ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ

৫ দফা দাবি আদায়ে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ

ডেস্ক : দেশজুড়ে ইসকন কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা, হত্যা ও হত্যার হুমকি ও দেশবিরোধী কার্যক্রমের অভিযোগে চট্টগ্রামে মিছিল-সমাবেশে করেছে হেফাজত ইসলাম, ছাত্র-জনতা, বিভিন্ন সংগঠন এবং মুসল্লিরা। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে এই কর্মসূচি পালিত হয়। গাজীপুরের টিএনটি এলাকার মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মুহিবুল্লাহ মাদানীকে অপহরণ, আইনজীবী আলিফ হত্যা, সারাদেশে মুসলিম মেয়েদের টার্গেট করে সঙ্গবদ্ধ ধর্ষণের সাথে সংশ্লিষ্ট উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে।

সূত্রে জানাযায়, উগ্রপন্থী আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন। তাদের দাবি, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে হলে ইসকন নিষিদ্ধের বিকল্প নেই। জুমার নামাজের পর চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে সমাবেশ ও পরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মহানগর হেফাজতে ইসলাম। একই দাবিতে পটিয়ায় সর্বস্তরের ওলামা-জনতার ব্যানারে এবং হাটহাজারীতে হেফাজতে ইসলাম কর্মসূচি পালন করেছে। নগরীর সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের নেতারা চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা, বুয়েট ছাত্র শ্রীশান্ত রায়ের মুসলিম ছাত্রীকে ধর্ষণসহ বিভিন্ন ঘটনায় ইসকন অনুসারীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধের দাবি জানান।

হেফাজত নেতারা বলেন, যেভাবে অপরাধে জড়িত থাকার কারণে আওয়ামী লীগের মতো দল নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যেভাবে সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের অন্যায়ের কারণে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই ইসকনের মতো উগ্র সংগঠনকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। তারা অ্যাডভোকেট আলিফকে হত্যা করেছে। সারাদেশে ব্যাপক আকারে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী নেতৃবৃন্দ ও ইমাম-খতিবদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এমনকি গাজীপুরে গুমের ঘটনায়ও তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি সরকার যেন এই সন্ত্রাসী সংগঠনকে অনতিবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে ইসকন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আলী উসমানের সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম মহানগরের প্রচার সম্পাদক ইকবাল খলিলের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইযহার ও নাসির মুনির, কেন্দ্রীয় ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক কামরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, আব্দুল হালিম, রিদওয়ানুল ওয়াহেদ, আশরাফ বিন ইয়াকুব ও আনাস বিন আব্বাস প্রমুখ।

দেশব্যাপী গুম, খুন, ধর্ষণ ও সহিংসতার প্রতিবাদে পটিয়া পৌর সদরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে ইসকনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। সমাবেশ বক্তব্য দেন পটিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী কাশেম আল নাহিয়ান, আব্দুল বাছেদ, আব্দুল কাদের এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য মো. তৌকির।

এদিকে, পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।‎ গতকাল শুক্রবার নগরীর ইপিজেড মোড়ে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রফেসর মাহবুবুর রহমান বলেন, ইসলামী আন্দোলন আজ জনতার ন্যায্য অধিকার আদায়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিচ্ছেÑ এই পাঁচ দফা দাবি শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি জাতির আত্মমর্যাদার দাবি। ‎আমরা চাই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, যাতে জনগণের রায়ই হয় দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের একমাত্র পথ। আমরা চাই পিআর পদ্ধতির নিরপেক্ষ নির্বাচন- যেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ করবে ভোট, বন্দুক নয়। আমরা দাবি জানাই জাতির খুনিদের বিচারের, যেন অন্যায়কারীরা আর কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। আমরা বলি, জাতীয় পার্টি ও তাদের দোসরদের রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করো। তারা বারবার এই জাতিকে ধোঁকা দিয়েছে। আর ইসলামবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত ইসকনসহ সব ষড়যন্ত্রকারী সংগঠনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা জানান, শহীদ আলিফ হত্যার বিচার দ্রুত কার্যকর, গাজীপুরে মসজিদের খতিবকে গুম করে হত্যা চেষ্টা এবং সারাদেশে মুসলিম মেয়েদের টার্গেট করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের সাথে সংশ্লিষ্ট উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জিরো পয়েন্টে চবিয়ান দ্বীনি পরিবারের ব্যানারে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া গাজীপুরের আশা মনি ধর্ষণ ও ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় ইমামকে গুম ও হত্যার চেষ্টা ঘটনায় যে নাম উঠে আসে তা হলো ইসকন। ভারতের মদের পুষ্ট উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠন এই ইসকনের ১৯৬৬ সালের নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠার পরপরই নিউইয়র্কের শিশু নির্যাতনের মামলা দায়ের করা হয় ইসকনের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে এসেই তারা ভিন্ন মতাদর্শের হিন্দুদের মন্দির জোরপূর্বক দখল করে। ২০১৪ সালে তারাবির নামাজে বাধা, ২০১৬ সালে ইসকন মন্দির থেকে মুসলিমদের উপর গুলিবর্ষণ করে। ভাগাওয়া লাভ ট্র্যাপের মাধ্যমে মুসলিম মেয়েদের চরিত্র হননসহ নানা দেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হয় এই ইসকন। এমনকী আবরার ফাহাদ হত্যাকা-েও ইসকনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সরকারকে বলতে চাই অনতিবিলম্বে ইসকনকে নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদের দাঁত ভেঙে দিতে হবে।ই

মন্তব্য করুন