অন্তবর্তী কালীন সরকারের কাছে প্রবাসীদের প্রত্যাশা – নুরে আলম (জাহাঙ্গীর)

২৪ এর গণ অভ্যুত্থানে অনেক রক্ত আর তাজা লাশের উপর ভর করে আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের সম্মুখ যুদ্ধে ছিলো আমাদেরই প্রিয় ছোট ভাই-বোনেরা। তাদেরকে সাহস যুগিয়েছে দেশের আপামর জনতা। তাদেরই বৃহত্তম একটি অংশ রেমিট্যান্স যোদ্ধা বা প্রবাসী।
সম্মুখ যোদ্ধাদের সমর্থনে প্রবাসীরা বন্ধ রেখেছিল রেমিট্যান্স পাঠানো।
স্বৈরাচার পতনের পরপরই দেশ দেখলো এক সংকটময় পরিস্থিতি। একদিকে ভারত থেকে আসা ভয়াবহ বন্যা, অন্য দিকে পালানো সরকারের প্রেতাত্মাদের তৈরি করা ভিন্ন ভিন্ন নতুন সংকট, অযৌক্তিক দাবী আদায়ের নামে মিছিল মিটিং, বাজার সিন্ডিকেট সহ বিভিন্ন পন্থায় দেশের স্বাধীনতাকে নষ্ট করার ব্যার্থ চেষ্টা। রাষ্ট্রের উপর নেমে এসেছিল ঋণের কালো ছায়া। দূর্নীতিবাজরা বিদেশে টাকা পাচারের মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল। ঠিক তখনই প্রবাসী নামক রেমিট্যান্স যোদ্ধারা এগিয়ে এসে দেশ পুনর্গঠনে নিজেদের সর্বাত্মক চেষ্টার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। দু-মাসের ব্যবধানে রিজার্ভের ঘাটতি পূরণ করে বিদেশি ঋণ দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করে এই দেশ। প্রবাসীরা সবসময় দেশকে নিজের সব উজাড় করে দিয়ে এসেছে, বিনিময়ে কিছুই চায়নি। বঞ্চিত হয়েছে অনেক নাগরিক অধিকার/সুবিধা থেকে।

অন্তবর্তী সরকারের কাছে প্রবাসীদের কিছু প্রত্যাশার কথা তুলে ধরছি,

১/ মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে তার যৌবন কাল। যে সকল প্রবাসীরা দেশ ও মাতৃকার উন্নয়নে নিজের যৌবন কাল পরদেশে কাটিয়ে দেয় সেই সকল রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অসহায়ত্বের সময় তাদের জন্য পেনশন এর ব্যাবস্থা করার মাধ্যমে প্রবাসীদের সম্মানিত করতে হবে। যেভাবে সরকারি চাকরিজীবীরা ৩০ বছর দেশের জন্য শ্রম দেওয়ার পর দেশ তাদেরকে পেনশনের মাধ্যমে সম্মানিত করে, ঠিক তেমনি ভাবে যে সমস্ত প্রবাসীরা ৩০ বছর পরদেশে শ্রমের মাধ্যমে দেশের চালিকাশক্তি দৃঢ়ভাবে টিকিয়ে রাখে তাদেরকে পেনশন দেওয়া হবে না কেন?
নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা, তারা যেন প্রবাসীদের জন্য পেনশন ব্যাবস্থা চালু করে।

২/ ভিসা খাতে সিন্ডিকেট ভেঙে ভিসার দাম কমিয়ে আনা, ইন্ডিয়া কিংবা নেপালের শ্রমিকরা যেখানে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার ভেতর শ্রমিক ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের যেকোন দেশে যেতে পারে, সেখানে বাংলাদেশীদের ৩-৫ লাখ টাকা খরচ হয়। এই খরচ কমিয়ে আনতে হবে।

৩/ বিমানের টিকেটের দাম কমিয়ে আনতে হবে। কাতার থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার সিঙ্গেল টিকেট ৫০০ রিয়ালের মধ্যে পাওয়া যায়, যা বাংলাদেশী টাকায় ১৫-১৬ হাজারের মতো। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কাতার আসতে হলে ১৫শ থেকে ২ হাজার রিয়াল খরচ হয়, যা বাংলাদেশী টাকায় ৫০-৭০ হাজার টাকা। অন্তবর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা, তারা যেন বিমানের সিন্ডিকেট ভেঙে টিকিট সহজলভ্য করে।

৪/ ইউরোপের প্রতিটি দেশের দূতাবাস কিংবা ভিএফএস (ভিসা কেন্দ্র) স্থাপন করা। ইউরোপের চাকরি প্রত্যাশীরা ওয়ার্কপার্মিট সত্যায়িত করতে কিংবা পাসপোর্টে ভিসা লাগাতে দীর্ঘদিন ইন্ডিয়া কিংবা নেপালে অবস্থান করতে হয়। যার কারণে ইউরোপ যাত্রা অনেক ব্যায়বহুল হয়ে যায় এবং ইন্ডিয়া কিংবা নেপালের ভিসা পেতে ও সেখানে অবস্থান করতে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই বাংলাদেশে ইউরোপের দূতাবাস কিংবা ভিএফএস খোলার দাবী জানাই।

৫/ মিনিমাম ৫টি নতুন মুবাইল কর মুক্ত রাখা। একজন প্রবাসী দীর্ঘদিন পর দেশে যাওয়ার সময় অনেক আত্মীয়ের আবদার থাকে একটি মুবাইল উপহারের। নিকটাত্মীয়দের খুশি করতে অনেকের ৪-৫টি মুবাইল নিতে হয়, পরবর্তীতে বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হতে হয়। অন্তবর্তী কালীল সরকারের কাছে প্রত্যাশা তারা যেন রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ব্যাবহৃত মুবাইল ছাড়া আরো ৪-৫টি মুবাইল করমুক্ত করেন।

সর্বশেষ নতুন অন্তবর্তী কালীল সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দেশের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি কামনা করছি। সকল মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত হউক। দেশ ও মাতৃকার তরে যারা জীবন বিলিয়েছে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি৷
আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতবাসী করুক।

লেখক : কাতার প্রবাসী সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতিবিদ।

মন্তব্য করুন