খবর অনলাইন:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার শতভাগ পরীক্ষিত উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তাদের পরীক্ষা করে কোনও লাভ নেই।
আজকের রাজনৈতিক কর্মীরা, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মানেন না, সততা মানেন না, নির্দেশনা মানেন না, জীবন দর্শন থেকে শিক্ষা নেন না, আর আপনি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক! এই দাবি কেন করেন? সৈনিক হলে চরিত্রবান হতে হবে, সৎ হতে হবে। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলের এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ক্ষমতাশীন দলের সাধারণ সম্পাদক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ওই সভার আয়োজন করা হয়।
দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে ইশারা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নেত্রী কেমন জীবনযাপন করেন, আপনারা কি দেখেন না? গণভবনে থাকেন রাত ২টায়, আপনি ফোন করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে পান, এটা অবাক বিষয়। তিন থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা ঘুমান, বাকি সময় দেশের কথা ভাবেন। বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা। এ দেশে দুজন মানুষ মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকবেন। একজন বঙ্গবন্ধু, আরেকজন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতার লাশ সিঁড়িতে পড়ে ছিল। গোপালগঞ্জে নিয়ে ৫৭০ সাবান আর রিলিফের কাপড় বঙ্গবন্ধুর দাফনে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৮-১৯ জন লোককে জানাজা পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারা ভেবেছিল ঢাকা থেকে দূরে টুঙ্গিপাড়ায়, সেই অজপাড়াগাঁয়ে বঙ্গবন্ধুকে মাটিচাপা দিলে বাংলাদেশ ভুলে যাবে। তাদের হিসাবের অঙ্ক কত যে ভুল, আজ টুঙ্গিপাড়া বাঙালির তীর্থখ্যাত, ৩২ নম্বরে জনতার ঢল নামে। শুধু ১৭ মার্চ নয়, প্রতিদিন বঙ্গবন্ধুর নামে সারা বাংলাদেশ থেকে ছুটে আসে অসংখ্য মানুষ।
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ জাতির পিতা। আমরা কী শিখবো তার কাছে? আমাদের রাজনীতি, আমরা কীভাবে শিক্ষা গ্রহণ করবো? রাজনীতিতে যে যোগ্যতা প্রয়োজন, তা কীভাবে অর্জন করবো। আমি বলবো, এ দেশে বঙ্গবন্ধুর পরিবারই সবচেয়ে বড় আদর্শের জায়গা। সততা, সাহস রাজনীতির প্রধান দুটি গুণ। সততা শিখবেন, সাহস জানবেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের দিকে তাকান, বঙ্গবন্ধুর দিকে তাকান, শেখ হাসিনার দিকে তাকান, শেখ রেহানার দিকে তাকান, সজীব ওয়াজেদ জয়ের দিকে তাকান, সায়েমা ওয়াজেদের দিকে তাকান।
একটি পরিবার ক্ষমতার গত ১৫ বছরেও কোনও বিকল্প সেন্টার কেউ করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে হাওয়া ভবন নেই, এই দেশে কোনও হাওয়া ভবন নেই। ১৫ বছরেও অলটারনেটিভ পাওয়ার সেন্টার এ দেশে কেউ করেনি। লেখাপড়া করেছেন অক্সফোর্ড, হারবার্ডে। এই পরিবারের সন্তানেরা মেধাবী। যে যেখানে আছে, সেখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মেধা দিয়ে, গায়ের জোরে নয়, লুটপাট করে নয়, দখল করে নয়, অর্থপাচার করে নয়। এই পরিবার সততার প্রতীক। প্রত্যেকেই সততার আদর্শে উজ্জীবিত।
সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশে আসেন আবার চলে যান উল্লেখ করে ক্ষমতাশীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নীরবে আসেন, নিঃশব্দে চলে যান। কেউ টেরও পায় না। কিন্তু তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটা নিঃশব্দ বিপ্লব হচ্ছে, আইসিটি বিপ্লব। এই বিপ্লবের স্থপতি হচ্ছেন জয়। প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নীরবে আবার চলে যাচ্ছেন, কোনও সাড়াশব্দ নেই। এই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পরিবার। শেখ রেহানার আজ লন্ডন শহরে নিজস্ব কোনও গাড়ি নেই। বাসে চড়ে, ট্রেনে চড়ে যাতায়াত করেন। আমাদের নেত্রী বলেন, সিমপল লিভিং, হাই থিংকিং। এই ম্যাথডে কর্মীদের উজ্জীবিত হতে হবে। এটা বঙ্গবন্ধুর মূলমন্ত্র, আমাদের নেত্রীর বক্তব্য এবং তার নির্দেশনা।
বঙ্গবন্ধু মানুষকে ভালোবাসার রাজনীতির স্রষ্টা আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, তার উত্তরাধিকার আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা তা বহন করে চলেছেন। ৭৫-এর পর এই পরিবারকে কলঙ্কিত করা, এই পরিবারের চরিত্র হননের অনেক অপচেষ্টা জিয়াউর রহমান থেকে অনেকেই করেছে। নিষিদ্ধ করেছে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা দিবসে, বিজয় দিবসে। বিজয়ের মহানায়ক নেই, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস আছে।
আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, এ্যাড. কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, ডা. দীপু মনি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী।