জনরোষে সেই ওসি নেজাম উদ্দিন : প্রকাশ্যে দেখামাত্রই চড়াও বিএনপিকর্মীদের পিটুনি থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিনিধি : আওয়ামী দুঃশাসনের সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নিষ্ঠুর জুলুম নির্যাতন চালিয়ে চরম বিতর্কিত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের রোষের মুখে পড়েন। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তাকে ধরে পিটুনি দেয়। গতকাল সোমবার বেলা আড়াইটার সময় নগরীর পাঁচলাইশের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে পাঁচলাইশ থানা-পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। তবে এরপর বিএনপির নেতা-কর্মীরা থানা ঘেরাও করে হট্টগোল করেন ও তাকে গ্রেফতার করার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেজাম উদ্দিন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালী, বাকলিয়া, সদরঘাট থানায় অফিসার ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি পটিয়া থানার ওসি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি কুমিল্লায় সিআইডিতে পরিদর্শক পদে দায়িত্বে আছেন বলে জানা গেছে। সিএমপির বিভিন্ন থানায় ওসির দায়িত্ব পালনকালে আন্দোলনরত বিএনপির নেতাকর্মীদের দেখামাত্র তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তেন নেজাম উদ্দিন। নগর বিএনপির তৎকালীন সভাপতি বর্তমান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনসহ অনেক বিএনপি নেতাকে প্রকাশ্যে রাস্তায় নাজেহাল করেন ওই দলবাজ পুলিশ কর্মকর্তা। বিএনপির কর্মসূচী পন্ড করতে শাহাদাত হোসেনকে লাঞ্ছিত করার একটি ভিডিও তখন ভাইরাল হয়। বিরোধী দলের যে কোন কর্মসূচিকে ঘিরে ব্যাপক ধরপাকড়, গণগ্রেফতার করা করা ছিলো তার প্রধান কাজ। তার ভ‚মিকা আওয়ামী ক্যাডারদের মতো ছিল। বিগত সাড়ে ১৫ বছর যে কয়জন ওসি ফ্যাসিবাদী সরকারের লাঠিয়ালের ভ‚মিকায় ছিলেন নেজাম তাদের একজন। বলা হয় ছাত্রজীবনে শিবিরের সাথে থাকা নেজাম আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন হতে জামায়াত শিবিরের উপর ক্র্যাকডাউন চালিয়েছেন। মূলত এর মাধ্যমে তিনি ওসির পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। ওসি থাকাকালে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্য এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। হাসিনার পতনের পর তাকে চট্টগ্রাম নগরীতে তেমন একটা দেখা যায়নি। গতকাল তাকে দেখামাত্রই লোকজন তার ওপর হামলা করে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বেলা আড়াইটায় ব্যক্তিগত গাড়িতে পাসপোর্ট অফিসের সামনে আসেন পুলিশ কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিন। এ সময় আশপাশে থাকা বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নেজাম উদ্দিনকে দেখতে পেয়ে ছুটে আসেন। তখন তার সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়। মারধরের কারণে তার পরণে থাকা শার্ট ছিঁড়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন একটি স্কুলের সামনে নেজাম উদ্দিনকে দেখার পর স্থানীয় বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা তার ওপর চড়াও হন। এরপর তাকে মারধর করা হয়। চকবাজার থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব শহীদুল ইসলাম বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিন আওয়ামী লীগের আমলে নগরীর কোতোয়ালি ও বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। ওই সময় তিনি বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নানাভাবে নির্যাতন, নিপীড়ন ও হয়রানি করেছেন। বিনা কারণে গ্রেফতার করেছেন। চাঁদাবাজি করেছেন। অনুমতি থাকা সত্তে¡ও বিএনপিকে কর্মসূচি পালন করতে দেননি নেজাম উদ্দিন। আর তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে হবে।

নেজাম উদ্দিনের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হাতাহাতির বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলায়মান। তিনি বলেন, নেজাম উদ্দিনকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে আছেন।

এদিকে পুলিশ কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিনের গ্রেফতারের দাবিতে পাঁচলাইশ থানা ঘেরাও করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তারা সেখানে বিচারের দাবিতে মিছিল করছেন।
বর্তমানে কুমিল্লা জেলা সিআইডিতে পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত নেজাম উদ্দিন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী ছাড়াও সদরঘাট, বাকলিয়া থানায় ওসির দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর তিনি পটিয়া থানার ওসির হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর আপত্তির কারণে তাকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মুহাম্মদ ফয়সাল আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক ওসি নেজামকে পাঁচলাইশ এলাকায় কিছু লোক হেনস্তা করেছে। তাকে আমরা উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়ে এসেছি। শুনেছি তিনি পাঁচলাইশে তার ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলেন।

পুলিশ কর্মকর্তা নেজামকে হেনস্তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তাকে স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে উল্লেখ করে ঘিরে ধরা নেতাকর্মীরা বলছিলেন, গত ১৫ বছর তাদের এবং তাদের নেতা ‘শাহাদাত ভাইকে’ কষ্ট দিয়েছেন তিনি। তার কারণ মাসের পর মাস জেল খাটতে হয়। অনেকেই ছিলেন বাড়ি ঘর ছাড়া।

এসময় টানাহেঁচড়ায় নেজামের শার্ট ছিঁড়ে যায়। এছাড়া চকবাজার থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শহীদুল আলমকে দলীয় নেতাকর্মীদের পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের সামনে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানাতেও দেখা গেছে ভিডিওতে।ই

মন্তব্য করুন