
নিজস্ব প্রতিনিধি : ২ মাসের মধ্যে দেশে একাধিক রাজনৈতিক দল আসবে বলে জানিয়েছেন জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি কখনোই কোনো রাজনৈতিক দল হবে না। জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে কাজ করবে।
শুক্রবার পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়ামে জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব জানান।
সারজিস আলম বলেন, রাজনৈতিক দল রেজিস্ট্রেশন করে সরাসরি রাজনীতি করে ভোটের নির্বাচনে যায়। জাতীয় নাগরিক কমিটি আগামীর বাংলাদেশে লিডারশিপ তৈরি করবে। পাশাপাশি প্রেসার গ্রুপ হিসাবে কাজ করবে। একই সঙ্গে এটি জাতীয় পর্যায়ের একটি ইনস্টিটিউট হবে। বিগত ১৬ বছরে শেখ হাসিনা স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে দেশে লিডার তৈরি হয়নি। তৈরি হয়েছে কিছু দাস আর নীরব কিছু দর্শক। আগামীর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো যদি উন্নয়ন করতে চাই, তাহলে আগে আমাদের লিডার তৈরি করতে হবে। লিডার হিসাবে যাদের শিক্ষা, দক্ষতা ও জ্ঞান থাকবে। লিডার হিসাবে এই মানসিকতা থাকবে যে কেউ অনুসারী না, সবাই সহযোদ্ধা।
তিনি বলেন, এই অভু্যত্থানে যারা ছিল, তাদের নিয়েই হয়তো এই রাজনৈতিক দল আসবে। তবে যে রাজনৈতিক দলে যাবে, তারা নাগরিক কমিটিতে থাকতে পারবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ যদি ওই রাজনৈতিক দলে যেতে চায়, তাহলে তাকে তার সব পদ ছেড়ে যেতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তার জায়গায়ই থাকবে। আবার যদি কেউ ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠে, তার বিরুদ্ধে আবারও এখান থেকেই যে কেউ আন্দোলনের ডাক দিতে পারবে।
সারজিস আলম আরও বলেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলের মতো কিছু প্রকল্প সামনে রেখে দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থ পাচার করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ১৬ বছরে উন্নয়ন দেখিয়েছে মেট্রো রেল, পদ্মা সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলের মতো কিছু অবকাঠামো দিয়ে। কিন্তু একটা দেশের উন্নতি কেবল কিছু অবকাঠামো দিয়ে হতে পারে না। এই অবকাঠামোগুলোর মাধ্যমে মানুষের চোখের সামনে দিয়ে ভেতরে ভেতরে দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থ পাচার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যে প্রকল্প ২০ হাজার কোটি টাকায় হয়ে যেত, সেই প্রকল্প চুরি, বাটপাড়ি সিন্ডিকেট, লুটপাট, স্বজনপ্রীতি করে যখন ৩৫ হাজার কোটি টাকায় ঠেকায়, তখন সেটি দেশের জন্য সমস্যা। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। চীন এ প্রকল্পে যখন সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসে, তখন ভারতের দিকে তাকিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এ প্রকল্প আর সামনের দিকে আগায় না তখন তা বাংলাদেশের জন্য সমস্যা।
সারজিস আলম বলেন, একটি সিস্টেম ধ্বংস করতে সময় লাগে না। কিন্তু গড়তে সময় লাগে। আমরা তাত্ক্ষণিক রেজাল্ট চাই। আমাদের মগজে-মননে দাসত্ব ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশে তদবিরের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। এখনো আমার কাছে তদবির আসে। এটি ২/১ দিনে শেষ হবে না। সময় লাগবে। আমরা দেখাব যে তদবির ছাড়াও কাজ হয়।
মামলা বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির জন্য কেউ শহিদ হননি : ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম অভিযোগ করে বলেছেন, ঠাকুরগাঁওয়ে মামলা বাণিজ্য হচ্ছে। মামলা না দেওয়ার জন্য টাকা নেওয়া হয়, আবার দেওয়ার পর নাম কাটার জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয় অলরেডি বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। কিন্তু এমন মামলা বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির জন্য কেউ শহিদ হননি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবে জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত রাইজিং ঠাকুরগাঁও শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি দুঃখ করে এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, বড় বড় ব্যবসায়ী সমিতিকে রাতের বেলায় বাসায় ডেকে নেওয়া হয়। সেখান থেকে টাকার অ্যামাউন্ট ফিক্সড করা হয়।
তিনি বলেন, ওই আগস্টের তিন-চার তারিখ ঠাকুরগাঁওয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মিছিল দেখে আমাদের শরীর শিউরে উঠেছিল। সেই ঠাকুরগাঁওয়ে যদি এইরকম চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি ও এরকম বাণিজ্য চলতে থাকে, তাহলে মনে হচ্ছে অভুত্থানকে আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষাকে পুঁজি করে টিসু্য পেপারের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে।
সারজিস আলম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে কেউ যদি এই অবস্থানকে পুঁজি করে মামলা বাণিজ্য করে, মামলা দিয়ে মানুষকে জিম্মি করে কোর্টে চক্কর দেখায়। সে যেই হোক, আমি তার বিরুদ্ধে কথা বলবোই।
উলে্লখ্য, ৫ আগস্টের পর হত্যা-বিস্ফোরক, চাঁদাবাজি, মারামারির অভিযোগে ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়াও ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, কৃষক, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।যু