ফেনী-দাগনভূঞায় চলছে অদৃশ্য চাঁদাবাজি!

বিশেষ প্রতিবেদক : দাগনভূঞায় চলছে চাঁদাবাজির মহোৎসব। ৫ আগস্টের পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের হুমকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে একটি চক্র। চাঁদা দিলে ওই ব্যবসায়ী ও প্রবাসীর পরিবার নিরাপদ। আর দাবিকৃত চাঁদা না দিলে হতে হয় হামলা না হয় মামলার শিকার। তবে কে বা কারা এ চাঁদাবাজির সাথে জড়িত তা প্রকাশ করতেও ভয় পায় ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীরা জানান, চাঁদাবাজদের নাম প্রকাশ করলে তার প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের কোন তৎপরতা না থাকায় ক্ষোভের প্রকাশ করেছেন সাধারণ জনগণ ও ভুক্তভোগীরা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মাসে দাগনভূঞায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চাঁদাবাজ ও ডাকাত চক্র। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে ওই চক্রটি। আবার দাবিকৃত চাঁদা না দিলে হতে হয়েছে হামলা, মামলার শিকার না হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বা বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটাচ্ছে ওই চক্র। সম্প্রতি গত রোববার রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি

চাঁদা দিলে নিরাপদ না দিলে হামলা

ককটেল ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ের জাঙ্গালিয়া গ্রামে প্রবাসী বেলাল হোসেন খোকার বাড়িতে হামলা করে তার বাড়ির দেয়াল ভেঙে ফেলে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেন সেনবাগের যুবদল নেতা সুলতান সালাউদ্দিন লিটন এমন অভিযোগ করেন ভূক্তভোগীরা। অভিযুক্ত সুলতান সালাউদ্দিন লিটনের সাথে যোগাযোগ সম্ভব না হওয়ায় তাহার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি, তবে এ ঘটনাকে পারিবারিক বিরোধ বলেছেন স্থানীয় অনেকেই।

এদিকে রোববার রাতে দাগনভূঞা বাজারের ইব্রাহীম পেট্রোল পাম্পের মালিক মো. ইব্রাহীমকে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা।

ইব্রাহীম জানান, একদল সন্ত্রাসী তার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। ব্যবসা করতে হলে চাঁদা দিয়ে করতে হবে, না হয় ব্যবসা করতে দিবে না। একপর্যায়ে ইব্রাহীমের সাথে কথা কাটাকাটির পর ওরা চলে যায়। রাতে পাম্প থেকে বাড়ি ফেরার পথে একদল সন্ত্রাসী তাকে বেধড়ক মেরে তার মাথা ফাটিয়ে দেয়। বর্তমানে সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গত শনিবার রাতে দাগনভূএর আল আমিন ব্রিক ফিল্ডের শ্রমিকদের থাকার ঘরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদল দরজা ভেঙে প্রবেশ করে শ্রমিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ৬৫ হাজার টিলকা ৪/৫ টি মোবাইল নিয়ে যায়। শ্রমিকরা জানান, দাগনভূএর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড কৃষ্ণরামপুর গ্রামের হোসেন মিস্ত্রির ছেলে হাসান, মাসুদের ছেলে করিম ও ভাড়াটিয়া

দাগনভূঞায় চলছে অদৃশ্য

জুয়েলসহ একদল ডাকাত রাত ১০ টার দিকে দরজা ভেঙ্গে শ্রমিকদের ঘরে প্রবেশ করে তাদের টাকা ও মোবাইল নিয়ে যায়।

দাগনভূঞা সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম লাভলুর বাড়ির গ্রীল কেটে একাধিকবার চুরি, করিমপুরে সিরাজের দোকান চুরি ও সাহাব উদ্দীনে বাড়িসহ উপজেলার অনেক বাড়ি ও দোকানে চুরির ঘটনা ঘটছে অহরহ।

অপরদিকে প্রশাসনের নাকের ডগায় দাগনভূঞা বাজারে রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি, অবৈধ অটোরিকশা, বাজারের ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা দোকানপাটগুলো থেকেও প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে লাখ টাকার উপরে চাঁদা। ওই চক্রকে চাঁদা না দিলে ফুটপাতে বসে ব্যবসা করতে পারে না, সিএনজি ও অটোরিকশা নিয়ে দাগনভূঞা বাজারে আসতে পারে না। বেপরোয়া চাঁদাবাজচক্র এতোটাই শক্তিশালী যে কেউ ভয়ে নাম প্রকাশ করে না। আবার প্রশাসনও নিজ উদ্যোগে তাদের বিরুদ্ধে কোনপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।

দাগনভূঞা উপজেলাজুড়ে চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো অহরহ ঘটনা ঘটলেও দাগনভূঞা থানা পুলিশের পক্ষ থেকে চোখে পড়ার মতো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে কোন অভিযান ও চোখে পড়েনি।

উপজেলাজুড়ে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন উপজেলার সাধারণ নাগরিকরা। তারা এসব চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি বন্ধে প্রশাসনের জোরালো হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) দাগনভূঞা উপজেলা শাখার সভাপতি আবু তাহের আজাদ বলেন, জনশ্রুতি রয়েছে দাগনভূঞায় ব্যাপক চাঁদাবাজি হচ্ছে। তবে কেউ কারো নামে কোন অভিযোগ দিতে ভয় পাচ্ছে। আমি মনেকরি চাঁদাবাজদের প্রতিহত করতে ভুক্তভোগীরা যেন প্রশাসনের শরণাপন্ন হয়। ওসির নিকট অভিযোগ দেয়, এতে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের সুবিধা হবে।

দাগনভূঞা উপজেলা জামায়াতের আমীর গাজী ছালেহ্ উদ্দিন বলেন, ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। নতুন স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে এ জাতী। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয় এতবড় বিপ্লবের পরেও এখনো আমরা শুনতে পাই যে অহরহ চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। কৃষি জমির মাটি লুট হচ্ছে। সাধারন মানুষের কাছে শুনতে পাই কথিত ওই চাঁদাবাজরা নিয়মিত থানায় যাতায়াতও করে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শুধু চাঁদাবাজী না সকল অন্যায় ও অপকর্মের বিরুদ্ধে ছিল, আছে এবং থাকবে। এসকল চাঁদাবাজদের প্রতিহত করতে প্রশাসন চাইলে আমরা সর্বদা সহযোগীতা করতে প্রস্তুত। এছাড়াও কোন ভূক্তভোগী যদি সহযোগীতা চায় জামায়াতে ইসলামী তাকে সহযোগীতা করবে।

দাগনভূঞা উপজেলা থানা বিএনপির সহ-সভাপতি আবুল হোসেন বাহাদুর ও
সাবেক ৪নং রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন

সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, চোর, ডাকাত এদের কোন দল নেই। এরা নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে দলকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ রয়েছেন কোন সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ যাতে দলের ভিতরে না থাকে। কারো অপকর্মের কারনে যাতে দলের সুনাম ক্ষুন্ন না হয়। তাই এসকল কাজর যারা জড়িত আছে তারা বিএনপির কেউ না। কেউ দলের নাম বিক্রি করে চাঁদাবাজি করলে প্রশাসন যেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন উপজেলা বিএনপির কোন সহযোগীতা চাইলে
আমরা শতভাগ সহযোগীতা করবো। এবং কোন সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী বা প্রবাসীর কাছ থেকে যদি বিএনপি বা অঙ্গসংগঠনের নাম বিক্রি করে কেউ চাঁদা দাবী করে তাহলে জন্মান যেন সম্ভব হলে তাকে বেঁধে রেখে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেন, আর আমাদেরকে জানাতে পারেন।

দাগনভুএগ থানার অফিসার ইনচার্জ লুৎফুর রহমান বলেন, দাগনভূএরয় অদ্যবদি পর্যন্ত কোনধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ কেউ দেয়নি। শুধু চাঁদাবাজী না দাগনভূএরয় যে কোন সন্ত্রাসী তথা বেআইনী কার্যক্রমের সাথে যেই জড়িত থাকবে থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবে। দাগনভূঞা থানা এলাকায় কেউ যদি কারো কাছ থেকে চাঁদা দাবী করে তারা যেন থানা পুলিশকে অবহিত করে। পুলিশ জনগনের জানমালের রক্ষায় সর্বদা প্রস্তুত। কোন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজের স্থান দাগনভূঞাতে হবে না।

মন্তব্য করুন