শিশুকে টিকা দিতে না পারায় দুশ্চিন্তায় অভিভাবক।
1 min read
শিশুকে টিকা দিতে না পারায় দুশ্চিন্তায় অভিভাবক। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সন্তানকে টিকা দিতে পারছেন না অভিভাবকেরা। রিয়াজ উদ্দিন মোবারক পেশায় বস্ত্র প্রকৌশলী। স্ত্রী ও চার মাসের কন্যা সন্তানকে নিয়ে থাকেন রাজধানীর টোলারবাগে। জন্মের পর থেকে মেয়েকে একটি টিকা দিয়েছেন। করোনার প্রাদুর্ভাবে টোলারবাগ এলাকা লকডাউন থাকায় বাকি গুলো শিশুকে টিকা এখনও দিতে পারেননি। বাসার পাশে টিকাকেন্দ্র ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিও বন্ধ রয়েছে। সন্তানকে সময়মতো টিকা দিতে না পেরে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তার পরিবার।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে এখন ঘরে থাকছেন বেশিরভাগ মানুষ।
এই অবরুদ্ধ সময়ের মধ্যেই পেরিয়ে যাচ্ছে অনেক শিশুর টিকা দেওয়ার নির্ধারিত সময়। এতে বাবা-মায়েরা উদ্বিগ্ন আছেন।
বিশেষ করে নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা বেশি।
কারণ অনেকেরই টিকা দেওয়া এখনও শুরুই করা যায়নি।
শিশুদের টিকা দেওয়া বন্ধ থাকায় বিভিন্ন রকমের সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন পরিবারের লোকজন।
বিশেষ করে হাম-রুবেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ টিকাদান বন্ধ থাকায় বেশি উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
করোনার কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৪টি দেশে হাম ও রুবেলার টিকাদান কার্যক্রম দেরিতে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়।
এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা ছিল- যেসব দেশে হামের উপদ্রব নেই, সেসব দেশ করোনা মহামারির সময় এ ধরনের প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে পারে।
কিন্তু বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় এ বছর হাম-রুবেলার প্রাদুর্ভাব আবার বেড়ে গেছে।
শিশু বিশেষজ্ঞরা জানান, শিশুদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধের প্রাথমিক ক্ষমতা গড়ে ওঠে টিকার মাধ্যমে।
টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) কারণে দেশে মা ও শিশুমৃত্যুর হার কমানোর পাশাপাশি পঙ্গুত্ব রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
এই সফলতার জন্য গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ইপিআইর আওতায় সারাদেশে মা ও শিশুকে ১০টি সংক্রামক রোগের নিয়মিত টিকা দেওয়া হয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন গড়ে ছয় থেকে সাত হাজার কেন্দ্রে এ কর্মসূচি চলে।
সিটি করপোরেশন
সিটি করপোরেশন, বিভিন্ন হাসপাতাল এবং উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালের স্থায়ী কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হয়। সিটি করপোরেশনের বাইরে সারাদেশে এক লাখ ২০ হাজার টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে। কেন্দ্রগুলো অস্থায়ী এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যক্তিবিশেষের বাসাবাড়িতে অবস্থিত। ওইসব বাড়ির লোকজনের বহিরাগতদের সমাগমে বিব্রত বোধ করা এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় কেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া গত ১৮ মার্চ থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ৯ মাস থেকে ১০ বছরের নিচের প্রায় তিন কোটি ৪০ লাখ শিশুকে এক ডোজ করে ‘এমআর টিকা’ দেওয়ার ক্যাম্পেইন পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে হাম ও রুবেলাসহ সব রকম টিকাদান কর্মসূচিই স্থগিত করা হয়। তবে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচি চালু রয়েছে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ সন্তান নিয়ে সেখানে যেতে পারছেন না।
উপকূলীয় লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুর রহিম আমাদের খবরকে বলেন, লকডাউন এলাকাগুলোতে টিকা দেওয়া বন্ধ রয়েছে।
আগের মতো গ্রামে কিংবা বাড়িতে বাড়িতে টিকাকেন্দ্র নেই, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ইপিআই কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়।
ফলে টিকা কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা কেন্দ্র রয়েছে। সময়মতো শিশুকে সেখানে নিয়ে টিকা দেওয়া যাবে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনি হামের টিকা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কর্মীদের।
এ জন্য নিজ উদ্যোগে কিছু পিপিই সংগ্রহ করেছেন বলে জানান ডা. আব্দুর রহিম।
পুরো উপজেলায় কেবল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকার ব্যবস্থা থাকায় দূর থেকে লকডাউনের মধ্যে মানুষ সন্তানকে টিকা দিতে আসছেন না।
সময়মতো টিকা না দিলে সমস্যা হতে পারে- এই আশঙ্কায় শহরের সচ্ছল অনেক পরিবার বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন টিকা দেওয়ার জন্য।
সেখানেও ভ্যাকসিন সংকট ও ক্লিনিকগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টিকাদান প্রায় বন্ধ।
দুই-একজন চিকিৎসক ব্যক্তিগত উদ্যোগে টিকা দিচ্ছেন।
কিন্তু বাজারে ভ্যাকসিনের জোগান না থাকায় ঠিকমতো সেই কাজ হচ্ছে না বলে তারা জানিয়েছেন।
ডা. তালহা তালুকদার বলেন
রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত উইমেন্স চিলড্রেনস অ্যান্ড জেনারেল হসপিটালের চিকিৎসক ডা. তালহা তালুকদার বলেন, আমি শিশুদের টিকা দিচ্ছি।
কিন্তু বাজারে ভ্যাকসিনের যথেষ্ট জোগান না থাকায় খুব সমস্যা হচ্ছে।
তিনি বলেন, শিশুদের নিরাপত্তার জন্যই টিকাকরণ বন্ধ রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিশুদের পক্ষে ভালো নয়। সময়ের টিকা সময়ে না হলে হামসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে জরুরি টিকাগুলো সময়মতো দেওয়া উচিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনাভাইরাস লকডাউনের কারণে বিশ্বব্যাপী এ বছর প্রায় ১১ কোটি ৭০ লাখ শিশু হামের টিকা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। ফলে বিশ্বে হামে মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।