
নিজস্ব প্রতিনিধি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে সারা দেশে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় জড়িত বিজিবি-আনসার কর্মকর্তা-সদস্যদের শনাক্ত করতে তদন্ত চলছে। বর্তমান সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন টিভির ভিডিও ফুটেজ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিও ও বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন।
তদন্তের সাথে জড়িত একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে মোতায়েনকৃত বিজিবি ও আনসার কর্মকর্তা-সদস্যরা কোথায় কোথায় গুলি করেছেন এবং হতাহতের ঘটনা কী ঘটেছিল তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে গুলির ঘটনায় বিজিবি ও আনসার সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
মাঠ পর্যায়ের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বিজিবি ও আনসার সদস্যদের অনেক স্পটেই গুলি করেছে এমন তথ্য উঠে এসেছে। অনেক স্পটে দেখা গেছে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিজেরাও ছাত্র-জনতার উপর গুলি করছেন এবং বিজিবি-আনসার সদস্যদের গুলি করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা দেশে ‹কমপ্লিট শাটডাউন› কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে শত শত প্লাটুন বিজিবি-আনসার মোতায়েন করা হয়। যারা বেপরোয়ার আচরন করেছেন তাদেরও শনাক্ত করার কাজ চলছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ আন্দোলন চলঅর সময় ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন আসিফ মাহমুদ। তিনি লেখেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সোয়াটের ন্যাক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও এক দফা দাবিতে আগামীকাল ১৮ জুলাই সারা দেশে কম্প্লিট শাটডাউনগ্ধ ঘোষণা করছি।
মোস্তাক আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ভোটাধিকার না থাকা, কথা বললেই আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, শেখ হাসিনার ক্ষমতার দম্ভ, আওয়ামী লীগ নেতাদের চাটুকারিতা ও বিরোধীদের ওপর সব দোষ চাপানো, জনগণকে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ না দেওয়া, দুর্নীতি, সুশাসনের অভাবসহ নানা কারণে সাধারণ মানুষ এমনিতে ক্ষুব্ধ ছিলেন। আবু সাঈদকে হত্যার পর ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। বিএনপিসহ অন্য দলের আন্দোলনে সাড়া না দিলেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এবার দলে দলে জনতা নেমে আসে। ১৮ থেকে ২১ জুলাইয়ের পুলিশ, বিজিবি ও আনসারকে দিয়ে যেভাবে গণহত্যা করা হয় মানুষ আর শেখ হাসিনাকে কোনোভাবেই গণভবনে মানতে পারছিলেন না।
কোটা আন্দোলনের সময় ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকালে গাজীপুরের সফিপুর আনসার অ্যাকাডেমির সামনে গুলিতে গুরুতর আহত হন কলেজশিক্ষার্থী রায়হান মিয়া (২২)। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চতুর্থ তলায় বার্ন ইউনিটের ৪১৯ নম্বর (পুরুষ) ওয়ার্ডে ৭ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এক হাত থেতলানো ছাড়াও পুরো শরীরে অসংখ্য ছররা গুলির ক্ষত নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন রায়হান। গত ৬ আগস্ট তিনি ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। রায়হান গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশোনা করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে। তিনি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাইহাট কলেজের ১৮ ব্যাচের এবং ক্রোড়গাছা বি এল উচ্চবিদ্যালয়ের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী।ই