বাংলাদেশ ক্রসফায়ারের মুখে : বিএনপি

খবর ডেস্ক :
একদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রতিনিয়ত গুলিবর্ষণ হচ্ছে অন্যদিকে মিয়ানমার গুলি করছে- এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আজকে ক্রসফায়ারের মুখে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্রর রায়। মিয়ানমার সীমান্তের উত্তেজনা জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে নিতে সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।

গয়েশ্বর রায় বলেন, একদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে আরম্ভ করে প্রতিনিয়ত গুলিবর্ষণের মাধ্যমে আমাদের বিজিবি সদস্য ও আমাদের জনগণকে হত্যা করছে। আবার পূর্ব দিক থেকে মিয়ানমারের গুলি আমাদের দেশের এই পর্যন্ত ২জন নিহত, কয়েকজন আহত এবং ঝাঁকে ঝাঁকে সেখানে রাখাইন থেকে সেনা আশ্রয় নিচ্ছে। বলতে গেলে বাংলাদেশ আজকে ক্রসফায়ারের মুখে। এটি নিয়ে শুধু আমাদের ভাবনা নয়, আপনাদেরও ভাবতে হবে যে, কি ঘটতে যাচ্ছে? এর অন্তরালে কি আছে? যারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে তার সাথে এই সরকারের (বাংলাদেশ) কেনো গোপন সম্পর্ক আছে কিনা। অথবা এমনও হতে পারে যে, আজকে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এই ব্যর্থ সরকার নানাভাবে জর্জরিত। জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র ফেরানোর জন্য সরকার ইতোপূর্বেও কিন্তু একের পর এক ইস্যু তৈরি করেছে, এই ইস্যু কি এককভাবে করছে না যৌথভাবে করেছে যেই যৌথভাবে তারা সরকারে আসছে? গতকাল বুধবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মিয়ানমারের মতো দেশ বাংলাদেশে গুলি ছোঁড়ে এই শক্তি-সাহস ইতোপূর্বে কোনো দিন পায়নি, আজকে কেনো পায়? এটা নিয়ে আপনারা সবাই ভাবেন, আমাদের দেশটা কোন দিকে যাচ্ছে। মিয়ানমার পরিস্থিতির সংকট উত্তরণে কোনো পরামর্শ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি পরামর্শ কাকে দেবো? আমি কি সরকারে আছি, সরকার কি আমাদের পরামর্শ চায়। আমাদের দেশের মানুষকে এই ব্যাপারে প্রতিবাদী হতে হবে। যদি ষড়যন্ত্র থাকে অথবা ষড়যন্ত্র যদি নাও থাকে আমরা যেভাবে চারদিক থেকে অ্যাটাক হচ্ছি এর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি জনগণকে দিয়েছি, সেই আন্দোলনে আছি। আন্দোলনের গতি একেক সময়ে একেক দিকে রুপ নেয়। আপনারা অপেক্ষা করেন, আমরা আন্দোলনে আছি, নিশ্চয় আপনারা আমাদেরকে আন্দোলনে দেখতে পাবেন.. আমাদের ভবিষ্য কর্মপন্থ কি?

বিএনপিসহ সমমনা ৬২ টি রাজনৈতিক দলের ৭ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক ও যৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির আবেদনে সাড়া দিয়ে, নির্বাচনকে বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখানের মাধ্যমে জনগণ প্রমাণ করেছে যে, বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান গণআকাক্সক্ষারই প্রতিফলন। বিএনপির সাথে একত্র হয়ে গণমানুষের এই নিরব প্রতিবাদ, এই স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন বস্তত বিএনপির রাজনীতির সফলতা তথা বিজয়ের বর্হিপ্রকাশ। অন্যদিকে ইলেকশনের নামে সিলেকশন নাটক মঞ্চস্থ করতে আওয়ামী লীগের যে সহিংসতা-নাশকতা, প্রকৃত কোনো বিরোধী দলের প্রার্থী না থাকার পরও যে অনিয়ম-কারচুপি, ভোটার উপস্থিতি বাড়িয়ে দেখানোর জন্য নির্বাচন কমিশন ও রাষ্ট্রযন্ত্রের যে অদ্ভুত অবিশ্বাস্য দাবি এবং এসব ঘটনাপ্রবাহেরর প্রেক্ষিতেযে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সমালোচনা-হতাশা সেখানেই আওয়ামী লীগের নৈতিক পরাজয় নিহিত। ১৫ বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত রেখে দলীয় সাংগঠনিক প্রচেষ্টা ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক ক্ষমতা তথা অবৈধ বল প্রয়োগ করেও ন্যূনতম ভোটার জমায়েতে অক্ষম আওয়ামী লীগ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের দ্বারা ঘৃণাভরে প্রত্যাখাত হয়েছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তাদের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার নিজ অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে-অবৈধ অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা দিয়ে- আদায় করেছে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সমর্থন। বিশেষত নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, অসম দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, নামমাত্র মূল্যে ট্রানজিট সুবিধা, পানি সমস্যার সমাধানহীনতা, গোপন আদানি চুক্তিসহ, জাতীয় স্বার্থবিরোধী অজস্র প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক লবিং। যার প্রমাণস্বরূপ শেখ হাসিনা নিজেই বলেছিল, “ভারতকে যা দিয়েছি সারা জীবন মনে রাখবে” এবং ওবায়দুল কাদের দাবি করে, “৭ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় ভারতই আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়িয়েছিল। বিএনপির মতো একটি সফল গণতান্ত্রিক দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হয়েছে পাশবিক হাসিনা সরকার ও তার অধীনস্থ রাষ্ট্রযন্ত্রের চিহিত অংশ।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষে-বিপক্ষের এই লড়াই, আজ কেবল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির লড়াই নয়। এই লড়াই, জনবিদ্বেষী সরকারের সকল দোসরের সঙ্গে বাংলাদেশের সকল গণতন্ত্রকামী মানুষের লড়াই। সমাজের সকল বিবেকবান মানুষ যদি স্ব স্ব অবস্থান থেকে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন এবং সামর্থ অনুযায়ী ভূমিকা রাখেন, তবে ফ্যাসিবাদের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

গয়েশ্বর বলেন, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশে যতবার গণতন্ত্র হরণ করা হয়েছে, ততবার লুণ্ঠিত সেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে বিএনপি। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে, আমাদের সংগ্রাম ছিল নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান অস্বাভাবিক অচলাবস্থা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে তার অনিবার্ধ পরিণতি ও সম্পূর্ণ দায় আওয়ামী লীগকেই বহন করতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকারকে রুদ্ধ করার এই অশুভ প্রক্রিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কুটনৈতিক সংকটকে ঘনীভূত করে তুলবে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রমাণ করে, এই দলটি কখনোই নিয়মতান্ত্রিকভাবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রপরিচালনা করেনি।

গয়েশ্বর রায় আরও বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে বিএনপির মতো আর কোন রাজনৈতিক দল কি আছে, যার ৫০ লক্ষেরও বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়েছে? কোন অপরাধে, আমাদের ২ হাজার ৭০০ এরও বেশি নেতাকর্মীকে শেখ হাসিনা ও তার অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হত্যা করেছে? কেনো প্রায় ৭০০ জন নিরপরাধ মানুষকে গুম করেছে? কিসের ভিত্তিতে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাকস্বাধীনতা হরণ করে, একের পর এক সাজানো মামলার পাতানো রায় দেওয়া হচ্ছে? বানরের পিঠা ভাগের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ, ২৫ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে কেনো ফ্যাসিস্ট সরকার পরিকল্পিতভাবে গ্রেপ্তার করেছে? এই সময়ে, বিএনপির রাজনীতি করার অপরাধে কেনো ১১ জন কর্মীকে কারাগারে হত্যা করেছে?

বিএনপি নেতা বলেন, গত ১৫ বছর ধরে, বিএনপির সাথে জড়িত প্রতিটি ব্যক্তি ও পরিবারের উপর যে নৃশংস অত্যাচার-অবিচার হয়ে আসছে, দেশী-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের অজস্র প্রতিবেদনে তা লিপিবদ্ধ। আমাদের প্রত্যেকে, প্রতিদিন, পুলিশি নিপীড়ন ও বিচার বিভাগের অবিচারের শিকার হচ্ছি। তবে এই আক্রোশ, এই আক্রমণ, এই অত্যাচার – যেন বিএনপির গণসম্পৃক্ততার কাছে পরাজিত, গণঅভ্যুত্থানের ভয়ে শংকিত গণবিরোধী আওয়ামী লীগের ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার মরিয়া প্রয়াস। সময়ের সাথে, বিএনপির আন্দোলনের মাত্রা যত বেড়েছে, নজিরবিহীন গুম-খুন, হামলা-মামলার মাধ্যমে, সরকারের জিঘাংসা-নির্ধাতনের মাত্রা ততো বেড়েছে।

গয়েশ্ব বলেন, আওয়ামী লীগের ভঙ্গুর সাংগঠনিক কাঠামো নয়, শেখ হাসিনার খুঁটি ও ফ্যাসিবাদের ভিত্তি রাষ্ট্রযান্ত্রের একটি সুবিধাভোগী অংশ। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, প্রশাসন ও আদালতের কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধা পেয়ে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারে পরিণত হয়েছেন। তারাই আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠনে পরিণত করেছেন বিচার বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, দুদকসহ সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহকে।

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অবস্থা, মূল্যস্ফীতি প্রভৃতি চিত্র তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, রাষ্ট্রপরিচালনায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ শেখ হাসিনার অপশাসন থেকে মুক্তি চায় দেশের ১৮ কোটি মানুষ। তাদের প্রত্যাশা বিএনপির আন্দোলনের মাধ্যমে জনবিদ্বেষী ফ্যাসিবাদের পতন ঘটবে এবং দেশে আবারও সুশাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে। শহীদ জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে ইতিহাসের সকল পালাবদলে এটি প্রমাণিত বিএনপির ক্ষমতার উৎস জনগণ, বিএনপির শক্তি এদেশের মানুষ। জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনে জনসমর্থনের প্রেরণায় এবং রাজপথে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিএনপির নেতৃত্বে বাংলাদেশে শিগগিরই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে ইনশাল্লাহ।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, প্রফেসর আব্দুল কুদ্দুস, প্রফেসর সুকোমল বড়ুয়া, প্রফেসর শাহিদা রফিক, প্রফেসর সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর তাজমেরী এসএ ইসলাম, প্রফেসর মামুন আহমেদ, বিজন কান্তি সরকার, তাহসিনা রুশদীর লুনা, মইনুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, হারুনুর রশীদ, কেন্দ্রীয় নেতা মাসুকুর রহমান মাশুক ও সেলিম রেজা হাবিব, রিয়াজ উদ্দিন নসু প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন