রিয়াজউদ্দিন বাজার এখন অপরাধের আখড়া

ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, হুন্ডি সবই হয় এখানে ইমেজ সংকটে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা

খবর ডেস্ক :
ঐতিহ্যবাহী রিয়াজউদ্দিন বাজার এখন অপরাধের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, হুন্ডি ও চোরাই মোবাইল ব্যবসায়ীদের দাপটে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা পড়েছেন ইমেজ সংকটে। আর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানারকম অবৈধ কর্মকাণ্ডের ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে খুনের ঘটনাও ঘটছে। বর্তমানে অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, অপরাধী চক্র বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে ব্যবসায়ীদের ওপরই হামলে পড়ছে যখন–তখন। সর্বশেষ গত ২৭ নভেম্বর রিয়াজউদ্দিন বাজারে পিটিয়ে হত্যা করা হয় সুমন সাহা নামে ১ ব্যবসায়ীকে। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ অপরাধীদের কাছ থেকে পরিত্রাণে প্রশাসনের টহল ও নজরদারি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযোগ পেলেই তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

রিয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে অপরাধীরা মাদকের টানে রিয়াজউদ্দিন বাজার আসছে। ঘর ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছে। রাত দশটা–এগারোটার শুরু হয় তাদের অপরাধী কর্মকাণ্ড। বাধা দিলেই হতে হয় রক্তাক্ত। এদের দাপটে ব্যবসায়ীরাই এখন জিম্মি হয়ে পড়েছেন।

তিনি বলেন, রিয়াজউদ্দিন বাজারে অনেকগুলো ঘটনা ইতোমধ্যে ঘটেছে। মৃত্যু হয়নি বলে প্রকাশ পায়নি। আমরা বারবার প্রশাসনকে বলেছি, সাদা পোশাকে আপনারা অভিযান চালান। কে বৈধ, কে অবৈধ সেটা প্রশাসনই ভালো জানবে। মাঝেমধ্যে এক–দুজন ধরা পড়ে। জামিনে বের হয়ে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় আমরা গত ২৩ ও ২৬ নভেম্বর দুই দফায় মানববন্ধন করেছি। তা সত্ত্বেও ২৬ নভেম্বর মধ্যরাতে এখানে ব্যবসায়ী খুনের ঘটনা ঘটল।

এ প্রসঙ্গে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম ওবায়দুল হক বলেন, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও তামাকুমন্ডি লেইন ঘিঞ্জি এরিয়া। তাই সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া এখানে অভিযান চালাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। কারণ বাজারে ঢুকলেই কোনো না কোনোভাবে অপরাধীদের কাছে খবর পৌঁছে যায়। তবে অপরাধের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। যখনই অভিযোগ পাচ্ছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি। সর্বশেষ ব্যবসায়ী খুনের ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমরা জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি। ঐতিহ্যবাহী রিয়াজউদ্দিন–এক বাজারে শত বাজারের সমন্বয়। শত বছর ধরে নগরবাসীর হাজারো চাহিদা মিটিয়ে আসছে এই বাজার। দুইশটির বেশি ভবনে দোকান আছে প্রায় ২০ হাজারের মতো। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র মতে, ব্যস্ততম এই বাজারের নির্ধারিত স্থান ও দোকানে হরহামেশা বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নানা মাদকদ্রব্য। চোরাই সোনা, জাল ডলার বিক্রিসহ নানা অবৈধ কারবার রয়েছে এখানে। বিদেশি কাপড়, অবৈধ ও নকল প্রসাধন সামগ্রীর গুদামও রয়েছে। হুন্ডি কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে অনেক ব্যবসায়ীর নামে। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলে। ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালিত হয়। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক আশীর্বাদ এবং আর্থিক প্রলোভনের কাছে মুখ থুবড়ে পড়ে সকল অভিযান।

শুধু তাই নয়, রিয়াজউদ্দিন বাজারকে ঘিরে আছে ছিনতাইকারীদের একটি বড় চক্র। তারা বড় বড় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে এবং ব্যাংকিং লেনদেনের বিষয়ে খোঁজখবর রাখে। চক্রটি ব্যবসায়ীদের টাকা নিয়ে কে কখন কোন ব্যাংকে জমা দিতে যায়, কে উত্তোলন করতে যায় তাদের টার্গেট করে গতিবিধি নজরদারিতে রাখে। একপর্যায়ে যে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যায় বা উত্তোলন করে তাকে টার্গেট করে পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা স্থানে পৌঁছামাত্রই মারামারির পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, যাতে কোনো পথচারী বাঁচানোর চেষ্টা না করে। মারামারির একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। গত জুলাই মাসে এ চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের মাঠ পর্যায়ের ২ কর্মকর্তা জানান, সেই ঘটনাটির পর মূল পরিকল্পনাকারী একরামুল আলমের পক্ষে রাজনৈতিক তদবির এসেছিল একের পর এক। তবে ডিসি সাউথ স্যার থেকে ওসি স্যার পর্যন্ত সকলে ডিটারমাইন্ড ছিলেন, রিয়াজউদ্দিন বাজারের অপরাধ জগতে হানা দেওয়ার এটিই প্রকৃত সময়। যারা তদ্বির করেছিলেন তারাও একপর্যায়ে বুঝেছিলেন বিষয়টি।

মন্তব্য করুন