মৌলভীবাজারে বেপরোয়া ডলার-পাউন্ড কেনাবেচার ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক বিরাজমান অস্থিরতার পরিবর্তনসহ সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় প্রবাসী ও রাজনীতিবিদরা সপরিবারে দেশে আসছেন। এখন প্রবাসীদের পদভারে মুখর হচ্ছে প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত জেলা মৌলভীবাজার। দীর্ঘদিন পর প্রবাসীরা সপরিবারে যোগ দিচ্ছেন নানা সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে। প্রবাসীদের ঘিরে এখন জমজমাট স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্য। প্রবাসীদের আয় উপার্জন কেবল স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্য কিংবা তাদের পরিবারের সচ্ছলতা দিচ্ছে এমনটি নয়। প্রবাসীদের কষ্ঠার্জিত রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে। বড় অবদান রাখছে। প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলায় প্রবাসীদের কেন্দ্র করে জমজমাট ডলার-পাউন্ড ও বৈদেশীক মুদ্রা কেনাবেচার অবৈধ ব্যবসা। অনেকটাই বেপরোয়া হুন্ডি ব্যবসা। জেলার ৭টি উপজেলার প্রতিটি শহর ও হাটবাজারে নানা কায়দা কৌশলে চলছে এমন রমরমা ব্যবসা। অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন থেকে মানি এক্সচেঞ্জের নামে অবৈধভাবে এমন হুন্ডি ব্যবসা চললেও তা বন্ধে তৎপর নয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন। জানা যায়, নির্দিষ্ট ব্যাংক ছাড়া জেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত একটিমাত্র ফরেন মানি এক্সচেঞ্জের বৈধ (সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জ, বেরিপাড়, দর্জিমহল্লা মৌলভীবাজার) দোকান। তবে সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগের অন্ত নেই। তারা একমাত্র বৈধ ফরেন মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসায়ী দাবিদার হওয়ায় ডলার পাউন্ড ক্রয় ও বিক্রয়ে অধিক মুনাফায় গ্রাহকদের হয়রানি করছেন। আর অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের দোকান প্রায় অর্ধশতাধিক। জেলাজুড়ে দীর্ঘদিন থেকে নামসর্বস্ব ব্যবসার আড়ালে চলছে এমন রমরমা হুন্ডি ব্যবসা।

সম্প্রতি মৌলভীবাজার শহরতলী মোস্তাফাপুরের বাসিন্দা সৈয়দ আতাউর রহমান আবুলের ছেলে সৈয়দ মসুদ আহমদ জেলায় দায়িত্ব পালনে অবস্থানরত সেনাবাহিনীর কমান্ডারের কাছে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগে কয়েকজন ভুক্তভোগীর কথা উল্লেখ করে তাদের স্বাক্ষী রেখে তিনি বলেন, বেরির পাড়স্থ সোনালী ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার আশপাশে অভিযুক্তদের অবৈধ দোকান রয়েছে। তারা নানাভাবে বিদেশী মুদ্রা বিনিময়ের অবৈধ ব্যবসায় চওড়া মুনাফায় গ্রাহক ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করছেন। তিনি দ্রুত এর প্রতিকার চান। ওই অভিযোগে তিনি অবৈধ ব্যবসায়ী হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন স্বপন দাশ, খোরশেদ মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, নোভেল তরফদার টিটু, মামুন তরফদার, মো: আশরাফুল ইসলাম কাইয়ুম, মো. জমির আলী ও জুবায়ের আহমদ কুরেশীসহ অজ্ঞাত আর ৮-১০ জনকে। আর ওই অভিযোগে স্বাক্ষী রয়েছেন আকাশ আহমদ, নোবেল গাঙ্গুলী, মো. রিয়াদ মাসনুন, মিলাদুর রহমান, রুই বেগম, রুমেন মিয়া। তবে তিনি যাদের অভিযুক্ত করেছেন তারা অনেকে বলছেন. কোনো অবৈধ ব্যবসার সাথে তারা সম্পৃক্ত নন। বিষয়টি সৈয়দ মানি একচেঞ্জ’র মালিক পক্ষের সাজানো নাটক। তারা একচেটিয়া ব্যবসা করতে নানা কৌশলে বৈধ ও অবৈধের বিষয়টি সামনে এনে অধিক মুনাফা গ্রাহকদের কাছ থেকে লুটে নিচ্ছেন। যারা এর প্রতিবাদ করেন তাদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে দমিয়ে রাখার চেষ্টা চালান। এবিষয়ে প্রবাসী গ্রাহকরা হয়রানি রোধে আর একাধিক বৈধ মানি এক্সচেঞ্জ’র দোকানের অনুমোদন বাংলাদেশ ব্যাংক দিবেন বলে প্রত্যাশার সাথে জোর দাবিও জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকা ও সিলেট শাখার ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা মুঠোফোনে মানবজমিনকে বলেন, একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়ে পুরো জেলা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। জেলাটি প্রবাসী অধ্যুষিত। তাই অবৈধ ব্যবসা রোধ করতে আরও একাধিক শাখার লাইসেন্স দেয়ার প্রয়োজন বলে আমারা মনে করছি। তারা জানান, অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ বা হুন্ডি বন্ধ করতে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংক তরফে সরাসরি অভিযানে যেতে তাদের অনেক প্রসিডিওর মেনটেন করতে হয়। এবিষয়ে মনিটরিং ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের। জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, তিনি নতুন এসেছেন। এবিষয়ে তিনি অবগত নয়। তবে খোঁজ নিয়ে হুন্ডি বা অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।মা

মন্তব্য করুন