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে ইসরাইল। এএফপি।

দেশে ফেরত যাওয়া অধিকারকর্মীরা আটক অবস্থায় ভয়ংকর নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন। জানিয়েছেন, আটক থাকা অবস্থায় তদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করেছেন ইসরাইলি নিরাপত্তারক্ষীরা। হাঁটুতে ভর দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকা, কুকুর দিয়ে ভয় দেখানো, দিনের পর দিন অভুক্ত রাখা, এমনকি শৌচাগারের পানি পান করতে বাধ্য করা এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন তারা। শনিবার ইস্তাম্বুলে পৌঁছে হাজওয়ানি বলেন, ‘কল্পনা করতে পারেন, আমরা শৌচাগার থেকে পানি খেতে বাধ্য হয়েছি? হেলিযা জানান, আমি তিন দিন কিছুই খাইনি, শুধু টয়লেটের পানি পান করেছি।

ইসরাইলে শোক : হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের দুই বছর পূর্তিতে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মরণসভার আয়োজন করেছে ইসরাইল। সুক্কোত উৎসবের (ইহুদিদের প্রধান বার্ষিক উৎসব) প্রথম দিন রোববার সন্ধ্যায় (স্থানীয় সময়) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গাজা সীমান্তসংলগ্ন রেইম এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় ট্রাইব কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজিত নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যাল। রাতের পরিবেশনায় ছিলেন গায়িকা এডেন বেন যাকেন ও হার্ট অব নোভা ব্যান্ডের সদস্যরা। যাদের মধ্যে অনেকে নিহতদের স্বজন ও বেঁচে যাওয়া অংশগ্রহণকারী। তাদের গানের সঙ্গে বড় পর্দায় একে একে ভেসে উঠছিল নিহতদের মুখ। শত শত শোকাহত পরিবার এ স্মরণসভায় অংশ নেন। সুক্কোত উৎসব সাত দিন ধরে চলে। নিরাপত্তায় গাজা সীমান্তে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে সুক্কোত উৎসব প্রাঙ্গণে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। এতে ৩৭৮ জন নিহত হন। ২৫১ জনকে অপহরণ করে হামাস। যুদ্ধবিরতির বিভিন্ন পর্যায়ে অনেককেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এখনো ৪৭ জন জিম্মি। ধারণা করা হচ্ছে তাদের মধ্যে জীবিত রয়েছেন ২০ জন।যু

মন্তব্য করুন