সংবাদমাধ্যম যত বেশি প্রশ্ন করবে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলরা তত সচেতন হবে -মাহফুজ আলম

অনলাইন ডেস্ক : তথ্য ও স¤প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, সংবাদমাধ্যম যত বেশি প্রশ্ন করবে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলরা তত বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল হবেন। অতএব সংবাদমাধ্যমকে প্রশ্ন করতেই হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সবকিছু লিখতে পারে। সংবাদমাধ্যমকে অবশ্যই প্রশ্ন করতে হবে। সংবাদমাধ্যম যত বেশি প্রশ্ন করবে রাষ্ট্রে যারা দায়িত্বশীল আছেন, তারা আরও বেশি দায়িত্বশীল আচরণ করতে বাধ্য হবেন। সুতরাং সংবাদ মাধ্যমকে প্রশ্ন করতেই হবে, প্রশ্ন তুলতেই হবে। সরকার বাধা দিচ্ছে না, মানুষ সব কিছু লিখতে পারছে। গতকাল রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে ‘ব্রেভ নিউ বাংলাদেশ : রিফর্ম রোডম্যাপ ফর প্রেস ফ্রিডম’ শীর্ষক এক সেমিনারে মাহফুজ আলম এসব কথা বলেন। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে যৌথভাবে এই সেমিনার আয়োজন করে ইউনেস্কো ঢাকা অফিস, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং সুইডেন দূতাবাস। বিজ্ঞাপনের হার পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, বিজ্ঞাপনের হার পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে ডিএফপি সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে যাদের প্রচার সংখ্যা দুই হাজারও না, কিন্তু এক লাখ, দুই লাখ দেখিয়ে রাষ্ট্রের টাকা লুটপাট করেছে, তাদের তথ্য উন্মোচন করা হবে।

উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেন,সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা ও মিথ্যা মামলা নিয়ে সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছে। ১৫ বছরের অপশাসনের ক্ষোভের প্রশমনে বিভিন্ন গোষ্ঠী এসব মামলা করছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, সংস্কারের মধ্য দিয়ে এমন সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সরকার লিখতে বাধা দিচ্ছে না জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, মানুষ সব কিছু লিখতে পারছেন। স¤প্রতি গণমাধ্যমে সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের মেয়ে একটি লেখা লিখেছেন। সেখানে লেখা ছাপাতে কোনো প্রকারের বাধা দেওয়া হয়নি। মামলা যে কেউ করতে পারে। সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে। সরকার অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেফতার করছে কি না, সেখানে কোনো সীমাবদ্ধতা আছে কি না সেটা নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে পারেন, যোগ করেন তিনি। মামলা বাণিজ্যকে পুরোনো সংস্কৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন ক্ষমতার ভরকেন্দ্র অনেকগুলো। অনেক ধরনের রাজনৈতিক দল এখানে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে আছে। শুধু একমাত্র সরকারে নেই। সব ধরনের ভরকেন্দ্র সামলে সরকার চালাতে হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মামলা দেয়। স্থানীয়ভাবে মামলা বাণিজ্য বাংলাদেশে নতুন কোন সংস্কৃতি না। এটা বন্ধ করতে হলে সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সেটা না হলে ৬০-৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হবে। অজানা লোকের বিরুদ্ধে মামলা হবে। গায়বি মামলা হয়ে ধরপাকড় চলতে থাকবে। কেবল সাংবাদিক নয়। আমি-আপনি এর স্বীকার হতে পারি। আমরা এর বিরুদ্ধে। আমরা কিছুই করতে চাই না, সংবাদমাধ্যম যা ইচ্ছা লেখার অধিকার রাখে। সংবাদ মাধ্যমকে অবশ্যই প্রশ্ন করতে হবে। যত বেশি সংবাদ মাধ্যম প্রশ্ন করে রাষ্ট্রের ভেতর দায়িত্বশীল যারা আছেন, তারা আরও বেশি দায়িত্বশীল আচরণ করতে বাধ্য। সংবাদ মাধ্যমকে প্রশ্ন করতে হবে, প্রশ্ন তুলতে হবে। কিন্তু এটার মেট্রিক্স কী, এটা কীভাবে কাজ করবে। জবাবদিহি করাটাই কী মুখ্য নাকি আসলে আরও ১০টা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এটা ভাবা দরকার। কিন্তু প্রশ্নটা করা দরকার, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও প্রশ্ন করতে হবে। আমাদের সরকার প্রশ্ন নিতে রাজি আছে।

রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দশটা ভালো আইন করে দিলাম, কিন্তু রাজনৈতিক সরকার যদি এ আইনটাকে যদি কন্টিনিউ না করে, ওই কমিটমেন্ট যদি জনগণের প্রতি তাদের না থাকে, তাহলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্ভব না। সাংবাদিক সুরক্ষা আইন তাৎক্ষণিকভাবে করা সম্ভব উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে ‘ওয়ান হাউজ ওয়ান মিডিয়া’ যে নীতির কথা বলা হয়েছে, তা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সাংবাদিকতা সুরক্ষা আইনের কিছু কিছু ধারা নিয়ে কমিশনের সঙ্গে বসা দরকার, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পাঠানো প্রয়োজন, কোনো লুপ হোল আছে কিনা জানার জন্য। এটুকুর জন্য আমরা অপেক্ষায় আছি। এরপর আমরা এটি কেবিনেটে তুলব। আইন আকারে যেন আসে, চেষ্টা করব। স¤প্রচার নীতিমালা শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, টেলিভিশন এবং অনলাইন পত্রিকাগুলোকে আমরা কীভাবে পুনর্মূল্যায়ন করবো,এগুলোর লাইসেন্স কীভাবে দেওয়া হয়েছে। এসবও দেখা হচ্ছে। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ, এএফপির ব্যুরো চিফ শেখ সাবিহা আলম, বিজেসির চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল হক রাজা এবং টাইমস মিডিয়া গ্রæপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ। সঞ্চালনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।ই

মন্তব্য করুন