
নিজস্ব প্রতিনিধি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেছাসেবক লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে মহড়া দিলেও তাদের কাউকে বাধার মুখে পড়তে হয়নি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট পর্যন্ত তারা এভাবেই রাজপথে মহড়া দিয়েছে। আন্দোলকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আওয়ামী সরকারের পতনের ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এসব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার কিংবা কোন সন্ত্রাসী ক্যাডাররা গ্রেফতার না হওয়ায় স্থানীয় জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
৪ আগস্ট রোববার সকাল ১০টা। দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র সাতকানিয়ার কেরানীহাটে শত শত সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী। এদের নিকট বন্দুক থেকে শুরু করে আছে অত্যাধুনিক সব ধরনের অস্ত্র। সেদিনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের নেতৃত্বে সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছিল তারা। লক্ষ্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঠেকানো। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগের দিন রোববার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আন্দোলনকারীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন কৃষক-শ্রমিক, জনতাসহ সব শ্রেণি পেশার লোক।
বিএনপি-জামায়াতের কর্মী সমর্থকরাও অংশ নেন। ওইদিন দুপুর থেকেই গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দখল করে নেয়
পেশার হাজার হাজার মানুষ। বেলা ৩টায় সাতকানিয়া উপজেলার মিঠাদীঘি থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এছাড়া খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হয় উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে। মিছিল করে বিক্ষোভকারীরা কেরানীহাট স্টেশনের দিকে আসতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এক পর্যায়ে কেরানীহাট স্টেশনে পৌঁছালে বিক্ষোভকারী ছাত্র-জনতার ওপর কোনো কারণ ছাড়াই নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। তবে সংঘবদ্ধ হয়ে ছাত্র-জনতা তাদের ধাওয়া দিলে পিছু হটে তারা। ৪ আগস্ট আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র মহড়াটি অন্য দিনের মতো নয়। এদিনটি যেন তাদের জন্য ছিল বিশেষ দিন। কারণ এদিন তারা এমন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছিল, যা নিয়ে এখনও থামছে না আলোচনা।
অভিযোগ রয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ঠেকাতে ভয়ংকর সব অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়েছে সাতকানিয়ায়। সেদিন যেসব সন্ত্রাসী মাঠে ছিল সরকার পতনের পর তারা আত্মগোপনে চলে যান। সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ৪ আগস্টের ঘটনায় বন্দুক হাতে সামনে থাকা হেলমেটধারীরা গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। এদিকে স্থানীয় সূত্র বলছে, সে দিনের অস্ত্রধারীদের অনুসারী কেউ কেউ এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ঘটনার দিন অস্ত্র বহন এবং গুলি বর্ষণের ঘটনায় কেউ মুখ খুললে তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে তাদের অনুসারীরা সেদিন গুলিবর্ষণ করেছে। কিন্তু ঘটনার ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও সেই অস্ত্রধারীদের মধ্যে কেউ গ্রেফতার হননি।
এ বিষয়ে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খানের বক্তব্যর জন্য সরকারি নম্বরে কল দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।