ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার রাস্তা যেন তৈরি না করি -মির্জা ফখরুল

ডেস্ক : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা এখনো ৫৩ বছরের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া তৈরি করতে পারিনি। ফ্যাসিবাদ পরাজিত হয়েছে, ফ্যাসিবাদ যেকোনো সময় আবার ফিরে আসতে পারে। আমরা যেন সেই রাস্তা তৈরি করে না দেই। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা এমন কিছু কাজ করছি, যার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘রাষ্ট্র পুনর্গঠনে লেখক-শিল্পীদের ভ‚মিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের কবি-লেখকেরা জাতি গঠনে বড় ভ‚মিকা রাখেন। দুর্ভাগ্যক্রমে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়ে আমরা এই বিষয়টা সেভাবে সেখতে পাইনি, ভয়-আতঙ্ক ছিল। ফ্যাসিবাদের প্রধান অস্ত্র ভয়ের রাজ্য তৈরি করা।

তিনি বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের ছাত্র-জনতাকে যারা আমাদের সেই সুযোগ করে দিল। আমরা একটা মুক্তির স্বাদ পেয়েছি। একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে, গনতান্ত্রিক সংস্কৃতি তৈরি করে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ নিঃসন্দেহে একটা জটিল কাজ। এ কাজটা আমাদের করতে হবে। এর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমরা যারা ফ্যাসিবাদের পতন চেয়েছি তাদের সবার একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা। আজ দুঃখ হয়, এতদিন ধরে যে কষ্ট করেছি, যে ত্যাগ করতে হয়েছে, সবকিছুকে ছাড়িয়ে ভয়ের একটা পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার মনে হয় এটা পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে এবং পতিত ফ্যাসিবাদই এ অবস্থার সৃষ্টি করছে। আমরা যারা লড়াই করেছি, তারা কেন বিভাজন সৃষ্টি করছি নিজেদের মধ্যে। আমার ভয় হয় পুরো আন্দলনকে একটা ভিন্নদিকে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই হওয়া উচিত, সেটা হলো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন সেগুলো ন্যূনতমভাবে করে নির্বাচনে যাই। অনেকে বলছেন নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়। কিন্তু এটা একটা প্রক্রিয়া। আমাদের সবার উচিত ঐক্যের মধ্যে থেকে যে সুযোগ পেয়েছি সেটাকে কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যাই।

ভারতীয় মিডিয়ার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কাল রাতে ভারতবর্ষের মিডিয়ার কয়েকজন ফোন দিয়েছেন, তাদের একটাই প্রশ্ন ইসকনের ব্যাপারে আপনারা কী করছেন? এই প্রশ্নটা একেবারেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়। প্রথমবার ফেল করেছে, এখন আবার নতুন করে সে অবস্থাটা সৃষ্টি করতে চায়। এই ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে যেটা প্রয়োজন, সবাইকে শান্ত থেকে বিষয়গুলো অনুধাবন করে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়া। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সামনের দিকে আগানো, এছাড়া আর কোনো পথ আছে বলে আমি মনে করি না। আমাদের পক্ষে একটা জিনিসই সম্ভব, আমরা সবাই একটা লক্ষ্যেই এগিয়ে যাই, সেটা হচ্ছে একটা গণতান্ত্রিক সমাজ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করি।

জাতীয় কবিতা পরিষদের আহবায়ক মোহন রায়হানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বকারী জোনায়েদ সাকি, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি, লেখক ও বুদ্ধিজীবী সলিমুল্লাহ খান, লেখক ও সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ রাশেদ খান প্রমুখ।ই

মন্তব্য করুন