
চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ৯টিতে ছড়াচ্ছে উত্তেজনা
খবর ডেস্ক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার–প্রচারণায় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের রাজপথ থেকে গ্রাম–গঞ্জ সর্বত্র। ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই প্রার্থীদের প্রচারণা শুরু হয়। প্রথম দিন থেকেই নগরে চলছে নির্বাচনী উৎসব। গ্রামও সরব হতে শুরু করেছে। তবে প্রচারণার শুরুতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। প্রচারণার দুই দিনে চট্টগ্রামের দুটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ৯টিতে আওয়ামী লীগের নৌকার বিরুদ্ধে ‘স্বতন্ত্র’ লড়াইয়ে নেমেছেন ৯ আওয়ামী লীগ নেতা। এর মধ্যে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্যও। এসব আসনে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।
স্বতন্ত্র ৯ আওয়ামী লীগ নেতা হলেন মীরসরাইয়ে নেতা গিয়াস উদ্দিন, ফটিকছড়িতে হোসাইন মো. আবু তৈয়ব, চট্টগ্রাম–৮ আসনে সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, পটিয়া আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, চন্দনাইশে আবদুল জব্বার চৌধুরী এবং সাতকানিয়ার আবদুল মোতালেব। এই তালিকায় রয়েছেন চট্টগ্রাম–১০ আসনে সাবেক মেয়র মনজুর আলম, চট্টগ্রাম–১১ আসনে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন এবং বাঁশখালী আসনে মুজিবুর রহমান। এই ৯টি আসনে প্রচার–প্রচারণায় শুরু থেকেই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। আসনগুলোতে দিন দিন সংঘর্ষ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল সাতকানিয়ায় চরতী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী পক্ষে গণসংযোগ চলাকালে তার সমর্থকদের ওপর স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের ৬ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল বিকালে বাঁশখালী পৌরসভা সদরে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমানের কর্মী–সমর্থকদের ওপর আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকরা চড়াও হলে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ উভয় পক্ষকে শান্ত করে। এছাড়া ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের দিন পটিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে বলে পটিয়ায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের ১৬ আসনে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল এবং স্বতন্ত্র মিলে এখন প্রার্থী আছেন ১২০ জন। প্রচারণার শুরুর দিন থেকেই মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা। অনেকে ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন সরকারের উন্নয়নচিত্র, অনেকে বলছেন নিজেদের পরিকল্পনার কথা।
চট্টগ্রাম–১ মীরসরাই আসনে নৌকার প্রার্থী মাহবুব উর রহমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই প্রচারণায় মাঠে সরব রয়েছেন। সাথে রয়েছেন কর্মী–সমর্থকরাও। চট্টগ্রাম–২ ফটিকছড়ি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনির পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মো. আবু তৈয়ব এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান সমানতালে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম–৩ সন্দ্বীপ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বাচিপ নেতা মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী প্রচারণায় সরব রয়েছেন। চট্টগ্রাম–৪ সীতাকুণ্ড আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম আল মামুনের শক্ত প্রতিপক্ষ নেই। তিনিও প্রচারণায় সরব। চট্টগ্রাম–৫ হাটহাজারী আসনে জাতীয় পার্টিরা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহজাহান চৌধুরী প্রচারণার মাঠে রয়েছেন।
চট্টগ্রাম–৬ রাউজান আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বিপরীতে শক্ত প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। তিনি উপজেলা জুড়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম–৭ রাঙ্গুনিয়া আসনে নৌকার প্রার্থী তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এই আসনেও তার বিপরীতে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তিনি ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম–৮ চান্দগাঁও–বোয়ালখালী আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন। এই আসনে জাতীয় পার্টির সোলাইমান আলম শেঠও প্রচারণার মাঠে রয়েছেন। সরব আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কিষাণ চৌধুরীও।
চট্টগ্রাম–৯ কোতোয়ালী আসনে শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায় অনেকটা নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালাচ্ছেন বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। চট্টগ্রাম–১০ ডবলমুরিং আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র মনজুর আলম প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই প্রচারণা শুরু করেছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন বাচ্চু, অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদও মাঠে সরব রয়েছেন।
চট্টগ্রাম–১১ বন্দর–পতেঙ্গা আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন প্রচারণায় রয়েছেন। চট্টগ্রাম–১২ পটিয়া আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। উভয়েই সমানতালে লড়ছেন নির্বাচনী মাঠে।
চট্টগ্রাম–১৩ আনোয়ারা আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের শক্ত প্রতিপক্ষ নেই। তিনি এলাকায় প্রচারণায় সরব রয়েছেন। চট্টগ্রাম–১৪ চন্দনাইশ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে সমানতালে মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল জব্বার চৌধুরী। চট্টগ্রাম–১৫ সাতকানিয়া আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন আবু রেজা নদভীর সঙ্গে সমানতালে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেব। চট্টগ্রাম–১৬ বাঁশখালী আসনে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সাথে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান ও আব্দুল্লাহ কবির লিটনের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। তিনজনই নির্বাচনী মাঠে ব্যস্ত। উত্তেজনাও ছড়াচ্ছে এই আসনে।