নাটকীয়তার পর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিলেন ভিপি নূরকে।
1 min read
নাটকীয়তার পর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিলেন ভিপি নূরকে। সাবেক ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরকে পুলিশের কাজে বাধাদান ও ধর্ষণ মামলায় আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে ও তার সঙ্গে আটকদেরও মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
গতকাল রাতে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার। আটক ও মুক্তি নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর রাত পৌনে ১টার দিকে ডিবি কার্যালয় থেকে বের হন ভিপি নুর।
রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পেছনের একটি গেট দিয়ে পুলিশ তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। তার আগে মৎস্য ভবন এলাকা থেকে আটকের পর ডিবি কার্যালয়ে নিলে অসুস্থ হয়ে পড়েন নূর। এ কারণে তাকে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে।
রাত পৌনে ১১টায় ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম জানান, ডিবি অফিসে ভিপি নূরের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তার অ্যাজমা আছে এ কারণে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যেকোনো সময় তাকে ছেড়ে দেয়া হবে।
এজাহার হওয়ার পর এভাবে আসামি ছাড়া যায় কিনা- জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে কিনা, সেটি আগে তদন্ত হবে। আর ভিপি নূরের বিরুদ্ধে তো কোনো ধর্ষণের অভিযোগ নেই। তার কাছে মেয়েটি বিচার নিয়ে গিয়েছিল, ঘটনা তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নূর ছাড়া পেয়ে রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে বের হলে সহযোগীরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন। এ সময় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নূর বলেন, মৎস্য ভবনের সামনে থেকে আমাদেরকে আটকের পর টর্চার করা হয় কিন্তু ডিবি কার্যালয়ে কোনো টর্চার করা হয়নি।
আমাদের সঙ্গে এমনটা কেন হচ্ছে বুঝতে পারছি না। ডিবি আমাদের থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (আজ) বেলা ১১টায় দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।
সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এক বিক্ষোভ মিছিল থেকে নূর ও তার সাত সহযোগীকে আটক করে পুলিশ। ধর্ষণের
অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী মামলা করার পর তা ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে এই বিক্ষোভ করছিল নূরের সংগঠন
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
নুরুল হক নুর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে বের হওয়া মিছিলটি মৎস্য ভবন এলাকায় পৌঁছলে পুলিশের সঙ্গে গোলযোগ বাধে।
নূরসহ সাতজনকে সেখানে আটক করে পুলিশ। নেয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে। পরে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় হাসপাতালে।
সেখানে পুলিশের হামলায় আহত পরিষদের নেতা-কর্মীরা চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্যকেও চিকিৎসা
নিতে দেখা যায়।
নূরকে আটকের পর রাত পৌনে ৯টার দিকে ডিএমপির উপকমিশনার ওয়ালিদ হোসেন বলেন, মৎস্য ভবন মোড় থেকে নূর ও
তার সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়। তারা সেখানে বিক্ষোভ করছিল এবং একপর্যায়ে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়ার জন্যই তাদের আটক করা হয়েছে।
তবে নূরের বিরুদ্ধে যেহেতু ধর্ষণ মামলা রয়েছে, তাই সেই মামলায়ও তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে। গ্রেফতারের পর রমনা
জোনের সহকারী কমিশনার এসএম শামীম জানান, ধর্ষণ মামলায় নূরকে আটকের সময় তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
উল্লেখ্য, নূরসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্রী মামলা করেন। ৩ জানুয়ারি ধর্ষণ এবং এতে সহযোগিতার অভিযোগ এনে লালবাগ থানায় এ মামলা করা হয়।
লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আশরাফ উদ্দিন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ওসি বলেন,
অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মামলায় ছয়জনকে আসামি করা হয়। বিয়ের প্রলোভন
দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে একই বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান আল মামুন ধর্ষণ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
নাটকীয়তার পর
অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ওসি জানান, প্রধান আসামি হাসান আল মামুন একই বিভাগের স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ ছাত্র।
তিনি বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক। তার সঙ্গে পাঁচজনকে সহযোগী হিসেবে আসামি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে
আছেন নুরুল হক নূর, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। মামলায় ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে
লালবাগের নবাবগঞ্জ এলাকা।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ, সাইফুল ইসলাম, নাজমুল হুদা
ও আবদুল্লাহ হিল বাকি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসান আল মামুন বলেন, মামলার বিষয়ে কিছুই জানি না। এমন
কিছুই হয়নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে কথা বলব।