বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন পৃথিবীতে নজির সৃষ্টি করবে

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ বাংলাদেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে পাশে থাকবে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গত ১৫মার্চ, শনিবার বিকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও সফররত জাতিসংঘ মহাসচিব রাজধানীর একটি হোটেলে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। এর আগে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে গোলটেবিল বেঠকে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন পৃথিবীতে নজির সৃষ্টি করবে। এ সময় রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের বিষয়ে বিএনপি নেতাদের তিনি বলেন, আপনারা কতটা রিফর্ম (সংস্কার) করবেন সেটা আপনাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এর আগে জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায় জাতিসংঘের নতুন ভবন পরিদর্শনকালে বলেন, বাংলাদেশের আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ। বাংলাদেশের এ সংকটময় পরিস্থিতিতে পাশে থাকবে জাতিসংঘ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরে মানবিক বিপর্যয় এড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আরও সহায়তা দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমি আন্তরিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই, যাতে আমরা এই মানবিক বিপর্যয় এড়াতে পারি। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও দায়িত্ব গ্রহণ এবং শরণার্থীদের পাশাপাশি তাদের আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক ও রাজনৈতিক সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বর্তমান সময় বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত একটি ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে আপনাদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা। বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে গুতেরেস আশ্বস্ত করেছেন যে, জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও পুনর্মিলন জোরদারে সহায়তা করতে প্রস্তুত। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আপনারা জাতিসংঘকে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে গণ্য করতে পারেন, যারা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ নির্মাণে কাজ করবে। তিনি রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের অসাধারণ উদারতার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মহাসচিব বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার সফর ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তিকর প্রচারণা এবং বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করার চেয়েও বেশি কিছু করবে। তার সমর্থনের আশ্বাস বাংলাদেশের জনগণের সাধারণ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। আমাদের সফল সংস্কার প্রক্রিয়া এবং গণতন্ত্রে উত্তরণে আমাদের সহায়তা করবেন।
উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, মহাসচিব একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের প্রকৃত রূপান্তরের জন্য সংস্কার প্রক্রিয়ার জটিলতার প্রশংসা করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি জাতিসংঘের পূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তা করবেন এবং বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
এর আগে সকালে জাতিসংঘ মহাসচিব রাজধানীর জাতিসংঘের নতুন ভবন প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন। এ সময় বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে এবং জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন করতে গুলশানে জাতিসংঘের নতুন ভবন পরিদর্শনে যান ।

সেখানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষা ও সংস্কার প্রচেষ্টাকে আমরা স্বাগত জানাই। বাংলাদেশ যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, সে জন্য বাংলাদেশের জনগণের উদারতার প্রশংসা করি। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের কথা স্মরণ করে গুতেরেস বলেন, তারা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকার জাতিসংঘের কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশে জাতিসংঘের নিজস্ব কোনো এজেন্ডা নেই। বাংলাদেশ ও এদেশের জনগণকে সহযোগিতা করাই আমাদের এজেন্ডা। বর্তমান সংকটকালে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর পরিবর্তে জনগণের জন্য যথাযথভাবে অর্থ ব্যয়ের তাগিদ দেন তিনি। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশ সফরে আসেন। শুক্রবার সফরের দ্বিতীয় দিনে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।

মন্তব্য করুন