
অনলাইন ডেস্ক : পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মালালা ইউসুফজাই আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের নারী ও মেয়েদের প্রতি দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানান। তিনি মুসলিম নেতাদের আহ্বান জানান, তালেবানের এমন আচরণকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং মেয়েদের শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রের সুযোগ নিশ্চিত করতে।
রবিবার(১২জানুয়ারি)ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত মেয়েদের শিক্ষার ওপর মুসলিম দেশগুলোর একটি শীর্ষ সম্মেলনে মালালা বলেন, “তালেবান নারীদের মানুষ মনে করে না। তাদের নীতিগুলোতে কিছুই ইসলামী নয়।” ১৫ বছর বয়সে তালেবান গুলিতে আহত হওয়ার পর পাকিস্তান ছেড়ে যাওয়া মালালা, মেয়েদের শিক্ষার পক্ষে কথা বলার জন্যই সেদিন টার্গেট হয়েছিলেন।
মালালা জানান, তালেবান আফগানিস্তানে একটি “লিঙ্গ-বৈষম্যের ব্যবস্থা” তৈরি করেছে, যেখানে নারীদের শিক্ষার অধিকার সম্পূর্ণরূপে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে দেশটির কোনো মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির পর শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না।
মালালা আরও বলেন, তালেবান “ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক যুক্তি দিয়ে তাদের অপরাধ ঢাকতে চায়, কিন্তু বাস্তবে তারা ইসলামের মূলনীতির বিপরীত কাজ করছে।” তিনি যোগ করেন, নারী ও মেয়েদের তাদের তথাকথিত আইন ভাঙার জন্য শারীরিক নির্যাতন, আটক এবং নানাভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
তালেবান সরকারের নেতারা সম্মেলনে আমন্ত্রিত হলেও তারা উপস্থিত হননি। তবে তারা ইতিপূর্বে জানিয়েছে, নারীদের অধিকার তারা আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামিক আইনের ভিত্তিতে সম্মান করে।
বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে আফগানিস্তানে নারীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে প্রায় দেড় মিলিয়ন মেয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে স্কুল থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এমনকি নার্সিং ও মিডওয়াইফ প্রশিক্ষণেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, যা তাদের উচ্চশিক্ষার শেষ পথটিও বন্ধ করে দিয়েছে।
মালালা আরও বলেন, শুধু আফগানিস্তান নয়, ইয়েমেন, সুদান এবং গাজাসহ একাধিক দেশের সংকটে মেয়েদের শিক্ষা চরমভাবে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তিনি গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণে শিক্ষাব্যবস্থার সম্পূর্ণ ধ্বংসের কথাও উল্লেখ করেন।
মালালার আহ্বান, বিশ্ব সম্প্রদায় যেন মেয়েদের শিক্ষার অধিকারের সবচেয়ে ভয়াবহ লঙ্ঘনগুলো প্রকাশ্যে তুলে ধরে। তিনি মুসলিম নেতাদের কাছে আহ্বান জানান, নারীদের শিক্ষার অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নিতে। মেয়েদের শিক্ষার প্রতি মালালার এই অনড় অবস্থান ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তথ্যসূত্র : বিবিসি।ই