
ভারতে বসবাসকারী মানুষজনের সমস্ত ধর্মকে স্থান দেয়ার চেষ্টা হয় দ্বীনে এলাহীতে। শিখরা হয়তো এই যুগে পুরোপুরি বিকশিত হয়নি। দ্বীনে এলাহীতে হিন্দু, খ্রিস্টান, পার্সি, অগ্নিপূজক এবং ইসলামের মধ্যে সমন্বয় বিধান করা হয়। সূর্যের উপাসনা এবং আল্লাহর উপাসনা ছিল এ ধর্মের বিধান। হালাল ও হারামের আদেশ বদলে দেয়া হয়। শূকরের মাংস এবং মদকে জায়েজ ঘোষণা করা হয়। ব্যভিচারকেও কিছু শর্তে জায়েজ করা হয়। দ্বিতীয় বিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আরো বহু সর্বনাশের দরোজা খুলে দেয়া হয়।
অতঃপর আকবরের পুত্র জাহাঙ্গীর এই সর্বধর্ম সমন্বয় ও ধর্মের নামে অধর্মাচারের পথ থেকে সরে আসেন। তিনি ক্রমেই শায়খের প্রতি ইতিবাচক হতে থাকেন। তিনি শায়খের পয়গাম ও শিক্ষার প্রতি মনোযোগী হন। ধীরে ধীরে প্রত্যাবর্তন করেন বাবর-শাহজাহানের কর্মপন্থায়। পিতার মতাদর্শ থেকে সরতে থাকেন। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের বিশ্বাসের প্রতি নিজের আস্থার বহু নমুনা রাখেন জাহাঙ্গীর।
মোল্লা নুরুল্লাহ শুস্ত্রী ছিলেন একজন মহান দরবারী আলেম। তিনি একটি বই লিখে হযরত ওমরকে অপমান করেছিলেন। এর জন্য জাহাঙ্গীরের আদালতে মোল্লা নূরুল্লাহ শুস্ত্রীর বিচার হয় এবং তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়। নূরুল্লাহ শুস্ত্রী শিয়াদের শহীদ হিসেবে পরিচিত। রানী নূরজাহান নিয়ে প্রচলিত আছে বহু গল্প। তিনি শিয়া ছিলেন প্রথম দিকে। তখন পর্দার আড়ালে বসতেন। জাহাঙ্গীরের প্রায় সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতেন, তাতে হস্তক্ষেপ করতেন। জাহাঙ্গীর যখন মোল্লা শুস্ত্রীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন নুরজাহান হস্তক্ষেপের চেষ্টা করলে সম্রাট বললেন, নুরজাহান, আমি আমার প্রাণ তোমার হাওয়ালা করেছি কিন্তু আমার ঈমান তোমাকে অর্পণ করিনি।
ক্রমেই জাহাঙ্গীর দ্বীনে ইলাহী পরিহার করেন। এরপর শায়খ সেরহিন্দি জাহাঙ্গীরের কাছেই থেকে যান। সম্রাট তাকে নিজের কাছে রেখেছিলেন যাতে তিনি দরবারীদের সংশোধন করতে পারেন। এভাবে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানীর কঠোর সাধনা, আত্মত্যাগ ও দুনিয়া বিরাগের ফলে আকবরের দ্বীনে ইলাহী তার পুত্রের শাসনামলে অবসিত হয়।ই