৭ বছরেও শেষ হয়নি সেতুর নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে কয়েক লাখ মানুষ

ক্যাপশনঃ সেতু না হওয়ায় এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ট্রলারে নদী পারাপার হন হাজারো মানুষ
নিজস্ব প্রতিনিধি : ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ৭ বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া হয় শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা সদরের কীর্তিনাশা নদীর ওপর নির্মিত ভাষা-সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সেতুটি। পাশাপাশি নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। কিন্তু ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও সেতু নির্মাণের অগ্রগতি মাত্র ৫৫ শতাংশ। এর মধ্যে দফায় দফায় পরিবর্তন হয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, বারবার বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। আবারও গত ০৯ জুন শেষ হওয়ার পর আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। বাকী কাজ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

তবে নতুন সেতু নির্মাণ না হলেও এতদিন পায়ে হেটে পুরনো সেতুটি দিয়ে নদী পার হতে পারতো স্থানীয়রা। কিন্তু ৬ মাস আগে পুরনো সেতুটি ভেঙে ফেলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকে স্থানীয় কয়েক লাখ মানুষের নদী পার হওয়ার একমাত্র ভরসা নৌকা। সম্প্রতি অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই হওয়ায় নৌকা ডুবির ঘটনাও ঘটে। তবে স্থানীয়দের তাৎক্ষনিক প্রচেষ্টায় কোন প্রানহানীর ঘটনা ঘটেনি। এদিকে ভোগান্তি কমাতে একটি অস্থায়ী বেইলী সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটিরও কোন অগ্রগতি নেই। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের।

নড়িয়া উপজেলা এলজিইডি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকার সঙ্গে নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছরে কীর্তিনাশা নদীর উপর নির্মাণ করা হয় ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সেতু। সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় এবং পিলারের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ২০১৫ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। ২ বছর ভারী যানবাহন চলাচলের নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখে ২০১৭ সালে সেতুটি নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে এলজিইডি। পাশাপাশি সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য পুরাপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ১৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি নির্মাণে ১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে দরপত্র আহ্বান করে। কাজটি পান মের্সাস নাভানা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের জুন মাসে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কয়েকবার মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজটি শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একটি ভায়াডাক্ট, এভার মেন্ট ওয়েল ও দুটি পিলারের আংশিক সহ ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করে কাজটি বন্ধ করে দেয় তারা। কাজটি বন্ধ করে চলে গেলেও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি নড়িয়া উপজেলা এলজিইডি।

২০২১ সালের জুন মাসে নকশায় পরিবর্তন করে উড়াল সেতু নামে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনরায় দরপত্র আহবান করে নড়িয়া এলজিইডি। কাজ পায় মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ। বারবার মেয়াদ বাড়িয়েও কাজটি শেষ করতে পারছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আবারও গত ০৯ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রকল্পের মেয়াদ আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে।

উপজেলা এলজিইডির দাবী বারবার নকশা পরিবর্তন ও জায়গা অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন সেতুটি নির্মাণ সম্ভব হয়নি। বর্তমানে সেতুটির ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। মানুষের ভোগান্তি এড়াতে অস্থায়ী বেইলি সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে।

নড়িয়া বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ আলম বলেন, ঠিকাদার ও এলজিইডির গাফিলতির কারণে আমাদের নড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও শহরের জনসাধারণকে বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও মালামাল পরিবহণে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার এক বাসিন্দা বলেন, ঢাকা থেকে সড়ক পথে ভেদরগঞ্জ যাতায়াতের সহজ মাধ্যম এটি। ব্রিজটি না হওয়ায় আমরা ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে নদী পার হচ্ছি।

মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ওয়াহাব মাদবরের সঙ্গে তার মোবাইল নাম্বারে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

নড়িয়া উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী শাহাব উদ্দিন খান বলেন, প্রথমে যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়েছিল সে করতে না পারায় আমরা তার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার করি। বর্তমানে যে ঠিকাদার কাজ করছেন তিনি প্রায় ৫৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছেন। তার কাজের মেয়াদ শেষ হলেও তাকে আরও মেয়াদ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়েছে।ই

মন্তব্য করুন