স্বতন্ত্রপ্রার্থী মোতালেবের সমর্থকদের উপর, বাড়িতে গুলি, গাড়ি ও ক্যাম্প ভাঙচুর অভিযোগ

মো: গিয়াস উদ্দিন, অফিস থেকে :
সাতকানিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেবের সমর্থক পশ্চিম ঢেমশা ইউপি চেয়ারম্যান রিদুয়ানুল ইসলাম সুমনের বাড়িতে গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসময় ৩টি গাড়ি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পও ভাঙচুর করেছে। গত বুধবার রাতে উপজেলার পশ্চিম ঢেমশা ইছামতি আলীনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ইউপি চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর সমর্থকদের নেতৃত্ব গুলি বর্ষণ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে এবং এসময় ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টহল দল উপস্থিত ছিল। খবর পেয়ে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস ও সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শিবলী নোমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ৪০–৫০ জনের একটি দল পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিদুয়ানুল ইসলাম সুমনের বাড়ি এলাকায় গিয়ে প্রথমে গালিগালাজ করতে থাকে। তারা চেয়ারম্যানের বাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে। পরে চেয়ারম্যানের পারিবারিক ১টি মাইক্রোবাস, ১টি সিএনজি টেক্সি ও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মিনি ট্রাকের কাঁচ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেব সিআইপির নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করে।

ইউপি চেয়ারম্যান রিদুয়ানুল ইসলাম সুমন বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর সমর্থক রিয়াজ, মহিম, পিচ্চি মিজান ও তানভীর প্রকাশ তুর্কির নেতৃত্বে ৪০–৫০ জন সন্ত্রাসী নৌকার পক্ষে স্লোগান দিতে দিতে আমার বাড়ি এলাকায় আসে এবং আমার নাম ধরে গালিগালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। সন্ত্রাসীরা আমার বাড়িতে একটানা শতাধিক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। পরে আমার পারিবারিক একটি মাইক্রোবাসসহ ৩টি গাড়ি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেবের নির্বাচনী কার্যালয় ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়। পরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু রেজা নদভীর পক্ষে স্লোগান দিতে দিতে চলে যায়।
তিনি অভিযোগ করে জানান, ঘটনাস্থলে তখন ঢেমশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক ওমর ফারুকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল উপস্থিত ছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে পুলিশ কোনো ধরনের ভূমিকা রাখেনি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর সমর্থক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াদ বলেন, ‘আমি নৌকার পক্ষের লোক এটা ঠিক আছে। কিন্তু গত ১০ দিন ধরে আমি এলাকায় যাইনি। এটা আমার মোবাইলের কললিস্ট চেক করলে পরিস্কার হয়ে যাবে। ইউপি চেয়ারম্যান রিদুয়ানুল ইসলাম সুমন নিজের মতো করে একটি ঘটনা সাজিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, ‘রিদুয়ানুল ইসলাম সুমন একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। সে আমার ওপর একাধিকবার হামলার চেষ্টা করেছে। গুলি ও ভাঙচুরের ঘটনাটি রিদুয়ানের সাজানো নাটক।
অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেব জানান, ভোটারদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে আবু রেজা নদভীর এসব ঘটনা ঘটাচ্ছেন। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করবো নদভী ও তার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শিবলী নোমান জানান, আমরা ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করেছি। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ ও স্থানীয় কিছু মানুষের মোবাইলের কল লিস্ট পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। যদিও এখনো কেউ কোন ধরনের অভিযোগ দায়ের করেনি। ঘটনার সময় পুলিশের টহল দলের উপস্থিতি এবং নীরব ভূমিকা পালনের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান রিদুয়ানুল ইসলাম সুমনের বাড়িতে হামলা ও নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেবের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। গতকাল বিকালে এম এ মোতালেবের নির্বাচনী কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেবের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে ও মদদে রিয়াদ, মহিম, পিচ্চি মিজান ও তানভীর প্রকাশ তুর্কির নেতৃত্বে পশ্চিম ঢেমশা ইউপি চেয়ারম্যান সুমনের বাড়িতে গুলি বর্ষণ, গাড়ি ও নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জড়িতরা আবু রেজা নদভীর পালিত সন্ত্রাসী। কিছুদিন আগে ইছামতি আলীনগর এলাকায় সমাবেশ করে আবু রেজা নদভী প্রকাশ্যে মাইকে সুমনকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় আবু রেজা নদভীর নির্দেশে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
ডা. মিনহাজ আরো বলেন, ঘটনাস্থলে ঢেমশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক ওমর ফারুকের নেতৃত্বে পুলিশ ছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। আমরা জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেবের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও সাতকানিয়া পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের, সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আন্‌জুমান আরা বেগম, ইউপি চেয়ারম্যান আবু ছালেহ ও সেলিম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ঢেমশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক ওমর ফারুকের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সাড়া মিলেনি।

মন্তব্য করুন