বিএনপি ছাড়াই নির্বাচনে ২৯ দল থেকে প্রার্থী ১৯৬৫, স্বতন্ত্র ৭৪৭ জন ও ১২৮ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা মাঠে

খবর ডেস্ক :
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে ছাড়াই শেষ পর্যন্ত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী ১ হাজার ৯৬৫ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ৭৪৭ জন। তবে এ নির্বাচনে ২৮ শতাংশ মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অবশিষ্ট মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ২৯টি দল থেকে। সারাদেশে মোট ১২৮ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

গতকাল শনিবার ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম এ তথ্য জানান। ২৯টি দল থেকে এক হাজার ৯৬৫টি এবং স্বতন্ত্র থেকে ৭৪৭টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। অর্থাৎ প্রায় এক চতুর্থাংশের বেশি (২৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ) মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে স্বতন্ত্র থেকে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একটি বিরাট অংশ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী। কোনো কোনো আসনে দলটির মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও একাধিক নেতা স্বতন্ত্র থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার ইসি জানিয়েছিল এই সংখ্যা ২৭১২। ২৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো থেকে ১ হাজার ৯৬৫ জন প্রার্থী হয়েছেন এবং আরও ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আগামীকাল সোমবারের মধ্যে প্রার্থীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং তপশিল অনুযায়ী প্রার্থীরা ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে আপিল করতে পারবেন। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মোট ৩০০ আসনে ৩০৪ জন করে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। জাকের পার্টি ২১৮ জন এবং তৃণমূল বিএনপি ১৫১ প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১৪২ প্রার্থী এবং বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে ১১৬ প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছেন।

অন্যান্য দল থেকে মনোনীত প্রার্থীর সংখ্যা— জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) থেকে ২০ জন, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল থেকে ৬ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে ৩৪ জন, গণতন্ত্রী পার্টি থেকে ১২ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি থেকে ৬ জন, ওয়ার্কার্স পার্টি অব বাংলাদেশ থেকে ৩৩ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ থেকে ১৪ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (ইনু) থেকে ৯১ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন থেকে ৪৭ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে ১৪ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ থেকে ২ জন, গণফোরাম থেকে ৯ জন, গণফ্রন্ট থেকে ২৫ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মুকিত) থেকে ১৩ জন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ থেকে ৩৯ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি থেকে ১৮ জন, ইসলামী ঐক্যজোট থেকে ৪৫ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট থেকে ৩৭ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (পাঞ্জা) থেকে ৫ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট থেকে ৭৪ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট থেকে ৫৫ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন থেকে ৪৯ জন এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি থেকে ৮২ জন। অন্যদিকে দলীয় প্রার্থীদের মধ্যেও অনেকে একাধিক আসনে একাধিক মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা বাছাইয়ের সময় একটি মনোনয়নপত্রই গ্রহণ করবেন।

ইসির জনসংযোগ পরিচালক বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছে তবে ৫টি নির্বাচনী এলাকায় (মেহেরপুর-১, জামালপুর-৫, ময়মনসিংহ-৩, মানিকগঞ্জ-২, চট্টগ্রাম-৪) মনোনয়ন দাখিলকারী দলীয় মনোনয়ন দিতে পারেননি। এছাড়া ঝালকাঠি-১ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দুজনকে দলীয় মনোনয়ন দিলেও পরবর্তীতে ৩০ নভেম্বর মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরকে দলীয় প্রতীক বরাদ্দের অনুরোধ জানিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে চিঠি দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপ নামক রাজনৈতিক দলের একটি মনোনয়ন দাখিল হলেও বাস্তবে এই নামের কোনো নিবন্ধন নাই।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, অনেকেই দল থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও দলীয় মনোনয়নকারীর প্রত্যায়ন জমা দেননি। আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে এমন হয়েছে কয়েকটি, অন্য দলেরও আছে। এমন মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় বাতিল হয়ে যাবে। ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে আগামী সোমবার ডিসেম্বর পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।

মন্তব্য করুন