
অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় বাংলাদেশের আলেমসমাজের ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, বাংলাদেশে ৫ থেকে ৬ লক্ষ মাহফিল হয়, সবখানে যাতে একজন বক্তা আরেকজন বক্তার বিরুদ্ধে না বলি। আলেমদেরকে একমত হতে হবে। বাংলাদেশ বিরানব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশ। দেশ ক্রমান্বয়ে সমৃদ্ধ হচ্ছে। কোন ষড়যন্ত্র বাংলাদেশকে ঠেকাতে পারবেনা। এটা মুসলমানদের গর্বিত শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। এ ব্যাপারে আলেম সমাজের সর্বাত্মক ঐক্য ও সহযোগিতা লাগবে। প্রত্যেকের প্রত্যেকের জায়গা থেকে ঐকের কাজটা করবেন।
আদর্শ ইসলামী মিশন মহিলা কামিল (এম.এ) মাদ্রাসা ও জৈনপুরী খানকা (দরবার) শরীফের উদ্যোগে
হাদীয়ে বাঙ্গাল মরহুম হযরত আল্লামা সৈয়দ আবুল হাসান মোঃ লুৎফুর রহমান (রহঃ) জৈনপুরী পীর সাহেব কেবলার ৪৮তম বার্ষিক বিশাল ইছালে ছাওয়াব ও ঐক্যের স্বার্থে ইসলামী মহাসম্মেলন-২০২৫-এ সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল শহীদ পার্ক ময়দানে এই মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, আমাদের সারাদেশে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা কোন বিষয়ে একমত হতে পারি না। মতের থেকে নেতা বেশি। কোন কোন ওয়াজায়িন আছেন যারা রাজনৈতিক দলের পক্ষ হয়ে কথা বলছেন, বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় বক্তা। নানাবিধ নানামতের লোক আছেন। মুশকিলের বিষয় হচ্ছে, মাহফিলে অন্য ধর্মের বিষয়ে কোনো কথাবার্তা নাই, আমাদের মূল বিপদ নিয়ে কথাবার্তা নাই। কথাবার্তা বেশি হচ্ছে কে কার বিরুদ্ধে বেশি বলতে পারে। নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে বেশি বলছি। কোন দরবার শ্রেষ্ঠ কোন মত শ্রেষ্ঠ- এটা নিয়ে কথা বলছি।
আমাদের সবার মধ্যে ঐক্য হতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আহলে হাদিস করেন, কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত করেন, আলিয়া আছে, কওমী আছে যে যাই করুক ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে কিন্তু সকলেরই একমত আছে। সামান্য এখতেলাফ আছে। মতের দ্বিমত না থাকলে সমাজ সুন্দর হয় না, সংসার সুন্দর হয় না, কোন কিছু সুন্দর হয় না।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি বলেন, ঐক্যটা হতে হবে আলেমদের মধ্যে। বাংলাদেশের সমাজে যাই কিছু আছে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি স্বৈরাচারীর পতন ঘটিয়েছে। এটা কোন একক নেতৃত্বে হয় নাই। সমগ্র জাতি মাদ্রাসা ছাত্র থেকে শুরু করে মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে সব জায়গা থেকে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেছে। এখানে ধর্মবর্ণের কোন বিষয় ছিল না।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, বাংলাদেশের আলেম-ওলামারা কখনো অন্য ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলে না। তারা রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ চিন্তা করে। ইতিহাস-ঐতিহ্য-গৌরব, কি করণীয় সেটা নিয়ে কথা বলে। ঘৃণাবিদ্বেষ যদি এই দেশের মাহফিল থেকে ছড়ানো হতো তাহলে বাংলাদেশে প্রতিদিন শত শত দাঙ্গা হত। এটা ভারতে হচ্ছে আমাদের এখানে হচ্ছে না। আল্লাহ তাআলা এই পবিত্র জবানের কারণে দেশের মধ্যে অনেক বরকত রেখেছেন। মিল কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, অনেক সমস্যার মধ্যেও কিন্তু এদেশে খাবারের অভাব নাই। মানুষ চলাফেরা করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আরো বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হল এই যে মানুষ ১৫-১৬ টা বছর বাকরুদ্ধ ছিল। আপনি আমি মনের কথা চায়ের দোকানে বলতে পারতাম না, বাসে বসে বলতে পারতাম না, কোথাও কথা বলতে পারতাম না। এখন সবাই মন খুলে কথা বলতে পারছে। এখন স্বামী যদি স্ত্রীর কাছে মনের কথা সব বলতে না পারে এবং স্ত্রী যদি স্বামীর কাছে মনের কথা বলতে না পারে তাহলে বলতে না পারার কারণে কিন্তু সংসার ভেঙে যায়। আমাদের সমাজেও সেই সমস্যা ছিল। এখন আমরা সবাই কথা বলতে পারছি।
যেকোনো সমাজ এগিয়ে যাওয়ার জন্য মেয়েদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন ধার্মিক যোগ্য শিক্ষিত মা ছাড়া সমাজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। গার্মেন্টসে অন্তত ৪০ লক্ষ মহিলা চাকরি করে। তাদের ঘর-সংসার খুব কমই হয়। মাদরাসায় যারা পড়াশোনা করে তারা কম্পিউটার চালাতে পারে, বাংলা-ইংরেজি-অংক সবকিছু জানে। তারা পর্দানশীন হয় আল্লাহভীতি থাকে। একারণে মাদ্রাসায় যারা পড়াশোনা করে তাদের বিবাহশাদি হয়।
এ এম এম বাহাউদ্দীন আরো বলেন, আলিয়া-কওমী মাদ্রাসা সবাই মিলে এই সমাজটা গড়ছে। মাদ্রাসার ৭০ লক্ষ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ৩৫ লক্ষ্যই কিন্তু নারী। মহিলারা সমাজ গঠনে বিশাল দায়িত্ব পালন করছে। তার প্রতিদান কিন্তু কিছুই তারা পাচ্ছে না। বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের সামান্য বেশি নারী। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সামাজিক উন্নয়ন মহিলাদেরকে বাদ দিয়ে কোন কিছুই করা সম্ভব না। আমাদের নারীরা সংসার করছে তারা সবকিছু করবে। নারীরা ফুটবল খেলবে ব্যাডমিন্টন খেলবে দাবা খেলবে। তারা মুষ্টিযুদ্ধ করবে বিমান চালাবে সেনাবাহিনী পুলিশ সবখানে কাজ করবে। আলেমদের দায়িত্ব হচ্ছে, নারীরা যাতে বেহায়া-বেলিল্লাপনায় জড়িয়ে না পড়ে।
ইসলামে জোর-জবরদস্তির কোন সুযোগ নাই উল্লেখ করে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি বলেন, অন্য ধর্মের লোকদের জোর করে ধর্মান্তরিত করা যাবে না। জবরদস্তি করা যাবে না। নিজেদের মধ্যেও জোর-জবরদস্তি করা যাবে না।আমাদের সারাদেশে অনেক মাহফিল হচ্ছে। এখানে কোন আলেম কারও বিরুদ্ধে না বলা। পাশাপাশি নারীদের ব্যাপারে সহনশীল আচরণ করতে হবে। কারণ বাংলাদেশকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একটা জঙ্গি, উগ্র ও এ বিশৃঙ্খল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে ভারতীয় মিডিয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ভিতরে-বাইরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানাবিধ চেষ্টা হচ্ছে।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, ৫৪ বছর ধরে কিন্তু মাহফিল বন্ধ করা হয়েছে, মসজিদের খুতবা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, ইসলামী বইপুস্তক, ইসলামের ইতিহাস-সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এসব কিছুতে তারা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। মানুষের সম্মলিত প্রচেষ্টায় এটা শেষ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মসজিদের ইমাম এবং বিভিন্ন দরবারের আলেম সমাজের দায়িত্ব আছে। অন্যদেরকে বাধা দেওয়া কোন আলেম সমাজের কাজ হতে পারে না, মুসলমানের কাজ হতে পারে না। যিনি অন্যায় করবেন তিনি এটা সাফার করবেন। সঠিক পর্দাপুশিদার সাথে নারীদের স্বাধীন কাজকর্মের ক্ষেত্রে আলমসমাজ যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। এই বার্তাটা সমস্ত মাহফিল থেকে দিতে হবে। বাংলাদেশে ৫ থেকে ৬ লক্ষ মাহফিল হয়, সবখানে যাতে একজন বক্তা আরেকজন বক্তার বিরুদ্ধে না বলি। আলেমদেরকে একমত হতে হবে ।
দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ বিরানব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশ। দেশ ক্রমান্বয়ে সমৃদ্ধ হচ্ছে। কোন ষড়যন্ত্র বাংলাদেশকে ঠেকাতে পারবেনা। এটা মুসলমানদের গর্বিত শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে । এ ব্যাপারে আলেম সমাজের সর্বাত্মক ঐক্য ও সহযোগিতা লাগবে। প্রত্যেকের প্রত্যেকের জায়গা থেকে ঐকের কাজটা করবেন। নারীরা যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখা- এতটুক পর্যন্ত আপনি করুন। নারীরা যাতে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে, আলেমরা যাতে তাদের শ্রেষ্ঠ বন্ধু হয় সেই ইমেজ তৈরি করতে হবে আলেমদের।ই