১১২ দিন পর ক্লাসে ফিরলো ঢাবি শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিনিধি : ২ জুন থেকে ঈদুল আজহার ছুটি কাটিয়ে ১ জুলাই ক্লাসে ফেরার কথা থাকলেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিমের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতি ও পরবর্তীতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দীর্ঘ ১১২ দিন পর গতকাল রোববার থেকে শুরু হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস। এতদিন পর একটি ভয়হীন মুক্ত ক্যাম্পাসে ফিরতে পেরে উচ্ছসিত ছিল শিক্ষার্থীরা। যদিও সব বিভাগের ক্লাস এদিন শুরু হয়নি।

অনেক বিভাগের ২/১ টি ব্যাচের ক্লাস শুরু হলেও বাকিদের শুরু হয়নি। চলমান পরীক্ষাগুলোও শুরু হবে আগামী ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে। গত ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় গতকাল থেকে ক্লাস শুরুর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ১ম বর্ষের ক্লাস ব্যতীত অন্য সকল বর্ষের ক্লাস রোববার থেকে শুরু হয়েছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ১ম বর্ষের ক্লাস আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার থেকে শুরু করা হবে।

এতে বলা হয়, গতকাল ক্লাস শুরুর প্রাক্কালে সকাল সাড়ে ৯টায় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন চত্বরে ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা কর্মসূচি পালন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমদ খান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন।

এসময় কর্মসূচিতে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) প্রফেসর ড. মামুন আহমেদ, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ড. সায়মা হক বিদিশা, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সাইফুদ্দীন আহমেদ এবং বিভিন্ন অনুষদের ডিন। এসময় শান্তির প্রতীক হিসেবে পায়রা উড়ানো হয়।
ঢাবি ভিসি ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও কার্যকরভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গণমাধ্যম কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা এক ধরনের মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছে। এই ট্রমা নিরসন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ঘাটতি পুষিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এরপর, সকাল সাড়ে ১০টায় ভিসি ড. নিয়াজ আহমদ খান বিভিন্ন অনুষদের ক্লাসরুম পরিদর্শন করেন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। সৌহার্দ্যপূর্ণ, হৃদ্যতাপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ক্লাস অনুষ্ঠিত হওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করে ঘোষিত সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে গত জুন থেকে আন্দোলন করলে জুলাইয়ের শুরু থেকে কার্যত বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম।যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ১৭ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর সকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার দোসরদের সরিয়ে নতুন প্রশাসন নিয়োগ দেওয়া হয়। একই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, প্রক্টর নতুন ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

নতুন প্রশাসন আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ফিরে এসেছে প্রশাসনিক ক্ষমতা। যা আগে ছিল কার্যত ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের হাতে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত ইতিহাস ভেঙে শিক্ষার্থীদের লিগ্যাল সিট দেওয়া হয়েছে অনেক হলে। কিছু কিছু হলে এখনো তা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।ই

মন্তব্য করুন