
সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক : আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশে আজ মুক্ত বাতাসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছে ছাত্রজনতাসহ সকল স্তরের মানুষ।
রক্তপ্লাবনের ইতিহাস দিয়ে গড়া বাঙালির আত্মপরিচয় ও আত্মত্যাগের দিন ভাষা দিবসে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নেটিজেনরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন সর্বস্তরের মানুষ। গোটা ফেসবুক যেন একুশে ফেব্রুয়ারির রঙে রঞ্জিত হয়েছে।
একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মধ্যরাতে ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছোঁয়ার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীর সারি দেখা যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ১২টা ১ মিনিটে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে।
ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার জন্য সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ অনেক বীর শহীদ নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের এনে দিয়েছে বাংলা ভাষার স্বাধীনতা। আজকের এই দিনে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেই সকল ভাষা শহীদদের, যাদের জন্য আজ আমরা গর্বের সাথে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারি। ভাষার জন্য এমন আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
আসুন, এই দিনটিকে আমাদের পুনরায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করি। মাতৃভাষা, মানবিকতা এবং জনগণের অধিকারের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাকে আমাদের কর্মের মাধ্যমে প্রকাশ করি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ লিখেছেন, সকলকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা। ইতিহাসের নিকৃষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর স্বতঃস্ফূর্তভাবে সকল স্তরের মানুষের সম্মীলনে ভাষা দিবস উৎযাপিত হচ্ছে। এমন কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশই তো আমরা চেয়েছিলাম।যেখানে ভাষা দিবসকে কোন দলের নিজস্ব সম্পত্তি বানানোর চেষ্টা করা হবে না;বরং সকল নাগরিক মনের মাধুরী মিশিয়ে ভাষা দিবস পালন করবে।ফ্যাসিবাদবিরোধী দল,মত,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আগামীর সোনার বাংলাদেশ নির্মিত হবে।
হাওলাদার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, একুশ, প্রেরণা জোগাক মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখার প্রত্যয়ে। ভরপুর থাকুক প্রতি বাঙালির মননে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং অমর একুশের গভীর শ্রদ্ধা।
মোঃ জমশের লিখেছেন, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস, যাদের আত্মত্যাগে পেয়েছি আমরা বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা, ১৯৫২ শালের সকল ভাষা বীরসৈনিকদের প্রতি রইলো আমার বিনম্র শ্রদ্ধা, ভাষা আন্দোলনের সকল শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
মোহাম্মদ জুনায়েদ খান লিখেছেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে, আমাদের ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাদের আত্মত্যাগের ফলে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষা। আসুন, আমরা আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এর সঠিক চর্চা ও প্রচার নিশ্চিত করি। মোদের গর্ব, মোদের আশা—আহা! মরি বাংলা ভাষা।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকত, শফিউর, জব্বাররা। তাঁদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বাংলা বর্ণমালা, মায়ের ভাষা।
একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির কাছে চিরপ্রেরণার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে বাঙালি জাতি যে ইতিহাস রচনা করেছিল, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্ব তাকে বরণ করেছে সুগভীর শ্রদ্ধায়।ই