“শিশুশ্রম বৃদ্ধিতে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কি দায়ী নন”

লেখক__মো:ওসমান হোসেন সাকিব
_______________________________________
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নশীল দেশ হলেও বাংলাদেশের ৭০% মানুষ এখনো মধ্যবিত্ত তথা দরিদ্রতর জীবন-যাপন করে।যার মধ্যে ৮০% মানুষ এখনো কৃষি ও বিভিন্ন শ্রমজীবী কাজের সাথে সম্পৃক্ত।যাদের অনেক দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়।
বাংলাদেশের শতকরা ৮০% মানুষ আর্থিকভাবে অসচ্ছল বিধায় গ্রাম-গঞ্জে তাদের বসবাস বেশি। পারিবারিকভাবে অসচ্ছল থাকে বিধায় শিক্ষা তথা অন্যান্য সকল সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। এজন্য তারা বিভিন্ন কায়িকশ্রম বিষয়ক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকে। যেমন কৃষি(ক্ষেত-খামারের কাজ), রিকশা চালানো, ভ্যান চালানো, ইটের ভাটায় কাজ করা, ট্রাকে বালু পিকাপ করা ইত্যাদি।দুভাগ্যবশত, যেটা সবসময় সত্য হয়ে থাকে বেশিভাগ ছেলেদের উপযুক্ত না হলে ও পরিবারের ভরণপোষণ দায়িত্ব কাধেঁ নিতে হয়।যেটার ক্ষেত্রে দেশের পরিস্থিতি চরমভাবে দায়ী থাকে বলে আমি মনে করি।
বর্তমানে দেশের বাজারে নিত্য-পণ্যের দাম চড়া।যেটা দেশের শতকরা ৮০% লোকের ক্রয়সীমার বাইরে বললেই চলে।আমি যদি বিষয়টি একটু পর্যবেক্ষক করে দেখায় আপনাদের, তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারবেন কেন দেশের শিশুশ্রমে এত রমরম অবস্থা?কেনই বা তারা শিক্ষার বয়সের এই ধরণের কাজের সাথে সম্পৃক্ত? তারা কি আসলেই পরিস্থিতি জন্য বাধ্য নাকি নন? কেন তারা এত অল্প বয়সে কায়িকশ্রমের সাথে যুক্ত? তারা কি আদৌ তা করতে উপযুক্ত?
বতর্মানে আপনি যদি নিত্য-পণ্যের বাজার সরেজমিনে দেখেন,অবশ্যই বুঝতে পারবেন কি আছে শ্রমজীবী মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে? আপনি প্রথমত বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাতের কথাই চিন্তা করেন।আজ থেকে ৫ বছর আগে যে চাউল মানুষ কেজিপ্রতি ( ৩০-৪০) টাকা দরে কিনত,তা এখন (৭০-৮০) টাকা।চিনি যেটা মানুষ কেজিপ্রতি (৬০-৭০) টাকা কিনত,তা এখন কেজিপ্রতি কিনা পড়ে( ১৪০-১৫০) টাকা।সয়াবিন তেল যেটা মানুষ বোলতজাত টা কিনত (৯০-১০০) টাকা দরে,তা এখন কিনা লাগে (১৯০-২০০) টাকা।এইরকম ডাবলের ডাবল দরেই কিনতে হচ্ছে প্রায় সব প্রয়োজনীয় সামগ্রী।এইরকম আলু,আটা-ময়দা, দুধ, পেয়াঁজ, রসুন, চা পাতা, মশলা, মরিচ এবং বিভিন্ন ধরণের মেহমান সামগ্রী পায়েস, হালিম,ক্ষীরপুলি ইত্যাদি।

আপনি যখন নিত্য-পণ্য থেকে বের হয়ে ওষুধের দোকানে যাবেন, সেখানে ও দেখবেন সব ওষুধের দাম আজ থেকে পাচঁ বছর আগের দামের থেকে ডাবল পরিমাণ ও বাড়তি।আপনি যখন ইমারত তৈরির জিনিস পত্র ক্রয় করতে যাবেন, সেখানে ও দেখবেন একিই অবস্থা।এগুলোর মত একদম বলতে গেলেই বাংলাদেশে প্রায় সবকিছুতে একটা বাড়তি মূল্য দিতে হচ্ছে জনগণকে প্রতিনিয়ত।যেটা বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ২০%জনগণের একটু সম্ভব হলে ও ৮০% মানুষের পক্ষে তা বরাবরই কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে।
এই কঠিনতা তো ভার তো প্রতিনিয়ত টানতে হচ্ছে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে।প্রতিনিয়ত বিভিন্ন নিউজে দেখা যায়, এই ভার টানতে গিয়ে কত বৃদ্ধা বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ও মিলছে না দুমুঠো খোরাক; যার দ্বারা মিলবে পরিবারের হাসি।
নিত্য-পণ্যের চরমমূল্যের এই সময়ে ঢাকা-শহরে দেখা যায়, উপযুক্ত ব্যক্তির থেকে ও অনুপযুক্ত(যারা এখনো কায়িক শ্রমের উপযুক্ত নন) ছেলে-পুলেই বেশি।যারা ফুটপাতে সবজি দোকান, রিকশা ও সিএনজি চালানো থেকে শুরু করে যাবতীয় শ্রমের সাথে সংযুক্ত।যাদের একমাত্র লক্ষ্য থাকে পরিবারের সদস্যদের কিভাবে দুবেলা খাবার যোগানো যায়।যাদেরকে কেউ বাধ্য ও করেন না,আবার পড়ালেখা ও ছাড়তে বলেন না।একমাত্র পরিস্থিতিই বাধ্য করে।
তারা ও জানে কিভাবে হাসতে হয়, কিভাবে ভালো পোশাক পড়ে চলা-ফেরা করতে হয়।তাদেরকে একমাত্র পরিস্থিতিই সাক্ষী করে, তোমার সবকিছুর চাইতে বাচাঁটা প্রয়োজনীয়।বাংলাদেশের সংবিধানে লিখিত আছে, “শিশুশ্রম আইনত অপরাধ”। আমি সম্মানিত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, কোনটি বিবেচনায় আপনি আইন টি করেছেন? যখন আপনার করা পরিস্থিতিই ওই ছেলেটিকে শিশুশ্রমে বাধ্য করে।বর্তমান বাংলাদেশের ৮০% দরিদ্র জনগোষ্ঠী আজ এতদিন ধরেই চরমতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে, তা নিয়ে কি আপনাদের কোনো মাথা-ব্যথা আছে? দুবেলা খাবারের অভাবে যে মানুষ মারা যাচ্ছে, টাকার অভাবে যে অনেক ছেলে-পুলে শিক্ষার সুযোগ হারাচ্ছে, তা নিয়ে কি আপনাদের কোনো মাথা-ব্যথা আছে?
উপরোক্ত সকল বিষয় বিবেচনায় তাহলে আমি ধরে নিতে পারিনা,শিশুশ্রম কে পরিস্থিতি উৎসাহিত করছে?

আমি মাননীয় সরকারের কাছে বিনীত আবেদন জানাচ্ছি” ,বাংলাদেশ যেহেতু একটি দরিদ্র দেশ সেহেতু দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কে প্রাধান্য না দিয়ে নিত্য-পণ্যের দামসহ সমস্ত কিছুর দাম জনগণের অনুকূলে তথা ক্রয়সীমার মধ্যে রাখবেন, দেখবেন প্রত্যন্ত জায়গায় শিশুশ্রম যে একটা রমরম অবস্থা তা অনেকটাই কমে আসবে।কারণ (অচ্ছলতা, প্রযোজনীয় সামগ্রীর অসহনীয় পর্যায়) এসব বিষয় শিশুশ্রমকে উৎসাহিত করে।”

আসুন,
“পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি, শিশুশ্রম বন্ধ করি।”
লেখক:-______প্রাবন্ধিক।

মন্তব্য করুন