
নিজস্ব প্রতিনিধি : গ্রাম বাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় খেলাগুলো একে একে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে নৌকাবাইচ অন্যতম। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই খেলাটি বিলুপ্তির হুমকিতে থাকলেও তা যেন হতে দেয় না কক্সবাজারের রম্যভূমি রামুর মানুষ। এই গ্রামীণ খেলাটি ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা রামুবাসীর। তারই আলোকে প্রতি বছর বাঁকখালী নদীতে জাঁকজমকভাবে নৌকাবাইচের আয়োজন করে থাকে রামুর ঐতিহ্য প্রিয় কিছু মানুষ। এর অংশ হিসেবে প্রতি বছরের মতো এবারও এক জমকালো নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বৃহত্তর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসের চর ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে বাঁকখালী নদীতে আয়োজন করা হয় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা দেখতে রামু ছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছে বহু ক্রীড়াপ্রিয় লোকজন। এতে লোকে লোকারণ্য পরিণত হয় বাঁকখালীর দুইপাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে পুরো এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দুপুর ২টার দিকে প্রতিযোগিতা কার্যক্রম শুরু হয়। জাতীয় সংগীত ও আতশবাজির মধ্য দিয়ে ক্রীড়া উৎসবের সূচনা হয়। প্রতিযোগী দলগুলো তাদের সুসজ্জিত নৌকা আর রং বে–রঙের বাহারি পোশাক পরে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিযোগিতা চলার সময় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে মাঝিদের গান আর পানিতে বৈঠার আওয়াজে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। নদীর দুই তীরে হাজারো মানুষের ‘মারো মারো’ ধ্বনি আর নাচে গানে উৎসব আমেজে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগী দলগুলো অত্যন্ত শক্তিমত্তা নিয়ে নামে প্রতিযোগিতায়। খেলার ঘোষক ‘জাজেস–রেডি–গো’ বলার সঙ্গে সঙ্গে নৌকাবাইচ খেলা শুরু হয়। একে একে প্রতিযোগীদের হারিয়ে অর্থাৎ অন্যান্য দলকে পেছনে ফেলে জয় ছিনিয়ে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ‘সূরন্ন বাইচ দল’ দল। রানার্স আপ হয়েছে ‘অফিসের চর কৃষক ক্লাব নৌ দল’। প্রতিযোগিতায় অফিসের চর ফুটন্ত গোলাপ নৌ দলের সুমন সেরা খেলোয়াড় (বেত ধারক) এবং অফিসের চর কৃষক দলের নৌ দলের আবদুর রহিম বাবুল সেরা খেলোয়াডের (দারি) পুরস্কার পান।
নৌকাবাইচের আয়োজক অফিসের চরবাসীর সমন্বয়কারী ও ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জালাল উদ্দিন রনি জানান, অফিসের চর গ্রামের ৮টি নৌ দল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। ৮টি দলের মধ্যে প্রথম রাউন্ড, সেমি ফাইনাল, ফাইনাল ও তৃতীয় স্থান নির্ধারনসহ মোট ১৫ ফাড়ি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলা পরিচালনায় ছিলেন রেফারি ওমর ফারুক মাসুম।
খেলা শেষে বিজয়ীদের ট্রপি বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রামু উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেরাজ আহমেদ চৌধুরী মাহিন, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহেদ, ফাহিম তাজওয়ার, জামাল উদ্দিন কোম্পানিসহ অনেকে। সফলভাবে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হওয়ায় সর্বস্থরের ক্রাড়ীমোদীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন বৃহত্তর অফিসের চর ক্রীড়া পরিষদের নেতৃবৃন্দ।আ