
সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক : প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের অধস্তন আদালতের আরও ৫০ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ভারত যাচ্ছেন- গতকাল শনিবার এমন সংবাদ প্রকাশের পর তোলপাড় চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দেশটির সঙ্গে বিরাজমান নানা সমস্যার মধ্যেই এই খবরে নেটিজেনদের মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে ১০ বছর আগে দুই দেশের সুপ্রিম কোর্টের মধ্যকার এক চুক্তির আওতায় ভারতে কথিত ‘বিচার’ শিখতে বিচারকদের পাঠানো শুরু করে বাংলাদেশ। এবার ৫০ জন বিচারকের ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়ার তথ্য শনিবার প্রকাশিত হলে চারিদিকে প্রবল আপত্তি উঠে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারকে ছাত্র-জনতাকে গণহত্যায় নিরব সমর্থন দিয়েছে, বিতাড়িত খুনি হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছ, এমনকি সেখানে বসে ষড়যন্ত্র ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ারও সুযোগ করে দিচ্ছে। ড. ইউনূস সরকারকে উৎখাতে হাসিনাকে নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রদ্রোহী উগ্রবাদী ইসকন নেতা চিন্ময়ের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশ সম্পর্কে ক্রমাগত প্রপাগান্ডা, ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলার মতো গুরুতর বিবাদমান সমস্যার মধ্যে দেশটিতে বিচারক পাঠানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অনতিবিলম্বে ‘অবিচার’ শেখাতে ভারতে বিচারকদের পাঠানোর এই সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি উঠেছে।
নেটিজেনরা বলছেন, বর্তমানে ভারতের সংখ্যালঘুরা ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ঠভাবে অবিচার-অনাচারের শিকার। মুসলিমদের বিরুদ্ধে ‘বুলডেজার বিচারকে’ স্বাভাবিককরণ করা হয়েছে। আদালতকে ব্যবহার করে একের পর এক মসজিদ গুঁড়িয়ে মন্দির নির্মাণের এজেন্ডা বাস্তবায়ন চলছে। আদালতে ইসলামি শরিয়া আইন-কানুনের বিরুদ্ধে প্রায়ই রায় দেয়া হচ্ছে।
মোদির ভারতে দেশব্যাপী এক অবিচারের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। দেশটির আদালত বঞ্চিত ও ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। বিচার ব্যবস্থার মান নিয়েও যথেষ্ঠ প্রশ্ন রয়েছে। উন্নত বিচার ব্যবস্থার দেশ বাদ দিয়ে ভারতের মতো একটি নিম্নমানের দেশে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে মনে করেন সচেতন মহল।
ওই পঞ্চাশ বিচারকের ভারতে প্রশিক্ষণ বাতিলের দাবি জানিয়ে রোববার (৫ জানুয়ারি) নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়েছেন আলোচিত প্রবাসী লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য।
পোস্টে তিনি গভীর উদ্বেগ জানিয়ে লিখেছেন, ভয়াবহ যা জানা গেছে, প্রায় অনুরূপ কর্মসূচিতে ইন্ডিয়ায় দালালি শিখতে প্রশাসন ক্যাডারের অফিসাররাও যান। এরকম আর কোন কোন চুক্তির আওতায় ক্যাডার/ কর্মকর্তারা বৈরী এই প্রতিবেশী দেশের পা চাটতে যান— সেই তথ্য বের করে এই সকল মাথানোয়ানোর শিক্ষা ও বৃত্তি কর্মসূচি বাতিল করতে হবে।
এবিষয়ে প্রশ্ন তুলে মোঃ ফয়সাল নামে একজন ব্যবহারকারী ফেসবুকে লিখেছেন, আমাদের দেশের বিচারকরা কি পড়াশোনা না করেই বিচারক হইছে? বিচারকদের ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে কেনো? আর যদি কোন প্রশিক্ষণের দরকারই পরে তাহলে সেটা ভারত থেকে কেন? ভারত থেকে প্রশিক্ষণ তো নয় আসলে নির্দেশনা নিতে যাবে, কিভাবে আওয়ামী নেতাদের মামলা থেকে অব্যহতি দিতে হবে, আর কিভাবে ৭২ এর সংবিধান মানে; পক্ষান্তরে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের নীতিমালা বলবত রাখা এবং বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী লীগকে পুনরায় পুনর্জ্জীবিত করা.।
শাকিল হাসান লিখেছেন, এই মুহূর্তে দেশের জন্য সবচেয়ে বড় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ৫০ জন বিচারক’কে ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো! অভিজ্ঞতায় দেখেছি তিন দিনের ভারত ভিজিট করে এসেই ভারত বন্দনা শুরু করতে। তারা উনাদের কি শিখাবেন? আমাদের বিচারকদের তুলনায় কি বা তাদের যোগ্যতা? তাছাড়া আমাদের বিচারকগণ কি রাজনৈতিক বলয় মুক্ত হতে পারবেন? এই বিচারকরা ওখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসলে এদেশের আলোচিত ঘটনাগুলোর সঠিক বিচার হবে না। ইংল্যান্ডে পাঠান। ভারতের বিচারকগ্ণ ওখানে প্রশিক্ষণ নেয়। আর দুই দেশের আইন ব্রিটিশরাই লিখে গেছেন।
তপু ভুইয়া লিখেছেন, আমলা ও বিচারকদের দেশেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত, এই সব খয়রাতি প্রশিক্ষণ নেয়া বন্ধ না হলে এ সব আমলারা দেশে ফিরে চাটুকার আর দালালীই করবে। স্বাধীনতার এত বছর পরও এ ধরনের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে না উঠা দুঃখজনক।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও সামর্থ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট এবং ভারতের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। প্রথমবারের মতো ওই বছর ১০ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যান বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা। এ চুক্তির আওতায় পর্যায়ক্রমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিচারক বিচারককে প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়।ই