জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে ৪০তম আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলে বক্তারা
জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে ১০ দিনব্যাপী ৪০তম আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিল গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে। জমিয়তুল ফালাহ শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের আয়োজনে মাহফিলের উদ্বোধনী দিনে ইসলামী স্কলার ও আলোচকরা বলেছেন, বিদ্বেষ বিভেদ বৈরিতা হিংসা থেকে পৃথিবীতে হানাহানি যুদ্ধ সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছে। ইয়াজিদ বিদ্বেষ ও হিংসায় উন্মত্ত হয়ে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) প্রতি জঘন্য নির্মমতা ও নৃশংসতা দেখিয়েছিল। ইয়াজিদের পতন হয়েছে। কিন্তু ইয়াজিদি নির্মমতার দৃষ্টান্ত এখনো থামেনি। বিদ্বেষ বিভেদ বৈরিতা ও হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীতে শান্তি ও জনস্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) চর্চিত সর্বজনীন প্রেম ভালোবাসা ও মৈত্রীর আদর্শ গভীরভাবে ধারণ করতে হবে। এ পথেই রয়েছে শান্তি, মুক্তি ও নাজাত। গতকালের মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, যুগে যুগে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অনেকেই ত্যাগ স্বীকার ও আত্ম উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু ইমাম হোসাইনের (রা.) আত্মত্যাগের কথা ইতিহাসে যথাযথভাবে লেখা হয়নি। এটি দুঃখজনক। আজ মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ না হওয়ায় তারা দেশে দেশে মার খাচ্ছে। আজকে অন্যদের মারলেও একদিন আমাদেরকেও মারতে পারে, একথা আমাদের মনে রাখতে হবে। তিনি মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যব্ধ হয়ে ইহুদি নাসারাদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহ্বান জানান। তিনি জমিয়তুল ফালাহ কমপ্লেক্সের উন্নয়নের আশ্বাস দেন। সভাপতির বক্তব্যে সুফি মিজানুর রহমান বলেন, আহলে বায়তে রাসূলের (রা.) ভালোবাসাই ঈমানের দাবি। জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে খতিবে বাঙাল আল্লামা জালালুদ্দিন আলকাদেরী (রা.) সূচিত এই শাহাদাতে কারবালা মাহফিল আমাদের ঈমানি চেতনা ও উজ্জীবনের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৪০ বছর ধরে এই শাহাদাতে কারবালা মাহফিল আমাদের জন্য বড় নিয়ামত স্বরূপ। এ রকম আড়ম্বরপূর্ণ মাহফিল বাংলাদেশে আর কোথাও হচ্ছে না বলে তিনি মতব্যক্ত করেন। তিনি খতিবে বাঙাল হুজুরের (রহ.) জান্নাতে সুউচ্চ মর্যাদা কামনা করেন। আলোচক ছিলেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মুহাম্মদ আলাউদ্দিন। তিনি কারবালা মাহফিল কী ও কেন বিষয়ে আলোচনাকালে বলেন, যুগে যুগে মুনাফিক মুসলমান এবং ইহুদিরাই ইসলামের খুব বেশি ক্ষতি করেছে। কারবালার ময়দানে নবী পরিবার ও হযরত ইমাম হোসাইন (রা) এর বিরুদ্ধে লড়াই করে ইয়াজিদিরা ইসলামকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। মহররম মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মুঈনীয়া কামিল মাদ্রাসার মুফাস্সির শফিউল আলম নেজামী। তিনি বলেন, মহররম মাসে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে কারবালা ময়দানে। একদিকে দ্বীনের ঝাণ্ডা হাতে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও আহলে বায়তে রাসূল (দ.)। অন্যদিকে ইসলামের ধ্বজাধারী ইয়াজিদিরা আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে নিকৃষ্ট নজির সৃষ্টি করেছে। সঠিক ইসলাম প্রচারে আহলে বায়তের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন বোয়ালখালী দরবার শরিফের সাজ্জাদানশীন শাহজাদা শাহসূফি মাওলানা সৈয়দ আহমদুল হক। তিনি বলেন, দ্বীনের রক্ষাকবচ হলেন আহলে বায়তে রাসূল (দ.)। তাঁদের আঁকড়ে ধরলে নাজাত মিলবে। বর্তমানে কারবালা মাহফিল আয়োজনের গুরুত্ব বিষয়ে আলোচনা করেন চবি মিজানুছ ছালাম জামে মসজিদের খতিব গবেষক ড. মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আজহারী।
তিনি বলেন, ইয়াজিদের নাম নিশানা আজ বিলুপ্ত। আর হযরত ইমাম হোসাইন (রা) সহ আহলে বায়তে রাসুলের (দ) শান মর্যাদা সমুন্নত করেছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক। মাহফিলে অতিথি ছিলেন, আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, হাটহাজারী দরবারের সাজ্জাদানশীন শাহ্জাদা মাওলানা সৈয়দ আমিনুল হক আলকাদেরী, আঞ্জুমানের প্রচার ও পাবলিকেশন সেক্রেটারি মুহাম্মদ গোলাম মহিউদ্দীন, ফরহাদাবাদ দরবারের সাজ্জাদানশীন মাওলানা সৈয়দ মুজাম্মেল হক ফরহাদাবাদী, রাজনীতিবিদ ইয়াছিন চৌধুরী লিটন।
হাফেজ মাওলানা আহমদুল হক ও ড. জাফর উল্লাহর সঞ্চালনায় মাহফিলে পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, খোরশেদুর রহমান, আনোয়ারুল হক, প্রফেসর কামাল উদ্দীন আহমদ, মুহাম্মদ সাইফুদ্দীন, আব্দুল হাই মাসুম, মুহাম্মদ দিলশাদ আহমেদ, জাফর আহম্মদ সাওদাগর, মাহবুবুল হক, হাফেজ ছালামত উল্লাহ, মনসুর সিকদার, মাহবুবুল আলম, মাইনুদ্দীন মিঠু, জহির উদ্দীন, নাজিব আশরাফ প্রমুখ। সালাত সালাম শেষে দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করা হয়। মাহফিলের ৬ষ্ঠ দিন থেকে পর্দা সহকারে মহিলাদের জন্য আলোচনা শোনার ব্যাবস্থা থাকবে।
মাহফিল সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে : sufitvonline, www.shahadat-e-karbala.com.পড়স। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।